ছবিঃ সংগৃহীত।
পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে কোটি কোটি মানুষ এসেছে এই ধরনীতলে। তন্মধ্যে হাজার হাজার মহামানব, রাজা-বাদশা, লাট সাহেব-প্রজা, প্রভাবশালী-সাধারণ মানুষ, বীরবাহাদুর-শীর্ণকায় ব্যক্তি, বিশাল সম্পদশালী-ভিক্ষুক, বিশ্ব সুন্দরী-কুৎসিত, কালো-ধলাও ইত্যাদি ধর্ম-বর্ণ-চেহারা-অবয়বের বিচিত্র মানুষ পৃথিবীতে এসেছে। কতজন কত দম্ভ-অহংকার করেছে, কারও পদভারে ধরনীতে ধুলির ঝড় বইতো। ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করায় ভয়ে হৃদকম্প হতো। মানুষকে চিরশান্তির অমোঘ বাণী শুনাতো। আজ তারা কোথায়? সামান্য কিছু ছাড়া অধিকাংশের কোনো চিহ্ন পর্যন্ত নেই। মাটিতে মিশে একাকার হয়ে গেছে। এমনকি তিন পুরুষের আগের বংশধরের নাম পর্যন্ত অনেকে জানে না। এটি অনস্বীকার্য বাস্তবতা।
এই পরিণতি আমাদের ভোগ করতেই হবে। কোনো বিকল্প নেই। তাহলে কীসের নেশায় আমরা মত্ত? কেন আমরা এত অন্যায়-অত্যাচার-অবিচার, হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার-আত্মগরিমা, লোভ-লালসা, নাম-যশ-খ্যাতি, শৌর্য্য-বীর্য, শক্তি-সামর্থ্য, শান-শওকত, পোশাক-পরিচ্ছদ, ধন-দৌলত, ক্ষমতা-বাদশাহী প্রদর্শন করি? সবকিছুই মাটিতে মিশে যায়। মাটি থেকে সৃষ্ট, মাটিতেই কবর দেয়, বা শশ্মানে পুড়িয়ে নিঃশেষ করে দেয়। অবশেষে মাটিতে মিশে গিয়ে শেষ হয় চূড়ান্তরূপে।
তাহলে কেন চল-চাতুরী, দাপট, কলাকৌশল করে, হারাম পথে অজস্র সম্পদ রেখে যাওয়া? কয়দিন পরে মৃত ব্যক্তি স্মৃতির অতলে তলিয়ে যায়। শুরু হয় বংশধরদের নতুন জীবন। কালেভদ্রে মনে হয় পূর্ব-পুরুষকে। কবি জসীমউদ্দিনের "তিরিশ বছর ভিজিয়ে রেখেছি দুই নয়নের জ্বলে"-এমন আবেগময় পংক্তি কেবল কবিতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, বাস্তবে দেখা খুবই কঠিন।
সুরা আল ইমরান, আয়াত-২৬-এ বর্ণিত, "বলুন, হে আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করো এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করো আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত করো। তোমারই হাতে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশালী।"
নিজের রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় আর দূর সম্পর্কের আত্মীয় বা অপরিচিত জনের লাশ দাফনের মধ্যেও গভীর পার্থক্য আছে। মৃত মানুষের দেহ স্পর্শ করা, একাকী রাতে পাশে থেকে পাহারা দেয়া, গোসল করানো, সমাহিত করা, কবরের পাশে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা ইত্যাদির অনুভূতি হৃদয়ঙ্গম করলে মৃত্যুর কিছুটা অনুভূতি পাওয়া যেতে পারে। যাহোক, জীবন আর মৃত্যুর পার্থক্য আকাশ পাতালের থেকেও হাজারো গুণ বেশি। কোনোভাবেই পরিমাপযোগ্য নয়।
এজন্য জনমুখী রাষ্ট্রনায়ক হওয়া, সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করা, নাগরিকদের রাষ্ট্রের আইন-কানুন যথাযথভাবে পালন করা, স্ব-স্ব ধর্ম অনুযায়ী নির্ধারিত বিধিবিধান অনুসরণ করা, সৎ থাকা, সদাচরণ করা, প্রত্যেক মানুষকে গুরুত্ব দেয়া, হক-হালাল পথে চলা, অন্যায়-অবিচার-অত্যাচার-জোর-জবরদস্তি না করা, সুনাগরিক হওয়া আবশ্যক। এটি রাষ্ট্র, সমাজ এবং ব্যক্তি-সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
পরকাল অনন্তকাল। এর শুরু আছে, শেষ নেই। কবরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোট-বড় সকল সম্পদের হিসাব-নিকাশ দিতে হয়। ভালো বা মন্দ আমলের ভিত্তিতে মহান আল্লাহ নিখুঁত, নিপুণ নিক্তিতে সুক্ষ্ম বিচার করবেন। এরপর শুরু হবে অনন্ত জীবন, কঠিন বাস্তবতা। এর কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবীতে কেউ কখনো ফিরে আসেনি, ফিরে আসার কোনো পথও নেই। তখন আফসোসের সীমা থাকবে না। তাই এখনও সময় আছে। মহান আল্লাহ মহাক্ষমতাশালী, সকল দয়ার উৎস। তিনি আমাদের অতীতকে ক্ষমা করে দিন। ভবিষ্যতে যথাযথভাবে বাঁচার, চলার তৌফিক দিন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh