ছবিঃ সংগৃহীত।
দিবসের পটভূমি
প্রতি
বছর ৮ মে পালিত
হয় বিশ্ব গাধা দিবস (World Donkey Day)। দিবসটির সূচনা
২০১৮ সালে মিশরীয় প্রাণীবিজ্ঞানী ড. আর্ক রাজিক
এর হাত ধরে হয়। তার মতে, গাধা পৃথিবীর অন্যতম নিষ্পাপ এবং পরিশ্রমী প্রাণী, যাদের অবদান স্বীকৃতি পায় না। এই দিবসের উদ্দেশ্য
হলো— গাধার প্রতি মানুষের অবহেলা ও কটূরুচির অবসান
ঘটানো এবং তাদের কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিত
করার জন্য সমাজে সচেতনতা গড়ে তোলা।
গাধার
বাস্তব ভূমিকা ও আর্থ-সামাজিক
গুরুত্ব
গাধা
মানবসভ্যতার অন্যতম প্রাচীন সঙ্গী। তারা মূলত বোঝা বহনের জন্য পরিচিত, তবে তারা শুধু মালবাহী প্রাণী নয়— অনেক দেশের কৃষি ও পরিবহণ অর্থনীতিতে
গাধার রয়েছে সরাসরি অবদান। তারা বিশেষত পাহাড়ি অঞ্চল, খরা-কবলিত এলাকা ও রুক্ষ ভূপ্রবেশে
অত্যন্ত কার্যকর।
গ্রামীণ
জীবনে গাধার ভূমিকা:
কৃষিপণ্য
পরিবহন
পানি
সংগ্রহ
ইট,
কাঠ ও নির্মাণ সামগ্রী
বহন
পশু
চিকিৎসা ও খাদ্যদ্রব্য সরবরাহে
সহায়ক
বিশ্বের
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবিকা ও জীবনযাত্রার মান
উন্নয়নে গাধা একটি নীরব ভূমিকা পালন করছে।
গাধার
প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা: "মূর্খ নয়, বিচক্ষণ সহচর"
গাধাকে
নিয়ে আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে একধরনের ভুল ধারণা— যে তারা বোকা,
জেদি এবং নিষ্ক্রিয়। বাস্তবে এই ধারণাগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে
ভুল প্রমাণিত।
বৈজ্ঞানিক
গবেষণায় যা উঠে এসেছে:
গাধার
স্মৃতিশক্তি খুবই উন্নত। একবার কোনো পথ মনে রাখলে
তা বহু বছর পরেও চিনে নিতে পারে।
তারা
খুবই নিরাপত্তাবান্ধব প্রাণী। অজানা ও বিপজ্জনক পথ
বা পরিস্থিতিতে এগোতে অনিচ্ছা প্রকাশকে অনেকেই ‘জেদ’ ভাবেন, অথচ এটি আসলে সজাগতা।
সমস্যা
সমাধানে দক্ষতা রয়েছে। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা
গেছে, গাধারা ধাঁধাঁ জাতীয় সমস্যার সমাধানে ঘোড়ার চেয়েও ধৈর্যশীল ও কার্যকর পন্থা
খুঁজে বের করে।
এমনকি
ইউরোপে কিছু জায়গায় গাধা থেরাপি প্রাণী হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষদের জন্য।
এবারের
প্রতিপাদ্য:
"Working Donkeys: The Unsung Heroes"
অর্থ:
“শ্রমজীবী গাধারা—নীরব নায়ক”
এই
প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি পরিশ্রমী গাধার প্রতি সম্মান জানানো হচ্ছে, যারা নীরবে মানুষের জীবন সহজ করে তুলছে। তবে তাদের প্রতি যে অবহেলা, নিপীড়ন
এবং নির্মমতা চলছে, তা রোধ করাই
এই বার্তার মূল লক্ষ্য।
বিশেষত,
চীনে "ইজিয়াও (ejiao)" নামক ঐতিহ্যবাহী ঔষধ তৈরিতে গাধার চামড়া ব্যবহার হয়, যা বিশ্বের বহু
দেশে গাধা নিধনের ভয়াবহ বাজার সৃষ্টি করেছে। আফ্রিকার বহু দেশে ইতিমধ্যেই গাধার সংখ্যা বিপজ্জনক হারে কমে যাচ্ছে।
করণীয়
ও সচেতনতার আহ্বান
বিশ্ব
গাধা দিবস শুধুমাত্র একটি স্মরণীয় দিন নয়; এটি একটি নৈতিক আহ্বান—
গাধার
প্রতি নিপীড়ন বন্ধ করুন
গাধার
কল্যাণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন
প্রণয়ন করুন
গাধা
সম্পর্কে শিক্ষা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
তৈরি করুন
গাধার
চিকিৎসা ও পুষ্টির জন্য
ব্যবস্থা করুন
এনজিও,
সরকার ও জনসাধারণ মিলে
একটি সহানুভূতিশীল কাঠামো তৈরি করুন
উপসংহার
গাধা
কেবল একটি প্রাণী নয়, এটি অনেক দরিদ্র মানুষের জীবন-সঙ্গী ও অর্থনৈতিক সহায়ক।
তাদের শ্রমের মূল্য, নিরাপত্তা এবং সম্মান নিশ্চিত করা মানবিক দায়িত্ব। এ বছর বিশ্ব
গাধা দিবস হোক একটি শুভ সূচনা— যেখানে পশুদের আমরা বোঝা নয়, বরং পাশে দাঁড়ানো এক বন্ধুর মতো
দেখি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh