দেশের পূর্বাঞ্চল রেলপথের অন্যতম রেলওয়ে জংশন স্টেশন হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া। এ জংশন স্টেশনে ২২টি আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেনের যাত্রা বিরতি রয়েছে। এসব ট্রেন দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার যাত্রী ভ্রমণ করছেন। বর্তমানে এ স্টেশনে আধুনিকায়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায় চলে এসেছে।
এখানে দৃষ্টিনন্দন করে তৈরি করা হয়েছে প্ল্যাটফর্ম ও ওভার ব্রিজ। কিন্তু ওভার ব্রিজে ওঠা-নামার জন্য রাখা হয়নি র্যাম্প বা সমতল সিঁড়ি। এ জন্য প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন প্রতিবন্ধী, বয়োবৃদ্ধ ও নারী-শিশু যাত্রীরা। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত ব্যাগেজ বহন করে এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্ম যেতে তারা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, দেশের অন্যান্য জায়গায় নতুন তৈরি রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে প্রতিবন্ধীদের জন্য র্যাম্প বা সমতল সিঁড়ি রাখা হয়েছে। অথচ এই স্টেশনে তা নেই। এখানে দ্রুত সমতল সিঁড়ি নির্মাণ করতে তারা রেল মন্ত্রী এবং স্থানীয় এমপি ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এদিকে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২১৩ এর ১৩ ধারায় ভৌত অবকাঠামো, যানবাহন, যোগাযোগ, তথ্য ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ জনসাধারণের জন্য প্রাপ্য সব সুবিধা ও সেবাসমূহে অন্যান্যদের মতো প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সমসুযোগ ও সম আচরণ প্রাপ্তির অধিকারের কথা বলা হয়েছে।
দৃষ্টিনন্দন করে তৈরি করা হয়েছে প্ল্যাটফর্ম ও ওভার ব্রিজ
রেলওয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া-কুমিল্লা, লাকসাম ৭২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ ও রেলওয়ে স্টেশন উন্নয়ন কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। এ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশন আধুনিকায়ন করা হয়। এর অংশ হিসেবে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন ভবনের আধুনিকায়ন, নতুন একাধিক প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ, রেল ট্র্যাক স্থাপন, আধুনিক সংকেত (সিগন্যাল) ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে।
এ স্টেশনে যাত্রী পারাপারের জন্য বিশাল একটি দৃষ্টিনন্দন ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৯০ ফুট এবং উচ্চতা ৩০ ফুট। প্রায় ৫০ ফুট লম্বা সিঁড়ি হেঁটে যাত্রীদেরকে ওভার ব্রিজে উঠতে হচ্ছে। ওই ব্রিজে উঠা-নামার জন্য উভয় পাশে ৩টি করে মোট ৬টি সিঁড়ি রাখা হয়েছে। কিন্তু কোনো র্যাম্প বা সমতল সিঁড়ি রাখা হয়নি। এজন্য প্রতিবন্ধী, অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ যাত্রীদের পারাপারে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। তাছাড়া, অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজ বহন করে সিঁড়ি ভেঙে চলাচল করতেও সমস্যায় পড়ছেন যাত্রীরা। অথচ এ পথের ছোট ছোট স্টেশনগুলোর ওভার ব্রিজেও র্যাম্প সিঁড়ি রাখা হয়েছে।
রেলওয়ে স্টেশনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন বয়স্ক যাত্রী তাদের হাতে থাকা ব্যাগ নিয়ে আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছেন। কিছুক্ষণ পর পর আবার দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। এভাবে ৫ মিনিটের পথ প্রায় ১৫ মিনিট সময় তাদের লেগে গেছে। অনেক যাত্রীকে দেখা গেছে তারা ব্রিজ দিয়ে না উঠে পায়ে হেঁটে অনেক দূর দিয়ে এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্ম যাতায়াত করছেন। দু’জন নারী ছোট বাচ্চা কোলে নিয়ে রেল লাইনের ওপর দিয়ে এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্মে যেতে দেখা গেছে। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ক্রাচে ভর করে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন। মালামাল বহনেও যাত্রীদেরকে বেগ পেতে হয়েছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ব্রিজের উভয় পাশে সিঁড়ির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন আর র্যাম্প করার সুযোগ নেই।
ট্রেন যাত্রী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ডাক্তার দেখাতে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। ইচ্ছে করলেই সিঁড়িতে উঠা নামা করতে পারি না। কারণ আমি হার্টের রোগী। তাই ওভার ব্রিজে না উঠে অনেক দূর পায়ে হেঁটে অন্য জায়গা দিয়ে প্ল্যাটফর্মে এসেছি।
ট্রেনযাত্রী খোরশেদ আলম জানান, ঢাকা যেতে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে নিয়ে রেলওয়ে স্টেশনে আসলে মালামাল ও ছোট বাচ্চা নিয়ে ওভার ব্রিজ দিয়ে পশ্চিম দিকে অনেক কষ্ট করে যেতে হয়েছে। সমতল সিঁড়ি থাকলে খুব সুবিধা হতো।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. হুমায়ুন মিয়া বলেন, নতুন দৃষ্টি নন্দন স্টেশন হয়েছে দেখলে খুবই ভালো লাগে। কিন্তু যাত্রীদের তেমন সুবিধা হয়নি। আগের থেকে দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। প্রতিবন্ধী, অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ যাত্রীরা ইচ্ছে করলে এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এখানে সমতল সিঁড়ি নেই। সমতল সিঁড়ি রাখা হলে খুব সুবিধা হতো। এখন যে সিঁড়ি করা হয়েছে তা দিয়ে প্রতিবন্ধীদের চলাচল করা সম্ভব না।
আখাউড়া পৌরশহরের চন্দনসারের বাসিন্দা লেখক আলী মাহমেদ বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে রেলওয়ের আধুনিকায়ন কাজ করা হচ্ছে। অথচ আখাউড়ায় ওভার ব্রিজে কেন র্যাম্প রাখা হলো না তা বুঝতে পারছি না। অসুস্থ, প্রতিবন্ধী যাত্রীরা কিভাবে পারাপার হবে। বিষয়টি খুবই অমানবিক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে র্যাম্প নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন সুপার মো. নুরুন্নবী বলেন, রেলওয়ে স্টেশনে ওভার ব্রিজে র্যাম্প না থাকার ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh