ফরিদা ইয়াসমিন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত নারী সভাপতি। এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রথম সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোন নারীর অনন্য রেকর্ড। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায় ও অগ্রযাত্রা নিয়ে তিনি সংবাদ সারাবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বিশেষ প্রতিনিধি শাহনাজ পারভীন এলিস।
সংবাদ সারাবেলাঃ আপনাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানাই। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরে নারী উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা কতটুকু সম্ভব হয়েছে?
ফরিদা ইয়াসমিন: স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দীর্ঘ সংগ্রামে নারীর অগ্রযাত্রায় যত চ্যালেঞ্জ এসেছে তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফলতা এসেছে। নিজেদের উন্নয়ন ও অধিকার আদায়ের প্রশ্নে নারীরা কোন আপস করেনি। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নারীর ক্ষমতায়ন শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসনিক নেতৃত্ব, রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব...প্রায় সর্বক্ষেত্রে নারীরা এখন সদর্পে বিচরণ করছে, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে অধিকার আদায়ের প্রশ্নে আরও দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়েছে নারী। তবে কিছু ব্যর্থতাও রয়েছে। সেগুলো হলো- নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, কুসংস্কার আর দমিয়ে রাখার পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব; যা নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক পর্যায়ে রূপান্তরিত করা সম্ভব হয়নি। এ কারণেই নারীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এখনও উদ্বেগের বিষয়৷ ধর্ষিত হচ্ছে শিশুরাও।
সংবাদ সারাবেলা: এ ক্ষেত্রে বাধাগুলো দূর করতে কী করা দরকার বলে মনে করছেন?
ফরিদা ইয়াসমি: আমরা একটা পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় বাস করি। সেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিটাই নেতিবাচক। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পুরুষ মনস্তত্বের ইতিবাচক পরিবর্তন জরুরি। নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক, সহায়ক শক্তি-সেই মনজাগতিক পরিবর্তন আনতে হবে। প্রয়োজনে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
সংবাদ সারাবেলা: এবারের নারী দিবসের তাৎপর্য কী বলে আপনি মনে করছেন?
ফরিদা ইয়াসমি: দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকে এ পর্যন্ত যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, সবখানেই নারীর সরব নেতৃত্ব রয়েছে। যদিও তাদের নেতৃত্বের পথটি কোনোকালেই সুগম ছিল না; তবু তারা কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে পিছিয়ে থাকেননি। বাংলাদেশ আজ নারী নেতৃত্বের রোল মডেল। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের নারী আন্দোলনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, গেলো দুই বছরের করোনাকালসহ নানা কারণেই এবারের নারী দিবস অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর দেশ গঠনে সংগ্রামে নারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই সময়ে নারীদের অগ্রযাত্রায় বাধা আসলেও, পিছিয়ে নেই নারী। বিশেষ করে গত এক দশকে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় নারীরা অবস্থান নিয়েছে। নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ রাখছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের নারীবান্ধব নীতি ও পদক্ষেপের কারণ সেটা সম্ভব হয়েছে। নারীকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে সরকার কাজ করছে।
সংবাদ সারাবেলা: করোনা মহামারির মধ্যেও যুদ্ধ করে চলেছেন অনেক কর্মজীবী নারী। এর প্রভাবে গেলো দুই বছরে বেকার হয়েছেন অনেক। এটা তাদের পরিবার-সমাজে কতটা প্রভাব ফেলেছ?
ফরিদা ইয়াসমিন: বিগত দুবছর ধরে চলা মহামারি করোনার মোকাবিলার যুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। জীবন দিয়েছেন অনেকে, কিন্তু দায়িত্ব থেকে দূরে সরে যাননি। এদিকে দুই বছরে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কিছু কর্মজীবী নারী। তাদের মধ্যে অনেকে অবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বেছে নিয়েছেন বিকল্প অন্য কোন পেশা। এ খাতে বাজেচ বাড়ানোসহ সরকারিভাবেও নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। নারী উন্নয়নে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে; যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৩ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার প্রস্তাব করা হযছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৭.৫ শতাংশ।
সংবাদ সারাবেলা: আপনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রথম নারী সভাপতি। এই পর্যায়ে আসতে আপনার চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাই?
ফরিদা ইয়াসমিন: আমি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য হই ২০০১ সালে। এরপর ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম। ২০২১ সালের আগের দুই কমিটিতে আমি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। জাতীয় প্রেস ক্লাবে মর্যাদার এই আসনে পৌঁছাতে আমাকে ২০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবে লক্ষ্য স্থির ছিলো, কোনকিছুতে পিছুপা হইনি।
সংবাদ সারাবে: বিশেষ এই দিনে সময় দেয়ার জন্য সংবাদ সারাবেলাকে পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছে ও অভিনন্দন।
ফরিদা ইয়াসমিন: সম্প্রতি বাজারে নতুন আঙ্গিকে আসা দৈনিক সংবাদ সারাবেলাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। সাহসী ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি নারীদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের তথ্য তুলে ধরবে, সহযাত্রী হবে প্রত্যাশা রইলো। নারীদের অধিকার আদায় এবং লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইকে সমর্থনের জন্য বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবছর দিবসের প্রতিপাদ্য হলো-চ্যালেঞ্জ করতে বেছে নিন। জীবনের প্রতিটি ধাপে, ঘরে-বাইরে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি নারীরা৷ সেই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার আদায় করে নিতে হয়। সেটা যারা করতে পারেন সেইসব নারীই পারেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh