ছবি: প্রতিনিধি
ভালুকা পৌর এলাকায় শেফার্ড ফ্যাক্টরির বিষাক্ত তরল বর্জ্য ঐতিহ্যবাহী খিরু নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে। এতে প্রায় ২৫ কিলোমিটার নদীপাড়ের সেচনির্ভর হাজার হাজার একর আমন ও বোরো জমির আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। মিল-ফ্যাক্টরির দূষিত বর্জ্য নদী-খাল-বিলে ফেলায় এলাকার মানুষ পেটের পীড়া ও চর্মরোগসহ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ায় জনস্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।
অবৈধ দখল ও শিল্প কারখানার বর্জ্য ফেলায় তৈরি হয়েছে এ অবস্থা। এলাকার কৃষক নিরুপায় হয়ে এ বিষাক্ত পানি দিয়েই চালাচ্ছে চাষাবাদ। ফলে শুষ্ক মৌসুমে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে নদীতে মাছ তো দূরের কথা ব্যাঙের দেখা মিলাও দুষ্কর।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নদীর দিকে তাকালেই দখলবাজির পরিমাণটাও স্পষ্ট হয়ে যায়। জবরদখল প্রক্রিয়া থামাতে মাঝেমধ্যে সরকারি পদক্ষেপ নেওয়া হলেও নানা সীমাবদ্ধতায় থমকে দাঁড়ায়। প্রভাবশালী দখলবাজরা থাকে অপ্রতিরোধ্য।
নদীর পাশ দিয়ে গেলেই রাসায়নিক পদার্থের তীব্র কটু গন্ধ নাকে লাগবে যে কারও। শিল্প-কারখানার বর্জ্য পড়তে পড়তে নদীর পানি একদম পচে গেছে। বহুদূর পর্যন্ত পানির এ দুর্গন্ধ গিয়ে নাকে লাগে।
শিল্প-কারখানাগুলোর অব্যবহৃত বর্জ্যসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভালুকার পরিবেশবাদী সংগঠন ও সমাজ সেবকরা দীর্ঘদিন ধরে মানববন্ধনসহ নানা আন্দোলন করে হতাশ হয়ে পড়েছেন। নিয়তি ভেবে নীরবে সহ্য করে যাচ্ছেন অন্য এলাকার মানুষজন। নদীর ৩৫ কিলোমিটার পানি দূষিত হয়ে কালো কুচকুচে রং ধারণ করেছে। নদীর পানির দিকে তাকালে মনে হয়, আলকাতার কোনো মিশ্রণ বয়ে চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের দেখানোর জন্য ইটিপি প্লান্ট তৈরি করে রাখলেও তা ব্যবহার করে না। বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্যও দু'টি পাইপ রাখেন। একটি দিয়ে ইটিপি প্লান্ট থেকে পরিশোধিত পানি ছাড়েন। অন্যটিতে সরাসরি ক্ষতিকর বর্জ্য মিশ্রিত পানি ছেড়ে দেন। প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তরের কেউ দেখতে চাইলে ইটিপি প্লান্টের পাইপ চালু করেন। অন্য সময় পরিশোধন ছাড়াই ক্ষতিকর শিল্পবর্জ্য ফেলে দেন জলাশয়ে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ভালুকা আঞ্চলিক শাখার সদস্য সচিব কামরুল হাসান পাঠান জানান, ভালুকায় শিল্প বর্জ্য দূষিত খিরু নদী, এটির মূল কারণ হল ভালুকায় প্রায় ৩০টি ড্রাইং ফ্যাক্টরি রয়েছে ইটিপি ব্যবহার না করে সরাসরি শিল্প তরল বর্জ্য গুলো বিভিন্ন খাল সহ সরাসরি খিরু নদীতে ফেলছে। শেফার্ড ফ্যাক্টরির বিষাক্ত তরল বর্জ্য খিরু নদীতে সরাসরি ফেলছে। এর মধ্যে লাউতি খাল, বিলাইঝুড়ি খাল সহ প্রায় ৩০টি খাল আজ মৃত। এ সমস্ত শিল্প বর্জ্যর দূষিত পানিতে অনেক ধরণের কেমিক্যাল রয়েছে, যা আমাদের পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হচ্ছে, জীব-বিচিত্র প্রায় শেষ হওয়ার মত, আজ নদীতে মাছ নেই, আবহাওয়া সহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এই বিষয় গুলো নিয়ে প্রচুর লেখা-লেখি, প্রতিবাদ সহ মানবন্ধন হয়েছে। ভালুকার প্রাণ খিরু নদী রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন সময় মানববন্ধনসহ গত ১৪ মার্চ নদীকৃত্য দবিসে আমরা মানববন্ধনসহ স্মারকলিপি দিয়েছি, কিন্তু আসলে কিছু তে কিছু হচ্ছে না। যাদের দেখার কথা, তারা কোন ভাবেই দেখছে না, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে তারা কিভাবে ছাড় পত্র পায়, প্রতিবছর কিভাবে নবায়ন করছে, এটাও আমদের জানা নেই। আমরা শুধু প্রতিবাদই করে যাচ্ছি, আমরা চাই আমাদের এই প্রজন্ম নয়, আমাদের ভালুকার আগামীর প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য, ভালুকাকে একটি বাসযোগ্য ভালুকা হিসেবে দেখতে চাই।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh