ডা. আয়েশা আক্তার শিল্পী, সহকারী পরিচালক, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল, শ্যামলী।
গত দু’বছর ধরে বিশ্বজুড়ে চলছে করোনা মহামারি মোকাবিলার যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসার মহান দায়িত্ব পালন করেছেন সম্মুখ সারির যোদ্ধা চিকিৎসকরা। এই কঠিন দায়িত্ব পালনে পিছিয়ে নেই নারীরাও। চলমান মহামারির মধ্যেও পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাসিমুখে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন নারী চিকিৎসকরা। তাদেরই একজন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল, শ্যামলী’র পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার শিল্পী।
তিনি ২২তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) এর মাধ্যমে সহকারী সার্জন হিসেবে চিকিৎসা পেশায় যোগদান করেন। ছিলেন সরকারি স্বাস্থ্য কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে সহকারী পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত আছেন শ্যামলীর ২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতালে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে করোনা যুদ্ধ মোকাবিলাসহ কর্মজীবী নারীদের নানা চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে এই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন সংবাদ সারাবেলার বিশেষ প্রতিনিধি শাহনাজ পারভীন এলিস।
সংবাদ সারাবেলা: স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৫০ বছরে চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন পেশায় নারীর বর্তমান অবস্থান, অগ্রযাত্রা কেমন হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
ডা. আয়েশা শিল্পী: রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনসহ সবেক্ষেত্রেই নারীরা এখন সফলভাবে বিচরণ করছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এই অবস্থানে আমরা এই অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি, এটাই একটা বড় ধরনের অর্জন। তবে কিছু বাধা অতীতে যেমন ছিলো বর্তমানেও রয়েছে। সেগুলো অতিক্রম করার সক্ষমতাও বেড়েছে এসময়ের নারীদের। ঝুঁকিপূর্ণ পেশা সব ধরনের পেশায় পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন নারীরা। সংসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কর্মস্থলে সফলও হচ্ছেন।
সংবাদ সারাবেলা: কর্মস্থলের পরিবেশ কতটা নারীবান্ধব হয়ে উঠতে পেরেছে বা করা সম্ভব হয়েছে?
ডা. আয়েশা শিল্পী: আমি মনে করি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নারীবান্ধব নীতি এবং পদক্ষেপের কারণে পরিবার ও সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। চিকিৎসা, সাংবাদিকতা, সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনীসহ পুলিশ প্রশাসনেও নারীরা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন করছেন। কাজের ক্ষেত্রেও এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না- এমন মনোভাব কমেছে। কর্মস্থলের সহকর্মীরাও সহযোগিতা করছে। অসময় অফিসে কর্মরত নারীকে নিরাপদে ঘরে ফিরে যেতে ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করছে কর্তৃপক্ষ।
পেশায় দায়িত্বের জায়গায় নারী-পুরুষ বলে আলাদা থাকা ঠিক নয়। নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবেই চিকিৎসা সেবাসহ সব ধরনের পেশায় কাজ করতে হবে, অবদান রাখতে হবে দেশ গঠনে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের এগিয়ে যেতে অনেক সহায়তা করছেন। নারীর এগিয়ে যাওয়াকে উৎসাহিত করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে সব পেশাতেই নারীরা এগিয়ে আসছেন। তবে আরও বেশি এগিয়ে আসতে হলে দরকার কাজের স্বীকৃতি ও সম্মান। পেশাগত ক্ষেত্রে একজন নারী যখন উন্নতি করতে থাকেন; কাজের জন্য যদি তাকে সম্মান দেয়া হয়, তাহলে তার এগিয়ে চলার উৎসাহ বেড়ে যায়। এই সম্মানটা কর্মক্ষেত্রে যেমন পেতে হবে তেমনি পরিবার থেকেও আসতে হবে। পরিবার যদি নারীর কাজকে সম্মান করে তাকে সহযোগিতা করে তাহলে তার পেশায় উন্নতি করাটা অনেক সহজ হয়।
সংবাদ সারাবেলা: কর্মজীবী নারীর জন্য পরিবার ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এখন কেমন বলে আপনি মনে করেন?
ডা. আয়েশা শিল্পী: পরিবার হলো একজন নারীর প্রথম দায়িত্বের জায়গা। কর্মজীবী নারীকে কিন্তু সব দিক সামলাতে হয়, ঘর-সংসার সামলার পর তাকে অফিস করতে হচ্ছে। সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হয়। এজন্য দরকার পুরুষের সহযোগী মনোভাব ও সহযোগিতা। করোনাকালীন সময় ঘরে অসুস্থ বাচ্চা রেখেও চৌদ্দদিন কোয়ারেন্টিনে থেকে হাসপাতালে রোগীর সেবা করতে হয়েছে। পরিবার থেকে সাপোর্ট পাচ্ছে বা আদায় করে নিচ্ছে। কারণ কর্মজীবী একজন নারী- চিকিৎসক অথবা সাংবাদিক; কাজের ধরনের কারণে তাকে হয়তো দেরিতে বা অনেক সময় রাত করে অসময়ে ঘরে ফিরতে হচ্ছে। অথচ পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরাও সেটা নিয়ে কোন মন্তব্য করছেন না; বরং মানিয়ে নিচ্ছেন। অনেক পরিবারে এসব দায়িত্ব পালনে পুরুষেরাও সহযোগী মনোভাব দেখাচ্ছে, যা আরও বাড়ানো দরকার।
সংবাদ সারাবেলা: করোনার সংক্রমণ ও পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভ্যাক্সিনেশন কর্মসূচির কী অবস্থা, ওমিক্রনের বর্তমান অবস্থা কী পর্যায়ে?
ডা. আয়েশা শিল্পী: ওমিক্রন যেমন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও এর মৃত্যু ঝুঁকি কম থাকায় নিয়ন্ত্রণ কার্যকরভাবেই নিয়ন্ত্রণ আছে, এগুচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে টিকার আওতায় আনতে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছ। মৃত্যুর সংখ্যা খুব কম। ভ্যাকসিনের প্রতি মানুষের প্রথমে অনাগ্রহ থাকলেও এখন ব্যাপক সাড়া মিলছে। এরই মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে গত ২৬ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পযর্ন্ত গণটিকা কর্মসূচি নেয় সরকার। প্রথম দিনেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এ পর্যায়ে গণটিকা শেষ হলেও টিকা কার্যক্রম শিডিউল অনুযায়ীই চলবে। ভ্যাকসিন গ্রহণ করে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই সকলেরই ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত। কারণ ভ্যাকসিন দিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। মৃত্যুঝুঁকি যাদের থাকে তাদেরও ভ্যাকসিন দেওয়ার ফলে তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। অখ্যাত যে ভ্যারিয়েন্টই আসুক না কেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে যেকোন ভাইরাস আমাদের কাছে হার মানতে বাধ্য।
সংবাদ সারাবেলা: করোনাকালে আপনি তো গণমাধ্যমের অত্যন্ত প্রিয়মুখ হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের স্বজন-মানবিক ডাক্তার আয়শা আপা। কারণ সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থাসহ অফিস রুমে আপ্যায়নেরও ব্যবস্থা রাখেন। হাসপাতালে রোগীর চাপ সামাল দিয়ে-এসব কীভাবে সম্ভব হলো?
ডা. আয়েশা শিল্পী: আমি আসলে আমার ডিউটি পালন করছি। সাংবাদিকরাও হলেন সম্মুখসারির যোদ্ধা- সমাজের দর্পণ। তাদের লেখনি ও তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমেই দেশের মানুষ সব খবর পেয়ে থাকে। তাদের সুরক্ষাও জরুরি বিষয়। তাই করোনাকালীন হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষের ভিড় ঠেলে, সময় অপচয় করতে না হয় সে লক্ষ্যে আলাদা এই ব্যবস্থা রাখা। সে কারণে আপনারা সাংবাদিকরাও আমাকে ভীষণ ভালোবাসেন।
সংবাদ সারাবেলা: সময় দেয়ার জন্য সংবাদ সারাবেলা পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
ডা. আয়েশা শিল্পী: আপনাকেও ধন্যবাদ। সংবাদ সারাবেলার জন্য শুভকামনা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh