সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্ম হয়নি বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবিরের। পৃথিবীর যত সফল ব্যাক্তি রয়েছেন তাদের পিছনে রয়েছে দীর্ঘ কষ্টের গল্প। তেমনি কষ্ট আর অভাবকে জয় করে সফলতার ছোঁয়া পেয়েছেন তিনি। অজপাড়াগাঁয়ের ছেলে হুমায়ুন শুধু দারিদ্র্যই নয়, জয় করেছেন আকাশ৷ আর তাকে নিয়ে এখন গর্বিত এলাকার মানুষ৷
দীর্ঘ ২০ বছর পর আমেরিকা থেকে কিশোরগঞ্জের নিজের এলাকায় ১ মাসের সফরে এসেছেন একাধিক বিমান আবিস্কারক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. হুমায়ুন কবির।
শুক্রবার (২৪ মে) পাকুন্দিয়ার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বড় আজলদী গ্রামে তার নানার বাড়িতে হেলিকপ্টারে আসেন। সাথে তার সহধর্মিণী ফরিদা কবির এসেছেন।
গ্রামবাসী ও সহপাঠীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হুমায়ুনের জন্মস্থান কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের নাগেরগ্রামে৷ ওই গ্রামের আনন্দ কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনার হাতেখড়ি তার৷ সহপাঠীরা জানান, ছোট থেকেই সকল ক্লাসে ফাস্ট ক্লাস ছিলেন৷ লেখাপড়ায় ছিলেন অপ্রতিরোধ্য ও মেধাবী। কটিয়াদী বাড়ি হলেও নানান কারনে পাশ্ববর্তী পাকুন্দিয়া উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বড় আজলদী গ্রামে তার নানার বাড়িতে থেকেই সময় কেটেছে বেশি৷
এলাকার প্রবীণ ব্যাক্তি ব্রিটিশ সরকারের ভাতা প্রাপ্ত সৈনিক শতবর্ষী আব্দুল মান্নান (১২৫) বলেন, হুমায়ুনকে ছোট থেকেই দেখেছি লেখাপড়ার প্রতি আকর্ষণ৷ তীব্র অভাবে তেল বিক্রি করে নিজের পড়াশোনা ও সংসারের হাল ধরেছে। সে আমাদের এলাকার তথা বাংলাদেশের জন্য গর্বের৷
হুমায়ুন কবিরকে একদম কাছ থেকে দেখা আজলদী গ্রামের আমিনুল ইসলাম (৭০) বলেন, যে কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে বলে প্রকাশ করার মতো না৷ তার বাবা দুই টাকা দিলে এক টাকা জমির রাখতেন। একদিন তার মা বিছানা তুলে দেখেন টাকা জমানো। পরে হুমায়ুন কবির মাকে বলেন, অনেক সময় বাবার কাছে তাৎক্ষণিক টাকা থাকেনা৷ জমিয়ে রাখি জাতে আমার জরুরি প্রয়োজনে খরচ করতে পারি।'
চন্ডিপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শামসুদ্দিন বলেন,বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির দেশে আসায় আমাদের জন্য আনন্দের৷ ওনি আমাদের এলাকা শুধু নয়, বাংলাদেশের অহংকার৷ এমন একজন মেধাবী মানুষের জন্ম আমাদের দেশে এটা গর্বের বিষয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির বলেন, দেশের মাটিতে আবারো আসতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত৷ সবাইকে পেয়ে ভালো লাগছে। আমি কখনো কারো কাছ থেকে কিছু নিয়ে বড় হয়নি। নিজের চেষ্টা এবং পরিশ্রমকে হাতিয়ার করে শূন্য থেকে এই অবস্থানে আসা। আমি বলবো, নির্দিষ্ট লক্ষ্য পৌঁছাতে চেষ্টাকে প্রবল করতে হবে। আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে আমি পারবো। সবারই মেধা আছে এটাকে সঠিক কাজে লাগাতে হবে যে যেই কাজে পারে৷ মেধাকে অপচয় না করে ভালো কাজে লাগাতে হবে।'
বাংলাদেশি এই বিশিষ্ট রকেটবিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পিএইচডি, অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে গত ২৬ বছর ধরে বোয়িং বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করছেন। ডক্টর কবিরকে মার্কিন সরকারের জন্য এই বিশেষ হেলিকপ্টারটি তৈরি করতে কয়েক শত সেরা এবং উজ্জ্বলতম মহাকাশ প্রকৌশলী সাহায্য করেছেন।
এর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির আবিষ্কার করেছেন ১৯৮৬ সালে রিমোট নিয়ন্ত্রিত এইচ-৫ হায়েন্স হেলিকপ্টার। বর্তমানে হুমায়ুন কবির যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বোয়িং কোম্পানিতে উর্ধ্বতন বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত। এই দায়িত্ব থেকে তিনি আমেরিকার সরকারের প্রতিরক্ষা প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বিচিত্র সাময়িকি গ্রন্থে একক এবং যৌথ বিজ্ঞান বিচিত্রা নামে বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবিরের ৩৫ টিরও বেশি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির আমেরিকার আকাশে আমেরিকার হেলিকপ্টার সোসাইটির একজন বিজ্ঞানী এবং আবিস্কারক। ২০০৪ সালের ৫ মার্চ তিনি তার জন্মস্থান কটিয়াদীর বনগ্রাম নাগেরগ্রামে এসেছিলেন। পরে তাকে নাগরিক গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিলো। এর ২০ বছর পর আবার আসলেন দেশে৷
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh