সিলেটের জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশে ময়লা-আবর্জনার বিশাল স্তূপ। ময়লার ভাগাড় থেকে ছড়াচ্ছে উৎকট গন্ধ। দূষিত হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব। গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে এ বিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ আশপাশের বাসিন্দারা।
এ অবস্থায় শ্রেণীকক্ষে বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায় , এ বিদ্যালয়ের ৪টি শ্রেণীতে ৫৬৪ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এখানে শিক্ষক রয়েছেন ১৪ জন।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুলের প্রধান ফটকের পাশ ঘেঁষে ময়লা-আবর্জনার বিশাল ভাগাড় রয়েছে। দীর্ঘ দিন থেকে এখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে তবে দিন যত যাচ্ছে রাস্তার পাশে ময়লা-আবর্জনা ততই বাড়ছে। এতে দুর্গন্ধের পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে জলাবন্ধতা। এই স্থানে ফেলা হচ্ছে বাসা বাড়ির ময়লা, কাঁচাবাজারের উচ্ছিষ্ট ময়লা, হোটেলের পচা-বাসি খাবারসহ সব ধরনের আবর্জনা। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই এগুলো পচে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্গন্ধে ওই রাস্তায় পথচারীদেরও সমস্যা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে রয়েছেন শ্রেণি কক্ষে বসে থাকা শিক্ষার্থীদের। তবে অপসারণে কার্যকর উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের ফলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের মনে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ওই বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থী আলিশা ইসলাম তুলি জানায়, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে শ্রেণীকক্ষে বসা খুবই কষ্টের। বিদ্যালয়ে যতক্ষণ থাকি ততক্ষণ আমাদের দুর্গন্ধের মধ্যে কাটাতে হয়। দুর্গন্ধে বমি চলে আসে। এ রকম অবস্থা অনেক দিন থেকে চলছে। এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করা ও স্কুলে ক্লাস করা অনেক কষ্টকর।
আমিনা বেগম নামে এক অভিভাবক জানান, দুর্গন্ধের কারণে স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়ানো যায় না। তাছাড়া সবসময় দুর্গন্ধ আছে। প্রতিদিন এখানে ময়লা ফেলা হয়। এজন্যে আমার মেয়ে স্কুলে যেতে চায় না, জোর করে নিয়ে এসেছি। কয়েকদিন পর পরই মেয়ে অসুস্থ হয়ে যায়।
সরকারি স্কুল রোডের ব্যবসায়ী মো. শহীদুল ইসলাম শামীম বলেন, দুর্গন্ধের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে থাকতে কষ্ট করে। রাতের আধারে কে বা কারা এখানে এসে ময়লা আবর্জনা ফেলে যায়। এই ময়লায় দিন দিন বাড়ছে, বর্ষাকাল আসলে আরো বেশী দুর্গন্ধ ছড়ায়, কিছু দিন আগে কয়েকদিন পরিষ্কার করা হয়েছিলো, ফলে কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছিলাম। এখন আবার আগের মতো হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে আরো কঠোর হতে হবে।
জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা সাব্বির জানান, সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। এখানেই কেন ময়লা ফেলতে হবে? নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলতে হবে। নিজেদের ময়লা আবর্জনা নিজেদের পরিষ্কার করতে হবে। তাহলেই আশপাশের পরিবেশ ভালো থাকবে।
জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা ফাবিয়া জান্নাত জানান, প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। গন্ধের কারণে রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না, ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে নাক চেপে ধরতে হয়। এদিকে গেলে বমি চলে আসে।
জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সরকারি প্রধান শিক্ষক জহর কুমার সিনহা বলেন, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধের ফলে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস ও রাস্তায় চলাচল করতে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ছে মশার উপদ্রব। আমাদের শিক্ষার্থীরা দুর্গন্ধের কারণে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাছাড়া বর্ষাকাল আসলে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। ময়লার ভাগাড় অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।
জৈন্তাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা দ্রুত এখান থেকে ময়লা অন্যত্র সরানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সবার সাথে বসে একটি স্থায়ী সমাধান করবো। এই এলাকা যেভাবে পরিষ্কার রাখা যায় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সরকারি বিদ্যালয়টি মূলত নিজপাট ইউনিয়নে অবস্থিত এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইন্তাজ আলী বলেন, আমরা পরিষ্কার করার পর আবারো ময়লা ফেলে দেয়। এ বিষয়ে আমরা বসেছিলাম বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেছিলেন এখানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করবেন কে ময়লা ফেলে দেখার জন্য। সিসি ক্যামেরাও এখনো লাগানো হয়নি।
ময়লা কি এখানেই থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কি প্রতি মাসে গিয়ে পরিষ্কার করব? গত বছর একবার করেছি এবার আরেকবার করেছি দুইবার করেছি তারপরও এলাকায় জনসচেতনতা নেই, আবার এখানেই ময়লা ফেলে। যারা এখানে ময়লা ফেলে তারা যদি সচেতন না হয় তাহলে এখানের ময়লা প্রতিদিন কে পরিষ্কার করবে?
জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সদ্য বিজয়ী চেয়ারম্যান এম লিয়াকত আলী বলেন, শপথ নেওয়ার পর পরই আমি এ বিষয়টি আগে দেখব। এখান থেকে ময়লা পরিষ্কারসহ অন্য স্থানে ময়লা ফেলার জায়গা করে দিব।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া, বিষয়টি খুবই দৃষ্টিকটু। এরকম রাস্তার পাশে স্কুলের সামনে ময়লা ফেলা দেখতে খুবই বাজে লাগে। আমি সেখানে প্রথম যেদিন নির্বাচনের প্রশিক্ষণের জন্য গিয়েছিলাম সেদিনই দেখলাম এই অবস্থা। আমি তখনই একটা পরিকল্পনা করেছি। তবে বন্যা ও নির্বাচনের কারণে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্কুলের আশপাশে কেউ কোনো ধরনের ময়লা ফেলতে পারবে না এরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তখন চাইলেও যে কেউ সেখানে ময়লা ফেলতে পারবে না। আশা করছি ঈদের পর পরই এখানে কাজ শুরু করে দিব।