বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরা কতটুকু জানি বা বুঝি এ নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু সত্যি হলো মহাসাগরকে সঠিক অর্থে জানা বা বোঝা কঠিন। বঙ্গবন্ধু তেমনি এক মহাসাগর। তবে মানুষের অসাধ্য কিছু নেই, চেষ্টা করলে তাঁকে অনুভব করা যায়। আমি তাঁর ৩০০ লিখিত ভাষণ পাঠ করে এ সম্পর্কে লেখার চেষ্টা করেছি মাত্র।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও পত্রপত্রিকার বিবৃতিগুলো পাঠ করে যে কেউ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারবেন। মূলত তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ও ভাবনা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা আমাদের জরুরি। কারণ তাঁর ভাষণের মধ্যেই আমরা দেখতে পাই কেন মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে, কেন বাংলার মানুষ দুর্নীতি মুক্ত হবে, সরল ও স্বাভাবিক জীবন কেন প্রয়োজন এবং সর্বোপরি যে দায়িত্ব রাষ্ট্রপ্রধান তার মন্ত্রিপরিষদ ও কর্মকর্তা- কর্মচারীকে দিয়েছেন সে দায়িত্ব কেন তারা অবহেলা করে বা পালন করে না- এ সম্পর্কে বিশাদ বিবরণ ভাষণর মধ্যে দেখতে পাই। আমার লেখায় ত্ার ভাষণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ তুলে ধরলাম মাত্র।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি ভাষণই ছিল সমাজ, রাষ্ট্র ও শোষণ নিয়ে। যেমন: ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে এক সংশোধনী প্রস্তাবের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্পিকারকে বলেন, পূর্ববঙ্গের জনগণকে কিছু সময়ের জন্য ধোঁকা দিতে পারেন, কিন্তু দীর্ঘ দিনের জন্য নয়। গভর্নর জেনারেল ও গভর্নরদের ক্ষমতা বৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি স্পিকারকে বলেছিলেন, নিরঙ্কুশ ক্ষমতা কেবল দুর্নীতিরই জন্ম দেয়। সেই সময়ে পাকিস্তান গণপরিষদে দাঁড়িয়ে এ ধরনের বক্তব্য তার বিরাট ব্যক্তিত্ব ও সাহসের পরিচয় বহন করে।
গভর্নরদের বেতন ৩০০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা এবং মন্ত্রীদের বেতন ১০০০টাকা থেকে ৩০০০টাকা এবং রাষ্ট্রদূতদের বেতন ৯০০০ টাকা করার বিরুদ্ধে যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেন। শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন বলেছিলেন, আমার দেশের মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। তারা অন্ন পায় না, বস্ত্র পায় না এবং কখনো কখনো সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়েদের অন্ন-বস্ত্র সংগ্রহের জন্য ইজ্জত খোয়াতে হয়। মহোদয়, আমরা বিশে^র কাছে ঘোষণা করছি, আমরা ইসলামী দেশ এবং আমরা ইসলামের রীতিনীতির অনুসারী। তাহলে এটাকে কি ইসলামী আদর্শ বলবো। উদাহরণ টেনে বলেন, ৬০ কোটি মানুষের দেশের চেয়ারম্যান মাও সেতুং পর্যন্ত মাসে মাত্র ৫০০টাকা বেতন পান। ওয়াশিংটনে আমাদের রাষ্ট্র দূতের মাসিক বেতন ৯০০০টাকা অথচ ওই ধনী দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আইসেন হাওযার এ থেকে কম বেতন পান। বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানি শাসক শ্রেণির ভোগবাদী চরিত্রকে তুলে ধরেছেন।
তারপর তিনি পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। “আজ হয়তো আমাদের সাথে ভারতের সুসম্পর্ক নেই, কিন্তু‘ আগামীকাল তার সাঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হতে পারে। গ্রেট ব্রিটেনের সাথে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তাহলে আমরা কেন বলি যে, শুধুমাত্র মুসলিম দেশগুলোর সাঙ্গে আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলবো। আমাদের বরং বলা উচিত যে, বিশ্বের সব দেশের সঙ্গেই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে। এখানে শেখ মুজিবুর রহমানের উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও ভূ-রাজনীতি সম্পর্কে সামক্য জ্ঞানের পরিচয় পাই। পাকিস্তানের ভূ-স্বামী রাজনীতিবিদরা সাধারণ জনতার কথা কখনো চিন্তা করেননি। ইসলামকে লেবাস করে টিকে থাকতে চেয়েছে।
শেখ মুজিবুর রহমান উনসত্তর-সত্তর সালে এসে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য থ্রেট হয়ে ওঠেননি, ১৯৫৬ সাল থেকেই পার্লামেন্টে প্রতিবাদী জোরালো কন্ঠস্বর পাকিস্তানি ভূ-স্বামী শাসকদের যন্ত্রণার কারণ হয়ে ওঠেন।
সত্তরের নির্বাচনোত্তর বেশ কিছু ভাষণে আমরা দেখতে পাই, বঙ্গবন্ধু এদেশের জনগণকে সম্ভাব্য এক যুদ্ধের জন্য প্র¯‘ত থাকতে বলছেন। ৩০ অক্টোবর ১৯৭০, জয়দেবপুরের জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ৬-দফা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চায়। বাংলার মানুষের কল্যাণ এবং মুক্তির জন্যে এটা আমাদের শেষ সংগ্রাম। যদি নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়- তবে গণ-আন্দোলনের পরিকল্পনা আছে। মূলত সত্তরের নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই জনগণকে চূড়ান্ত মুক্তি সংগ্রামের ইংগিত দিতে থাকেন তিনি। সাধারণ নির্বাচন প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধুর রেডিও টেলিভিশনের ভাষণটি (২৮ অক্টোবর, ১৯৭০) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, সমাজে ক্যানসারের মতো যে দুর্নীতি বিদ্যমান তাকে নির্মূল করতে আমরা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। ৯০ লাখ শ্রমিক বেকার। ২৩ বছরে সরকারি চাকরিতে বাঙালির সংখ্যা ১৫ শতাংশ। দেশরক্ষা বাহিনীতে বাঙালির সংখ্যা দশ শতাংশের কম। অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের মূল্য ৫ থেকে ১০০ ভাগ বেশি। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ সামান্যতম চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। ৬ দফার আলোকে ফেডারেলের মাধ্যমে দেশ পরিচারিত হবে। আমি ক্ষমতার প্রত্যাশী নই, ক্ষমতার চেয়ে জনতার দাবি আদায়ের সংগ্রাম অনেক বড়।
নির্বাচনে জয় লাভের পর ৯ ডিসেম্বর ১৯৭০ বঙ্গবন্ধু ভাষণে বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লাখ লোক মারা গেছে এবং বর্তমানে এ অঞ্চলগুলোতে ৩০ লাখ লোক শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য মরণপণ সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের জনসাধারনের এই অবস্থা আমাদের অতীতের শোষণ ও অবহেলার নিষ্ঠুরতাই স্মরণ করিয়ে দি”েছ। আর সেই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে আমাদের পাহাড় প্রমাণ কর্তব্যকে। ১১ ডিসেম্বর সন্দীপ হাই স্কুল মাঠে ভাষণে বলেন, রিলিফ কর্মকাণ্ডে সকল সংশ্লিষ্টকে স্মরণ রাখা উচিত যে, আইয়ুব খানের দিন শেষ হয়ে গেছে আমরা প্রতিটি পয়সার হিসাব নেব। ১৪ ডিসেম্বর তিনি ইয়াহিয়া খানকে তারবার্তা প্রেরণ করেন, একমাত্র ৬-দফা কর্মসূচির ভিত্তিতেই প্রণীত শাসনতন্ত্রই অঞ্চলে অঞ্চলে ও মানুষে মানুষে সুবিচারের নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে। বঙ্গবন্ধুর নির্বাচন উত্তর ও নির্বাচন- পরবর্তী ভাষণগুলো পাঠ করলে সেই সময়কার উত্তপ্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ব্যাপারে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া বা আপোস রফায় রাজি নন এই বিষয়টি পাকিস্তান সামরিক সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে পরিষ্কার করেন। যেমন: ২৮ ফেব্রয়ারি ১৯৭১ তেজগাঁও অঞ্চলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, সেখানে তিনি বলেন, ৬ দফার ভিত্তিতেই শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা হবে। ৬ দফা কর্মসূচি শুধু বাংলার মানুষের জন্য নয়। আমরা সিন্ধু, পাঞ্জাব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের অন্য প্রদেশগুলোকেও বাংলাদেশের সমপরিমাণ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন দেয়ার পক্ষপাতী। তাই পাকিস্তানও থাকবে, বাংলাদেশ,পাঞ্জাব,সিন্ধু,উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ আর বেলুচিস্তান থাকবে। যা থাকবে না তা হচ্ছে মানুষে মানুষে শোষণ। পাকিস্তান আন্দোলন কেন করেছিলাম- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি সেদিন বলেছিলেন, উন্নত জীবনের আশাতেই জনগণ সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করেছিল। কিন্তু সব জায়গায় তারা এমনভাবে শোষিত হয়েছে যে, তাদের মেরুদ-ই ভেঙে গেছে। বাংলার মানুষের উদারতার সুযোগ নিয়ে সারা বাংলাদেশকে লুট করা হয়েছে। যাদের ৫ লাখ টাকা ছিল তারা এখন ৫ কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এই টাকা আসমান থেকে আসেনি। পাকিস্তানের নামে দরিদ্র জনসাধারণকে সর্বস্বান্ত করে এই পুঁজি সৃষ্টি হয়েছে। ২২ পরিবার টেলিফোনে কোটি কোটি টাকার এলসি খুলে ফেলে আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা শতকরা ৪৫ ভাগ টাকা জমা দিয়েও এলসি খোলার জন্য হয়রান হয়।
মূলত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে রাষ্ট্রের ক্ষমতা হস্তান্তর এবং সকল দলের সমন্বয়ে একটি সংবিধান রচনা করা ছিলো মূল কাজ। এই কাজ সমাধানের জন্য সময় ছিলো তিন মাস। কিš‘ নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায় আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং প্রাদেশিক পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ফলে পাকিস্তানি সামরিক ও বেসামরিক শাসকগোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা আর থাকছে না, এই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় বাঙালির আধিপত্য ঘটবে - এই সহজ সত্যটি মেনে নিতে পারেনি।
বঙ্গবন্ধু বিষয়টি সম্পর্কে সম্পন্ন অবগত ছিলেন। দেশে সংঘাত ঘটতে পারে - এই বদ্ধমূল ধারণা নির্বাচন প্রক্কাল থেকেই জনগণের মনে গ্রথিত করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এবং ২৬ মার্চেও প্রথম প্রহরে ইপিআর এর ওয়ারলেসের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণগুলো পাঠ করলে সেই সময়কার বাস্তবতা এবং রাজনীতি সম্পর্কে পাঠক ব্যপক ধারণা লাভ করবে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি রেসকোর্স ময়দানে অলিখিত ভাষণে দেশ পুনর্গঠনে ১৮টি দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি ভাষণের এক পর্যায়ে বলেছিলেন, বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাসবাস করবে, খেয়ে পরে সুখে থাকবে, বেকার যুবক যদি চাকরি না পায়, মানুষ যদি দু’বেলা খেতে না পায় তবে এ স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যাবে।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের জন্য তিনি মরিয়া হয়ে ওঠেন। ভূমি ব্যবস্থার সংস্কার, খাজনা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের জাতীয়করণ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেন ২৬ মার্চ ১৯৭২। বনেদী আমলাতান্ত্রিক মনোভাবকে তিনি প্রশ্রয় দিতে চাননি। তিনি ঘোষণা করেন, শাসনতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হবে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মানুষে মানুষে,ব্যক্তিত্বে ব্যক্তিত্বে বৈষম্য থাকবে না। সম্পদের বণ্টন ব্যবস্থায় সমতা আনতে হবে এবং উ”চতর আয় ও নিম্নতর উপার্জনের ক্ষেত্রে যে আকাশচুম্বী বৈষম্য এতদিন ধরে বিরাজ করছিল সেটা দূর করার ব্যবস্থাদি উদ্ভাবনের জন্য আমি একটি বিশেষ কমিটি গঠন করার কথা বিবেচনা করছি। ১৯৭২ সালে দেশকে দুর্ভিক্ষের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের খাদ্য সাহায্য এবং প্রশাসন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তার কথা উদার চিত্তে স্বীকার করেন। এ সময় তাঁর প্রতিটি ভাষণে সাধারণ জনগণকে সহায়তার জন্য ব্যবসায়ী, সরকারি চাকরিজীবী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, প্রশাসনকে উদাত্ত আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, “মিথ্যা কথা বলে মানুষকে ধোঁকা দিতে পারব না। যা অব¯’া খানসেনারা বাংলায় করে গেছে, সে জায়গায় ফিরে আসতে আমার কমছে কম দশ বছর সময় লাগতো। কিš‘ আমি আশা করি তিন বছরে সে জায়গায় ফিরে আসতে পারব। ভিক্ষুকের জাত হয়ে আমি বাঁচতে চাই না। আমি চাই আমার মানুষ, ভবিষ্যৎ বংশধর সুখী হউক।” দেশ স্বাধীনের পর প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বত্রই অরাজকতা দেখা দেয়। ৫ এপ্রিল ১৯৭২ বাংলাদেশ বেতারে দেশ আমার মাটি আমার অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমাদের স্বয়ংসম্পন্ন হতে হবে। সে জন্য কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন রয়েছে। কাজ করব না, ফাঁকি দিব, অফিসে যাব না, ফাঁকি দিব। ফ্রি স্টাইল, ফ্রি স্টাইল মানে গণতন্ত্র নয়। ১৬ জুলাই ১৯৭২, সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণে তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্র চাই, কিন্তু উচ্ছৃঙ্খলতা চাই না। তথচ কোন কাগজে লেখা হয়েছে, মুসলমানকে রক্ষা করার জন্য সংঘবদ্ধ হও। যে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আমার দেশের মানুষ রক্ত দিয়েছে, এখানে বসে কেউ যদি তার বীজ বপন করতে চায় - তাহলে তা কি আপনারা সহ্য করবেন? তৎকালীন এই ভাষণগুলো পাঠ বর্তমানে দেশবাসীর জন্য প্রয়োজন। কারণ অতীত না জানলে নিজেকে সমৃদ্ধ করা যায় না। এই ভাষণগুলো বলে দেয়, বঙ্গবন্ধু কী আপ্রাণ প্রচেষ্টা, দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের। কিন্তু সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণি থেকে সংবাদপত্র বঙ্গবন্ধুর সরকারের সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেনি।
ভাষণগুলো থেকে বোঝা যায়, তিনি বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক, শ্রমিক আওয়ামী লীগ কমিটিতে বঙ্গবন্ধু উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, “আমরা যখন কোথাও যাবো, দেখবো যে, রাস্তায় একটা ইট পড়ে আছে, ঐটা আমার ডিপার্টমেন্টের না, এ কথা বলে পাস কাটিয়ে চলে গেলাম। প্রত্যেকটি লোক, প্রত্রেকটি কাজই আমার। আমি সার দিতে পারিনি। যা সার দিয়েছি, তার থ্রাটি পাসেন্ট চুরি হয়ে গেছে। স্বীকার করেন? আমি স্বীকার করি। আমি মিথ্যা কথা বলতে পারবো না। মিথ্যা বলে একদিনও হারাম এদেশের প্রেসিডেন্ট থাকবো না।”
“আমাদের সোস্যালি বয়কট করতে হবে যে লোকটা ঘুষ খায় তাকে। সোস্যালি বয়কট করতে হবে যে লোকটার মাইনে হাজার টাকা, কিন্তু ব্যয় করে পাঁচ হাজার টাকা, তাকে। যে লোকটার বেতন তিন হাজার টাকা, কেমন করে সে ব্যয় করে পনের হাজার টাকা। এই জিনিসটা সমাজের কাছে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে।”
“আমার জীবনে আমি দেখেছি, লাখ লাখ লোক দু’পাশে দাঁড়িয়ে কি করুণ অবস্থার মধ্যে, আমি তো কল্পনাও করতে পারি না - আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করি এদের মুখে হাঁসি ফোঁটাতে হবে, এদের খাবার দিতে হবে।”
দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন ৪টি বিষয়কে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য করে :
১. দুনীতিবাজ খতম করা
২. কারখানায় খেত-খামারে প্রোডাকশন বৃদ্ধি করা
৩. পপুলেশন প্ল্যানিং বাস্তবায়ন
৪. জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা
দেশের অবস্থা কতিপয় দুর্নীতি গ্রন্থ অসাধু লোকের কারণে দিন দিন খারাপ হচ্ছে, রাজনীতির নামে মানুষ হত্যা, লুটতরাজ এবং বিদেশি রাষ্ট্রের প্রলোভনে দেশকে উচ্ছিন্নে নিয়ে যাওয়া - বঙ্গবন্ধু এটা মেনে নিতে পারেননি। তিনি সমাজ থেকে অনাচরের উচ্ছেদ করে জনগণের রাষ্ট্র কায়েম করতে চেয়েছিলেন। ঘুনে ধরা ব্রিটিশ প্রসাশনের উপর তার কোন আস্থা ছিল না।
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে জানতে ও বুঝতে হলে তার ভাষণগুলো অবশ্যই পাঠ করা প্রয়োজন। তার কতিপয় ভাষণ ক্লাস সেভেন থেকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, পাকিস্তানিদের শাসন - শোষণ এবং স্বাধীনতা উত্তর দেশের জনগণ, আমলা, প্রশাসন, সাংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা এবং সর্বোপরি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে ছাত্ররা অবগত হতে পারবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর কেন হাজার বছর পরেও তাঁর ভাষণগুলো আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক হবে বলে আমি আশাবাদী।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh