× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ; ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়

সংবাদ সারাবেলা ডেস্ক।

২৫ মার্চ ২০২৫, ১৪:২৫ পিএম । আপডেটঃ ২৫ মার্চ ২০২৫, ১৪:২৮ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ২৫ মার্চ একটি ভয়াল দিন হিসেবে চিহ্নিত। এটি সেই দিন, যখন পাকিস্তানি সেনারা ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ২৫ তারিখে ঢাকায়অপারেশন সার্চলাইট' চালায়। এই অপারেশনে নিরীহ বাঙালি নাগরিকদের ওপর পরিচালিত হত্যাযজ্ঞ নির্যাতন মানবাধিকারের ইতিহাসে এক অন্ধকার অধ্যায় হয়ে দাঁড়ায়। ওই দিন পাকিস্তানি সেনারা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন এবং লুণ্ঠন চালায়, যা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধের এক ভয়াবহ অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।

পটভূমি: এক উত্তপ্ত পরিস্থিতি

১৯৭১ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে স্বাধীনতার দাবি তীব্র হয়ে ওঠে। পূর্ব পাকিস্তানে গণআন্দোলন চলছিল। স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতির দাবি আরও শক্তিশালী হচ্ছিল, কিন্তু পাকিস্তান সরকার দাবি মানতে প্রস্তুত ছিল না। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা হঠাৎ করেই ঢাকায় আক্রমণ চালায়। এটি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক অধিকার স্বাধিকারের দাবির প্রতি প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাকিস্তানি সরকারের দ্বারা এক চরম পদক্ষেপ।

অপারেশন সার্চলাইট: পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ওই রাতেঅপারেশন সার্চলাইটনামে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে। এর লক্ষ্য ছিল বাঙালি স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের নির্মূল করা এবং বাঙালির গণ-প্রতিরোধ ভেঙে ফেলা। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পল্টন, চকবাজার এবং আগারগাঁওসহ অন্যান্য এলাকায় সেনারা ব্যাপক অভিযান চালায়।

সেনারা প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলোতে হামলা চালায়, যেখানে অনেক ছাত্র আন্দোলন করছিল। মেরিন পুলিশ, রেঞ্জারস, সেনা পুলিশ বাহিনী একত্রিত হয়ে নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। শহরের বিভিন্ন স্থানে গৃহবন্দী মানুষদের হত্যা করা হয়, অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হন, আর বহু মানুষ নিখোঁজ হয়ে যায়।

গণহত্যা নির্যাতন

পাকিস্তানি বাহিনী ২৫ মার্চ রাতে নিরীহ মানুষদের উপর ব্যাপক হত্যা নির্যাতন চালায়। এই গণহত্যায় সহায়তা দেয় দেশীয় কিছু প্রশাসনিক সামরিক সদস্যরা, যারা নির্বিচারে গুলি চালানো, বাড়িঘর জ্বালানো, লোকজনকে অপহরণ করা এবং তাদের হত্যার কাজটি করছিলেন। একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ঢাকায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়, যদিও অনেক সমালোচক এই সংখ্যা আরও বেশি দাবি করেন। একই রাতে ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটে পুড়ে ছাই হয়ে যায় অসংখ্য বাড়ি দোকানপাট।

২৫ মার্চের গণহত্যার এক অভূতপূর্ব দৃশ্য ছিল ঢাকা শহরে মানুষের শবদেহের স্তূপ। হাজার হাজার বাঙালি নারী, পুরুষ, শিশুকোনো ধরনের মানবিক সহানুভূতির বাইরে সেনারা একে একে হত্যা করতে থাকে।

অত্যাচার: নারী শিশুদের দুর্দশা

এই রাতে পাকিস্তানি সেনারা নির্যাতন চালানোর সময় নারী শিশুদের অবস্থা আরও ভয়াবহ ছিল। শোনা যায় যে, ঢাকাতে বহু নারীকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছিল। অনেক বাচ্চা সন্তানকে মায়ের কাছে থেকে কিডন্যাপ করা হয় এবং তাদের হত্যা করা হয়। পাকিস্তানি সেনারা পরিবারগুলোর ওপর অত্যাচারের এক বিকৃত চিত্র তৈরি করে, যেখানে ছোট শিশুরাও তাদের পিতামাতার সামনে মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়।

বিশ্বের প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতার খবর প্রথমে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আসে না। তবে পরে, গণহত্যার খবর ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি আন্তর্জাতিক মহলে একটি আলোচিত বিষয় হয়ে ওঠে। অনেক দেশে এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানানো হয়, তবে তৎকালীন আন্তর্জাতিক মহল পাকিস্তানের প্রতি তেমন কোনো কড়া ব্যবস্থা নেয়নি। ২৫ মার্চের গণহত্যার পরে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, যেমন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়।

পৃথিবীজুড়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবাদ

বিশ্বের অনেক মানবাধিকার সংগঠন এবং রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশে ২৫ মার্চের ভয়াল ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান। এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল মানবাধিকার সংস্থা 'অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল' এবং 'হিউম্যান রাইটস ওয়াচ', যারা এই গণহত্যার ঘটনা এবং পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতার প্রতিবাদ জানায়। তবে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

পরিণতি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম

২৫ মার্চের ভয়াল হামলার পর, সারা দেশে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম তীব্র হয়ে ওঠে। পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাঙালি জনগণ। ২৫ মার্চের গণহত্যা থেকে প্রেরণা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্রে বাঙালিরা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করে।

মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম এবং ২৫ মার্চের ভয়াল রাতের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফলস্বরূপ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।

২৫ মার্চের ভয়াল রাত বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এটি শুধু একটি গণহত্যা ছিল না, বরং স্বাধীনতার পথে এক নৃশংস প্রতিবন্ধকতার প্রতীক হয়ে আছে। আজও বাংলাদেশে এই দিনটিকে স্মরণ করা হয়। গণহত্যার শিকারদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতি বছর ২৫ মার্চগণহত্যা দিবসহিসেবে পালন করা হয়, যাতে নতুন প্রজন্ম এই ঘটনাগুলো ভুলে না যায় এবং স্বাধীনতা মানবাধিকারের মূল্য বুঝতে পারে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.