× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

গারো পাহাড়ে মানুষ-বন্যহাতির দ্বন্দ্ব

রতন বালো

০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:৫০ পিএম । আপডেটঃ ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:৫২ পিএম

বন বিভারে সদস্যরা গত ৩১ আগস্ট উদ্ধার হওয়া হাতিটিকে গাজীপুর সাফারি পার্কে নিচ্ছে। ছবিঃ রতন বালো

গারো পাহাড়ে আতঙ্কের অপর নাম বন্যহাতি। এদের কারণে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে গারো পাহাড়ের মানুষেরা। হাতির তান্ডবে নষ্ঠ হচ্ছে আবাদী ফসল। বন্যহাতির আক্রমণে সীমান্ত এলাকায় ঝরছে একের পর এক তাজা প্রাণ। পাশাপাশি হাতিরাও নির্বংশ হচ্ছে এমনটিই জানালেন এলাকার বন বিভাগ। এনিয়ে বন্যহাতি ও সীমান্তবর্তী কৃষকের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করছে।

হাতির তাণ্ডবে ২০১৪ সাল থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত ৪০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। অর্থাৎ গত ১০ বছরে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপর দিকে বিগত এক বছরেই (২০২৩ সাল থেকে চলতি সময়ে পর্যন্ত) ৩৮টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। এ সব ঘটনায় বনভূমি এবং বন্যপ্রাণীর সুরক্ষা দিতে সুস্পষ্টভাবে ব্যর্থ হয়েছে বন বিভাগ। হাতির মৃত্যুতে বনে অবৈধ দখলদারদের সম্পৃক্ততা সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেছেন, শেরপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর এবং কক্সবাজারসহ তিন পার্বত্য জেলায় বন্যহাতি বছরের বিভিন্ন সময় লোকালয়ে চলে আসে। বন্যহাতির কারণে কৃষকের ফল-ফসল ও বসতভিটার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে মানুষ ও হাতির দ্বন্দ্বে অবশ্য মানুষ অপেক্ষা বন্যহাতির মৃত্যু ঘটেছে তুলনামূলকভাবে বেশি। হাতির তাণ্ডব থেকে নিজেদের ফসল বাঁচাতে সীমান্ত এলাকা কৃষকেরা রাত জেগে মশাল জ্বালিয়ে ও ঘণ্টা বাজিয়ে পালাক্রমে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন। নিজেদের শত শত একর ফসল রক্ষার্থে নিজেদের জীবন বাজী রেখে হাতির আক্রমণ রুখার চেষ্টা করছেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ে নির্ভোরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে নতুন করে গারো পাহারের মানুষ জীবন রক্ষার্থে হাতিদের নির্যাতনের ভিডিও ভাইর‌্যাল করা হচ্ছে। আবার হাতিকে পোষ মানিয়ে এক দল মানুষ চাঁদাবাজী শুরু করেছে। পরে বন বিভাগ খবর গত ৩১ আগস্ট একটি হাতি উদ্ধার করেছে। হাতিটির নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। ৩০ আগস্ট বন অধিদপ্তরের দুটি টিম সারাদিন তল্লাশি চালায়। তারা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাতিটি দিয়ে চাঁদাবাজি করতে দেখে। সন্ধ্যার পর বন বিভাগের উপস্থিতি টের পেয়ে মাহুত হাতিটি ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তবে, বন বিভাগের সদস্যরা স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে আটক করে। সারারাত খোঁজাখুঁজি করেও হাতিটি পাওয়া যায়নি।

অবশেষে, ৩১ আগস্ট দুপুরে একটি হাউজিং প্রকল্পের ঘাস বনে হাতিটি পাওয়া যায়। পরে হাতিটিকে ট্রাকে করে গাজীপুর সাফারি পার্কে নেওয়া হয়। এর আগে, ২৯ আগস্ট কুমিল্লা থেকে আরেকটি হাতি উদ্ধার করা হয়েছিল। সেটিও নির্যাতনের শিকার ছিল এবং চাঁদাবাজিতে বাধ্য করা হচ্ছিল। সাফারি পার্কের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই দুই হাতির মাহুতেরা পরস্পর পরিচিত ছিল। উদ্ধার হওয়া হাতি দুটির কোনো লাইসেন্স পাওয়া যায়নি। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

জানা গেছে, ময়মনসিংহ বিভাগের আওতায় ভারত সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের তিনটি এবং ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া মিলে গারো পাহাড় অধ্যুষিত পাঁচ উপজেলায় গত এক মাসে বন্য হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৬ কৃষকের। মানুষের প্রতিরোধে বন্য হাতি মারা গেছে একটি। আর বন্য হাতি হত্যার অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে মামলাও। মানুষ-হাতির অব্যাহত এ দ্বন্দ্বে এভাবে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে, লম্বা হচ্ছে ঘরবাড়ি বিনষ্টসহ ফসলহানির তালিকা। আবার বন্য হাতি হত্যার মামলায় জড়িয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক।

আরেকদিকে সরকারের বন বিভাগসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে হাতির আক্রমণ দমনে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হলেও সব কর্মসূচি ও উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। বন বিভাগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তে শতাধিক বন্য হাতির পাল ৪-৫টি ভাগে ভাগ হয়ে গভীর জঙ্গলে অবস্থান করে। দিনে-রাতে যেকোনো সময় খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে তান্ডব চালাচ্ছে এরা। এ ছাড়াও ৬০-৭০টি বন্য হাতির পাল দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া টপকে অবস্থান করছে ভারতের গভীর জঙ্গলে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে হালুয়াঘাটের গাজিরভিটা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান এর সঙ্গে মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সীমান্তবর্তী মানুষ বন্য হাতি আতঙ্কে রয়েছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এখানে হাতি প্রতিরোধে বন বিভাগের কোনো নজরদারি নেই। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ বন বিভাগের গোপালপুর বিট কর্মকর্তা মাজাহারুল হক এর সঙ্গে মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হাতি প্রতিরোধে এলাকাবাসীকে সচেতনতা সৃষ্টি করতে বন বিভাগের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ ছাড়াও বন বিভাগ থেকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রয়েছে।

বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মানুষ ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর নানা চেষ্টা করে। তবে এমন কোন চেষ্টাকে কিছুতেই সমর্থন করা যায় না যার ফলে হাতি মারা পড়ে। বন বিভাগকে এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে হাতি বা অন্য কোন বন্যপ্রাণীর লোকালয়ে আসার প্রয়োজন না হয়। বনে খাদ্যের জোগান নিশ্চিত হলে তাদের লোকালয়ে আসার প্রয়োজন পড়বে না। এজন্য নির্বিচারে বন ধবংস বন্ধ করা জরুরি। বন্যপ্রাণীর জন্য আর কিছু করতে হবে না, মানুষ যেন বন ধ্বংস না করে সেটা নিশ্চিত করলেই চলবে। তাহলে খাবারের জন্য হাতিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের আর লোকালয়ে আসতে হবে না। বনই তাদের খাবারের জোগান দেবে বলে বন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোটের (বিএনসিএ) আহ্বায়ক ও পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার জানান, হাতি আমাদের জায়গায় আসেনি। আমরা মূলত হাতি চলাচলের পথে ঢুকে পড়েছি। হাতি চলাচলের জায়গা দখল করে বাড়ি ঘর করেছি। এ বিষয়ে তিনি দু:খ প্রকাশ করে বলেন, হাতি রক্ষায় বন বিভাগ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগের কার্যক্রম কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। হাতির মতো এত বড় প্রাণীকে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারার অর্থই হলো অন্য প্রাণীগুলোও খুবই হুমকিতে রয়েছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে আমাদের পরিবেশে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.