× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও ঘটনাবহুল ২০২৪ সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

একটুখানি বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগর, দায় কার?

মাহমুদ খান, সিলেট ব্যুরো

১০ জুন ২০২৪, ১৩:৫৫ পিএম

একটুখানি তলিয়ে যাচ্ছে সিলেট মহানগরের বেশ কিছু এলাকা। অনেকের বাসা-বাড়িতেও উঠছে বৃষ্টির সেই পানি। দীর্ঘক্ষণ আটকে তৈরি হয় তীব্র জলাবদ্ধতা । ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। এমন পরিস্থিতিতে একটু বৃষ্টি হলেই আতঙ্ক তৈরি হয় নগরবাসীর মধ্যে। বর্ষা মৌসুমে এ পরিস্থিতি আরো প্রকট আকার ধারণ করার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

শনিবার রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় সিলেটে। এতেই তলিয়ে যায় নগরের অধিকাংশ বাসা-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট।

রাতেই নগরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপশহর, কাজলশাহ, মেডিকেল রোড, বিলপাড়, বাগবাড়ি, দরগামহল্লা, পায়রা, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, কালীবাড়ি, হাওলাদারপাড়া, সোবহানীঘাট, উপশহর, যতরপুর, তেরোরতন, সোনারপাড়া, কেওয়াপাড়া, সাগরদিঘিরপার, পাঠানটুলা, মিয়া ফাজিলচিশত, জালালাবাদ, হাউজিং এস্টেট, শাহি ঈদগাহ, ঘাসিটুলা, হাওয়াপাড়া, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, জামতলা ও তালতলা এলাকার রাস্তা-ঘাট পানিতে ডুবে আছে। সড়কের পানি ড্রেনে নামার বদলে ড্রেনের পানি উপচে সড়কে উঠছে। অনেকের বাসা-বাড়িতেও ঢুকে পরে পানি।

জলাবদ্ধতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নগরের উপশহর এলাকার মুহিতুর রহমান বলেন, বৃষ্টি হলেই নগরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। উপশহরের সড়কে পানি জমে যায়। বৃষ্টি থামার ধীরগতিতে পানি কমতে শুরু করে। আশপাশের অনেক বাসা-বাড়িতে পানি প্রবেশ করে। এতে আমরা ভোগান্তির মধ্যে আছি। সিটি কর্পোরেশনসহ কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছেন তাদেরকে এই বিষয়গুলো দেখতে হবে। বর্ষা মৌসুমের আগে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করতে হবে। তাহলে ড্রেনগুলো দিয়ে দ্রুত পানি নেমে যাবে।

নগরীর খুলিয়াটুলার বাসিন্দা মাহফুজ আহমেদ কবির বলেন, রাতে কয়েকঘণ্টার বৃষ্টিতে আমার বাসাতে পানি ঢুকে পড়ে, বৃষ্টি হলেই তা নিত্যদিনের ঘটনা । এতে আসবাবপত্রসহ ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই বাসাতে পানি ঢুকে পরে গত সপ্তাহের বৃষ্টিতে আমার বাসাসহ এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার, খাল খনন করতে হবে। আশপাশের যে ড্রেনগুলো রয়েছে সেগুলো অনেক ছোট তাছাড়া নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমের আগেই সেগুলো ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। পানি যাওয়ার কোন পথ না থাকায় সেই পানি বাসা-বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এ অবস্থায় ড্রেনগুলো সংস্কার করা অত্যন্ত প্রয়োজন। না হলে এই বর্ষা মৌসুমে জলাবন্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে অবস্থা আরো নাজুক হয়ে যাবে।

নগরীর তালতলা এলাকার বাসিন্দা জাকের হোসেন বলেন, অল্প বৃষ্টি হলেই তালতলা এলাকা ডুবে যায়। সুরমা নদীর যে খননের পরিকল্পনা ছিল এটা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ড্রেনের পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। ফলে বৃষ্টির পানি যাওয়ার মত কোন রাস্তা থাকেনা।

পরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব সিলেট-এর দাবিতে প্রায় দুই দশক ধরে নাগরিক আন্দোলন করছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট-এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম। অল্প বৃষ্টিতে নগরীতে জলাবদ্ধতা তৈরির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, মূলত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না করে ড্রেন ও বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। যা বৃষ্টির পানি প্রবাহ ধারণ করতে পারে না। প্রাকৃতিক ছড়াকে গার্ড ওয়াল দিয়ে সম্পূর্ণ আচ্ছাদিত করায় দুই পাশের মাটি আর পানি শোষণ করে না।

তিনি জলাবদ্ধতার জন্য সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নাগরিকদের অসচেতনতাকেও দায়ী করেন। তিনি বলেন প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য ড্রেনে ও ছড়ায় ফেলা বন্ধ না করলে এমন ভোগান্তির অবসান কোন কালেই হবেনা।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ২৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, নগরীতে যারা বসবাস করছে তাদের মধ্যে সচেতনতার প্রয়োজন। নগরীর বাসিন্দা যারা রয়েছে তারা ড্রেন দিয়ে পলিথিনসহ বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ফেলে দেন যেগুলো ড্রেন দিয়ে যায় না, ফলে ড্রেনে ব্লক সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ড্রেন যেগুলো আছে যেগুলো যথাসময় পরিষ্কার হয় না, সেগুলোকে তদারকির মধ্যে আনতে হবে। সিটি কর্পোরেশন কাজ করছে তবে তাদের তদারকির অভাব রয়েছে। তদারকি বৃদ্ধি পেলে এই সমস্যার অনেকটা সমাধান সম্ভব। পাশাপাশি অনেকে যেখানে সেখানে স্থাপনা-বাড়ি তৈরি করে ফেলছেন, সেটি পরিবেশ বান্ধব হচ্ছে কিনা তা চিন্তাও করেন না। এক্ষেত্রে সম্মিলিত সবার পরিকল্পনার প্রয়োজন, তাদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এগুলো জরুরি ভিত্তিতে দেখা দরকার। আর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। নগরীর বাসিন্দা অনেকে আছেন যারা ছিদ্র করে ময়লা-আবর্জনা ড্রেনে ফেলে দেয়, যার কারণে আপনা-আপনিই ড্রেনে ব্লক সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বৃষ্টির পানি ড্রেনে না গিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ একলিম আবদীন বলেন, কালকে রাতে পানি উঠেছিলো তবে সেটা নেমেও গেছে তবে যত দ্রুত নামার কথা ছিল তত দ্রুত নামে নাই। আমি মনে করছি, গত কয়েকদিন থেকে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন জায়গা থেকে ড্রেনে ময়লা গুলো ঢুকে ড্রেনের বিভিন্ন জায়গা আটকে গেছে। আমরা সকাল থেকেই কাজ শুরু করছি আশা করছি ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া নগরবাসীর সচেতনতার অভাব রয়েছে, আমরা নিয়মিত পরিষ্কার করছি তবে প্রতিদিন যে পরিমাণ ময়লা ড্রেনে ফেলে হচ্ছে সেগুলো বন্ধ করা না হলে জলাবদ্ধতা আটকানো সম্ভব না। আমরা সিটি কর্পোরেশন পক্ষ থেকে কাজের কোনো কমতি রাখছে না। বৃষ্টির পানি দ্রুত নামার জন্য রাতেও কাজ করছে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।

নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী শাহীন আহম্মেদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কার্যালয়ে গিয়ে তথ্য নেওয়া জন্য জানান। পরবর্তীতে কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ড্রেনে পানি নামতে সময় লেগেছে। যে পরিমাণ বৃষ্টির পানি হয় সে পরিমাণ পানি ড্রেনে যায়, এরপর ছড়ায় গিয়ে সেটা নদীতে যায়। এর জন্য অনেকটা সময় চলে যায়। তারপর আমাদের এখানের ড্রেনগুলো সরু এর জন্য ধীর গতিতে পানি নামে। 

যদি ড্রেনের প্রস্থ আরো বাড়ানো যায় তাহলে আরো দ্রুত গতিতে পানি নামবে। এছাড়া সিটির পক্ষ থেকে নিয়মিত ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। তবে নগরে যারা বসবাস করেন তাদের ময়লা-আবর্জনাগুলো ড্রেন ও ছড়াতে ফেলে দেন এতে করে দ্রুতই ড্রেন ও ছড়া ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে পানি প্রবাহের গতি কমে যাচ্ছে।

ড্রেনের প্রস্থ বাড়ানো হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন নকশা করা হয় তখন দেশের গাইডলাইন অনুযায়ী ৫ বছর মেয়াদে করা হয়। এর থেকে বেশি মেয়াদে করতে চাইলে ড্রেনের কাজ অনেক বড় হবে। দুই পাশের ড্রেন যদি ১০ ফুট করে বাড়ানো হয় তাহলে ২০ফুট বাড়ানো হবে তাহলে তো মূল সড়ক আর থাকবে না।

জলাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার কাজ চলছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সে কাজগুলো শেষ করার। জলাবদ্ধতার আরেকটি কারণ নগরের বাসিন্দারা যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে দিচ্ছেন সেগুলো ড্রেনে যাচ্ছে। সেখানে গেলে ড্রেনের পানি প্রবাহে বাঁধা প্রদান করছে। এছাড়া গতকাল রাতে বা আগের সপ্তাহে অল্পসময়ে বেশি বৃষ্টি হওয়ার কারণে পানি নামার সুযোগ ছিল না। তাছাড়া সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় কাছাকাছি অবস্থান করছিলো, এজন্যে পানি নামতে সময় লেগেছে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.