আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ভারসাম্য ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একে অপরের পরিপূরক। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বলতে আমরা শুধুমাত্র ডলারকে বিবেচনায় নেই। সে কারণে আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের লোন প্রাপ্তির জন্য অনেক কঠিন শর্ত মানতে হয় যা দেশের অর্থনীতি এর মূল চালিকা শক্তি শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের ওপর যে বিশাল প্রভাব পরবে সেটা চিন্তায় থাকে না। টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংক সুদ হার বৃদ্ধি ও পণ্য আমদানির প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে কিভাবে দ্রব্য মূল্যহ্রাস করা সম্ভবপর হবে সেটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মাথায় আসছে না। বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদগণ ভালো বলতে পারবেন।
দেশের বেশির ভাগ শিল্পের কাঁচামাল ও বহু ফিনিস পণ্য আমদানি করা ছাড়া ভোগ করার কোন উপায় নেই। ঐ তিন বিষয়ের সাথে যুক্ত হল রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির চাপ। তিন বিষয়ের যোগফলের সমষ্টির উপর রাজস্ব আদায় হয়তো বাড়বে। তবে শর্ত হলো ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা থাকবে কিনা সেটা সন্দেহ আছে। অন্য দিকে তৈরি হয়েছে আর্থিক ঘাটতি, সেটা হলো বৈদেশিক মুদ্রার দেশে আসা ও প্রদানের সামঞ্জস্যতা। অর্থনীতিবিদগণ বলছেন চলতি হিসাবের ব্যালান্স ভালো অর্থাৎ রপ্তানির বিপরীতে প্রাপ্ত ডলার এখনও দেশে আসে নি কিন্তু রপ্তানি সম্পন্ন হয়েছে। যাহোক অর্থনীতির এত কঠিন মারপ্যাঁচ আমাদের মতো অতি নগণ্য মানুষের বোঝার দরকার নেই। সাদা চোখে যা ভাসা ভাসা দেখি সেটা বলার বা বোঝানোর চেষ্টা করি। সেটাও কতজন শুনে বা আমলে নেন সেটাও বোধগম্য নয়।
তবে প্রতিটা বিশ্ব সংস্থার লোন দেওয়ার বিপরীতে বিশ্ব মোড়লের স্বার্থ জড়িত থাকে, আর সেই স্বার্থ হল ব্যবসায়ীক স্বার্থ। সরকার যদি নিজের দেশের শিল্প বিকাশের স্বার্থ চিন্তা না করে সাময়িক ডলারের রিজার্ভ বৃদ্ধির কথা চিন্তা করে তাহলে দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব পড়বে। আইএমএফ এর শর্ত মেনে শেয়ার মার্কেটে ট্যাক্স বসানোর কথা শোনার পর যদি শেয়ার বাজারে ধস নামতে পারে তাহলে বসানোর পর শেয়ার মার্কেট থাকবে বলে মনে হয় না। আইটি সেবার কর অব্যাহতি বাদ দিলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন শুরুতেই শেষ হয়ে যাবে কিনা সেটা ভাববার বিষয়। রেমিটেন্স এ প্রণোদনা দিয়ে বৈধ পথে রিমিটেন্স আনা যায় না, টাক্স বসালে তো আরো আসবে না। রিজার্ভ বাড়ার উপায়ের মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আসা। সামান্য লোন প্রাপ্তির আশায়, বৈধ স্থায়ী রিজার্ভ বৃদ্ধির দ্বিতীয় উপায় সামান্য কর প্রাপ্তির জন্য বন্ধ করার বিষয় বিবেচনা যোগ্য বা পরিবার ছেড়ে বিদেশ থাকা ব্যক্তির কষ্টার্জিত আয় অবৈধ পথে পাঠাতে উৎসাহিত করার যক্তিকতার বিষয় বিবেচনার দাবি রাখে।
পোশাক শিল্পের রপ্তানি বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতার কারণে হুমকির মুখে সেটার ঢালাওভাবে ইনসেনটিভ বন্ধ করা উচিত হবে বলে মনে হয় না। বরঞ্চ সেটার বাজার বৃদ্ধির লক্ষে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানির ওপর ইনসেনটিভ রাখলে ব্যবসায়ীগন নতুন নতুন বাজার খুঁজতে উৎসাহিত হবে।
২০৩০ সালের মধ্যে প্রধান রপ্তানি খাত হিসাবে আইটি সেক্টরকে ধরা হয়েছে, সেটার কর অব্যাহতি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব অন্য কোন দেশকে অধিক সুবিধা দেওয়ার যোগসূত্র আছে কিনা সেটা অবশই পলিসি মেকারগণ বিবেচনায় রাখবেন। লোন প্রাপ্তি রিজার্ভ সংকটের স্থায়ী সমাধান না, এটা পরিশোধের সময় স্থানীয় রাজস্ব বৃদ্ধির বিকল্প কিছু নেই। আর রিজার্ভ সংকটের স্থায়ী সমাধান হলো রপ্তানি বৃদ্ধি ও বৈধপথে রেমিটেন্স আসা। বর্তমানে সামান্য প্রাপ্তির আশায় স্থায়ী সমাধান নষ্ট করার বিষয় আর কেউ না বুঝলে দেশপ্রেমিক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবশই বুঝবেন এবং করো চাপে তিনি সেটা বন্ধ করবেন বলে মনে হয় না।
তিনি বিকল্প চিন্তা করবেন, আমাদের অধিক আমদানি চিন থেকে হয়ে থাকে, ডলারের বাইরে উভয় দেশের সম্মতিতে স্থানীয় মুদ্রায় আমদানির মূল্য পরিশোধ করা যায়। বর্তমানে চীন ভালো বন্ধু রাষ্ট্র তাই সেখান থেকে আরো সহজ শর্তে ঋণ নেওয়া যেতে পরে এবং রিজার্ভ বৃদ্ধির বিকল্প হতে পারে ডলারের জায়গায়। এভাবে যে সমস্ত দেশের সাথে অধিক আমদানি হয় সেই দেশের মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো অথবা প্রাচীন যুগের ন্যায় বিনিময় প্রথা অর্থাৎ যে দেশে রপ্তানি হবে সেই দেশে আমাদের চাহিদা মতো পণ্য থাকলে সেটা আমদানি করা যেতে পারে। লেখার শুরুতে বলেছি অর্থনীতিবিদ না, যা লিখেছি সেটা শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের সাদা চোখে দেখা উপলব্ধি মাত্র। বলতে পারেন হাতি ঘোড়া গেলো তল, পিঁপড়া বলে কত জল, তেমনটা ভাবলেও মাইন্ড করার সাহস নেই।
লেখক: লিড কনসালট্যান্ট, দ্যা রিয়েল কনসালটেশন, ভেন্ডর- ভ্যাট কনসালট্যান্ট, বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশ
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh