ছন্দের
যাদুকর বাদশা মিয়া। ১৫ বছর বয়সে থেকে তিনি পুঁথি পাঠ শুরু করেন।
তখন থেকেই পুঁথি পাঠ তার নেশায়
পরিনত হয়। কুড়িগ্রামরে ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের শল্লীধরা গ্রামের তবারক মিয়ার ছোট ছেলে বাদশা মিয়া। নবম শ্রেণিতে
উঠার পর বাড়ি থেকে
পালিয়ে বইপড়া দলের সাথে যোগ দেন তিনি গুণী ব্যক্তি। সেখানেই গুরু
হুজুর আলীর তত্ত্বাবধানে আস্তে
আস্তে বাদশা মিয়া পুঁথি
সাহিত্য পড়ায় দক্ষ হয়ে ওঠেন।
প্রায়
৫০ বছর ধরে উওর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বইপড়ে মানুষকে শুনিয়ে আসছেন বাদশা মিয়া। এই সময়ে তার
নাম হয় বই পড়া
বাদশা মিয়া। বয়স হয়ে যাওয়ায় গত কয়েক বৎসর
থেকে বইপড়া কমিয়ে দিয়েছেন। তবে ভাল বায়না হলে শিষ্যরা এখনোও তাকে নিয়ে যেতে ভোলেন না।
তিন-চার জন মিলে বাতি
জালিয়ে সন্ধা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত চলতো তাদের বই পড়া। পুঁথি
ছন্দের সাথে সুর মিলিয়ে নেচে গেয়ে কাহিনীর সাথে মিশে গিয়ে মানুষের মাঝে পরিবেশন করতেন তিনি। কখনও কখনও কাহিনী এবং সুরের মোহনীয় আকর্ষণে রাত শেষ হয়ে দিনের আলো ফুটলেও মানুষ তার ছন্দ এবং কাহিনীর রসে মুগ্ধ হয়ে শুনতো তার বই পড়া ।
পুঁথি
ছন্দের পাশাপাশি নিজস্ব কিছু ছন্দ দিয়ে পাঠ পরিবেশন করতে পছন্দ করেন তিনি। মুখে মুখে ছন্দ বানাতে তিনি খুবই দক্ষ। কোন জিনিস একবার দেখে তাৎক্ষণিক ছন্দ দিয়ে মানুষের মাঝে পরিবেশন করে তাক লাগিয়ে দিতেন। বৈশাখ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত ছয় মাস তাদের
বই পড়া ভালো চলতো। অন্য সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক পেলে বই পড়তেন। গাজিকালু
-চম্পবতী, ছয়ফুলমুল্লুক - বদিয়ারজামান, গহরবাদশা -বানেছাপরি, এমরান চন্দ্রবান, জামান পাঁচদোলা, তাজেল গোলরায়হান, মদনকুমার সহ বিভিন্ন পুঁথি সাহিত্যের ছন্দ, সুর, তাল তিনি মুখে মুখেই বলতে পারেন । ইহা ছাড়াও
সমাজে নানা ঘটনা, অসংগতির কথাও তিনি তাঁর তাৎক্ষণিক বানানো
ছন্দে দর্শকের মাঝে পরিবেশন করতেন।
বাদশা
মিয়া বলেন সমাজের মানুষের আর্থিক উন্নতি, কর্মব্যস্ততা এবং বিদেশি কালচারে অভ্যস্ত হওয়ায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্য পুঁথি সাহিত্য পড়া এখন অনেক কমে গেছে। তবে সাহিত্য রস পরিবেশন, ছন্দ
এবং সরস উপস্থাপনার মাধ্যমে পুঁথি সাহিত্য এখনও জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব।