ছবিঃ সংগৃহীত।
আজ ৮ মে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ, ১৮৬১ সালের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সাহিত্যের এই অনন্য রত্ন। একাধারে কবি, নাট্যকার, গীতিকার, সুরকার, চিত্রশিল্পী ও সমাজচিন্তক—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু একজন সাহিত্যিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক সামগ্রিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা। তাঁর হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যের মানচিত্রে মর্যাদার আসন পায়।
শৈশব ও শিক্ষা
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের জন্ম এক প্রভাবশালী জমিদার
ও সাংস্কৃতিক পরিবারে। তাঁর বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং মা সারদাসুন্দরী দেবী
ছিলেন গৃহিণী। ঠাকুর পরিবারের শিক্ষাব্যবস্থা ছিল খুবই প্রগতিশীল। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথের মধ্যে কাব্য ও সঙ্গীতের প্রতি
আকর্ষণ ছিল প্রবল। প্রচলিত বিদ্যালয়ের গণ্ডিতে তাঁর পড়াশোনা হয়নি বললেই চলে। বরং বাড়িতেই তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি, বাংলা, সংগীত, অঙ্কন ও দর্শনের মতো
বিষয়গুলিতে বিশেষ মনোযোগ দেন। ১৮৭৮ সালে তিনি ইংল্যান্ডে যান উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে, যদিও তা সম্পূর্ণ করেননি।
ব্যক্তিগত
জীবন ও জমিদারি
১৮৮৩
সালে রবীন্দ্রনাথ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মৃণালিনী দেবীর
সঙ্গে। এই দম্পতির পাঁচ
সন্তান ছিল, যাদের মধ্যে কয়েকজন অল্প বয়সেই মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে নানা দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও তিনি সাহিত্যচর্চা চালিয়ে গেছেন। পিতার দেওয়া কুষ্টিয়ার শিলাইদহের জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্বও পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। এখানেই পদ্মা নদীর পাড়ে বসে রচিত হয় তাঁর বহু
কালজয়ী কবিতা, গান ও চিঠি। শিলাইদহে
তাঁর অবস্থানকালে লেখা "পত্রপুট", "ছিন্নপত্র" প্রভৃতি গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যে অনন্য সংযোজন।
বিশ্বকবির
স্বীকৃতি ও নোবেল পুরস্কার
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্ম বাংলার গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করে ১৯১৩ সালে, যখন তাঁর লেখা কাব্যগ্রন্থ “গীতাঞ্জলি” ইংরেজি অনুবাদে প্রকাশিত হয় এবং এর জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি এশিয়ার প্রথম নোবেলজয়ী এবং এখনও পর্যন্ত একমাত্র বাঙালি যিনি এই মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন। এই সম্মান তাঁকে ‘বিশ্বকবি’র আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। রবীন্দ্রনাথ শুধু বাংলা ভাষাকেই নয়, পুরো বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকেই বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশের
জাতীয় সংগীতের রচয়িতা
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”-এর রচয়িতা। এই
গান ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় রচনা করেছিলেন, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের
স্বাধীনতা ও জাতিসত্তার প্রতীক
হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে, ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীত “জন গণ মন”-এরও রচয়িতা তিনি।
মৃত্যু
ও চিরঅমরতা
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর ৭ আগস্ট ১৯৪১
সালে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যু যেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এক
যুগের অবসান ঘটায়। তবে তাঁর রচনা, চিন্তা ও শিল্পকর্ম বাংলা
সংস্কৃতিকে আজও আলোকিত করে চলেছে।
জীবনের
বিশেষ কিছু ঘটনা
১৯১৫
সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। তবে ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ফিরিয়ে দেন।
শান্তিনিকেতন
প্রতিষ্ঠা করে তিনি এক নতুন ধরনের
শিক্ষা ও মানবতাবাদী চিন্তার
প্রচলন করেন।
বিশ্বভ্রমণের মাধ্যমে তিনি ইউরোপ, আমেরিকা, চীন ও জাপানে গিয়ে বাংলা সাহিত্যের দূত হিসেবে কাজ করেন এবং বহু বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
শিলাইদহে
১৬৪তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশের আয়োজন
বিশ্বকবির
১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ কুষ্টিয়ার শিলাইদহ
রবীন্দ্রকুঠিবাড়িতে আয়োজন করা হয়েছে নানা কর্মসূচি। তিনদিনব্যাপী উৎসবে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনা এবং চিত্র প্রদর্শনী। এ উপলক্ষে স্থানীয়
প্রশাসন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে অনুষ্ঠানমালা আয়োজন করেছে। জাতীয় কবির জীবন ও কর্ম নিয়ে
বিশেষ আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, গবেষক এবং সংস্কৃতিকর্মীরা। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য এই শিলাইদহ যেন
আজ পরিণত হয়েছে এক পুণ্যতীর্থে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh