সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সৌন্দর্য ছড়ানো শিমুল গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ আগে বেশিরভাগ বাড়িতে এ গাছের দেখা মিলত। বিশেষ করে গ্রামের লোকজনের বাড়িতে।
তাড়াশ উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, বিশেষ করে ইউক্যালিপটাস গাছের কারণে শিমুল গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এ গাছ বাঁচিয়ে রাখতে গ্রামের লোকজনকে সচেতন হতে হবে। বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গাতে শিমুল গাছ অযত্নে বেড়ে ওঠে। পাশাপাশি সরকারিভাবে সড়কের ২ পাশ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ গাছ বপন করা যেতে পারে।
তাড়াশ পৌর এলাকার আসান বাড়ি গ্রামের শিহাব সরকার নামে একজন কৃষক বলেন, আমাদের বাড়িতে একটি বিশাল আকৃতির শিমুল গাছ ছিল। সেই গাছের তুলায় লেপ, তোষক, বালিশ ভরা হত। সারা বছর লেপ বাদে শিমুল তুলার বালিশ ও তোষক ব্যবহার করতাম বাড়ির সবাই। যা ছিল খুবই আরামদায়ক। এখন শিমুল তুলার পণ্য ব্যবহার করা আমাদের সাধ্যের মধ্যে নাই। শিমুল তুলার একটি বালিশের দাম ৭০০ টাকা। লেপ ভরতে গেলে ৩ হাজার টাকার বেশি গুণতে হয়। প্রায় ২০ বছর আগে বাড়ির গাছটি কেটে বড় ভুল করে ফেলেছি।
আসান বাড়ি গ্রামের আরেক কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, আমার বাড়িতেও একটি শিমুল গাছ ছিল। কিন্তু এ গাছের গুরুত্ব বুঝতে না পেরে ২ বছর আগে কেটে ফেলেছি। এ গ্রামে আর শিমুল গাছ নাই।তাড়াশ বাজারের লেপ, তোষকের দোকানদার মোস্তফা ও বাশার আহাম্মেদ বলেন, প্রসিদ্ধ নওগাঁ হাট ও সলঙ্গা হাট ছাড়া শিমুল তুলা পাওয়া যায় না। তাও চাহিদার তুলনায় পরিমাণে খুব কম। এ ছাড়া এখনো যাদের বাড়িতে গাছ আছে তারা দুই থেকে তিন বছরের তুলা সংগ্রহ করে বাড়িতে রেখে দেন। এরপর দোকানে এনে বেচে দেয়। বাড়ির তুলা ২ থেকে ৩ কেজির বেশি পাওয়া যায় না। ১৫ বছর আগে ১ কেজি শিমুল তুলার দাম ছিল ৩০ টাকা। ৫ বছরের ব্যবধানে ১৫০ টাকা হয়ে যায়। বর্তমান দাম ৫০০ টাকা কেজি।
সরেজমিনে তাড়াশ থেকে কুন্দইল যাওয়ার পথে দিঘী সগুনা গ্রামের মোশারফের বাড়ির সামনে সড়কের জায়গাতে দেখা মেলে ১টি মাঝারি আকৃতির শিমুল গাছের। দূর থেকেই নজর কেড়ে নিচ্ছে এ গাছটির সৌন্দর্য। গাছের এডাল থেকে ওডালে লাফিয়ে পড়ছে বুলবুলি ও শালিক পাখি শিমুল ফল খাওয়ার জন্য। এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় অনেক পথচারী তাকিয়ে থাকেন গাছটির দিকে।
দীঘি সগুনা গ্রামের বাসিন্দা ও সগুনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য সেন্টু তালুকদার বলেন, আমাদের গ্রামে আগে বেশ কয়েকটি শিমুল গাছ ছিল। এখন একটিও নেই। সড়কের জায়গার গাছ না হলে এ গাছটিও হয়ত কেটে ফেলা হত।জানা গেছে, শিমুল গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর প্রিয় খাদ্য। তাছাড়া শিমুলের মূল বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ্ জানিয়েছেন, শিমুল গাছ কেবল সৌন্দর্যই ছড়ায় না, এ গাছের রয়েছে নানা উপকারিতা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব। এ গাছের সব অংশের ভেষজগুণ রয়েছে। লেপ, তোষক ও বালিশ তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই। কিন্তু অন্যান্য গাছের মতো এ গাছ কেউ শখ করে লাগায় না। আবার এখনো যে ২ থেকে ৪টি গাছ রয়ে গেছে কোনো যত্ন নেওয়া হয় না। ফলে সারাদেশে থেকে শিমুল গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh