কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের শিবনাথ সাহা তালুকদার বাড়িটি একাধিকবার পাক বাহিনীর আক্রমনের শিকার হয়। টিকতে না পেরে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় বাড়ির লোকজন। বাড়িটি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কটিয়াদীর মানিকখালী রেল স্টেশন দিয়ে সহজেই পাক বাহিনী এই গ্রামে প্রবেস করতো৷ নির্বিচারে আতর্কিত গুলি করে অনেক মানুষকে হত্যা করে৷ লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে অনেক গ্রাম পুড়িয়ে দেয়৷
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়,শিবনাথ সাহার বাড়িতে প্রবেশ করতেই ঘাট বাঁধা বিশাল এক পুকুর। বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই দুটো ভবন। তার একটি মন্দির অন্যটি শিবনাথ সাহার বাড়ি। মন্দিরের পিছনে সীমানা প্রাচীর ঘেরা আরো একটি পাকা ভবন।
শিবনাথ সাহার তালুকদার বা জমিদার বাড়ি। বাড়িটি বিভিন্ন ধরনের নকশা করা কারুকাজে ভরা।
বর্তমানে বাড়িতে বসবাস করা এক জেলে পরিবার। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা এখানে স্বাধীনতার আগ থেকেই বসবাস করছে । স্বাধীনতা পর্যন্ত শিবনাথ সাহের পরিবার এখানে ছিলো কিন্তু যুদ্ধের সময় এই বাড়িতে কয়েকবার আক্রমণ করে পাক বাহিনী তখন এই ভীতিকর পরিবেশ থেকে বাঁচার জন্য শিবনাথ সাহার পরিবার ভারতে পাড়ি জমায়।
জানা যায়,শিবনাথ সাহা এই বাড়িতে বসেই তার জমিদারি কাজ চালাতেন। তবে বাংলার অন্য জমিদারদের মতো তিনি অত্যাচারী ছিলেন না। প্রজাদেরকে তিনি ভালোবাসতেন, সুনজরে দেখতেন। তিনি ছিলেন উদার মনের মানুষ। বাংলা ১২৫৫ সালের ১৭ আষাঢ় ও ইংরাজি ১ জুলাই ১৮১৮ সালে উপজেলার কুড়িখাই গ্রামের একটি সনাতন পরিবারে শিবনাথ সাহার জন্ম। তার বাবার নাম কার্তিক চন্দ্র সাহা। দাদার নাম যাত্রাবর সাহা। শিবনাথ সাহার ছোট একটি ভাইও ছিলেন। নাম ছিল তার শম্ভুনাথ সাহা। শিবনাথ সাহার বাবার ও ঠাকুরদার আমলে তাদের জমিদারির অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। তবে শিবনাথ সাহা জমিদারির দায়িত্ব পাওয়ার পর অর্থনৈতিক অবস্থার প্রসার ঘটে। তিনি বাজিতপুরের আলিয়াবাদে এক বনেদি সাহা পরিবারের মেয়ে কালী সুন্দরীকে বিয়ে করেন। কালী সুন্দরীও ছিলেন বেশ প্রজাবৎসল। তাদের ঘরে তিন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কোনো ছেলে সন্তান না থাকায় তিনি তার ভাই শম্ভুনাথ সাহার চতুর্থ ছেলে সুরেন্দ্রনাথ সাহাকে দত্তক নিয়েছিলেন।
স্ত্রীর নাম কালীসন্দুরী সাহা। তার পারিবারিক উত্তরসূরীগণ (বর্তমানে কটিয়াদী বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাবু দিলীপ কুমার সাহা, রতন কুমার সাহা, উত্তম সাহা , বিশ্বনাথ সাহা, কৃষ্ণ পদ সাহা প্রমূখ) মনে করেন এক মাহেন্দ্রক্ষণে মনুষ্য রুপী দুই দেব-দেবী কালি ও শিবের মিলন ঘটে। কিন্তু তাদের কোন পুত্র সন্তান হয়নি। বাবু শিবনাথ সাহা ও কালি সুন্দরীর ঘরে তিন কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহন করেন। তাদের নাম বিদ্যাসুন্দরী সাহা, জগৎতারা সাহা ও জয়াদূর্গা সাহা। পুত্র সন্তানের জন্য হয়তো এই দম্পতির অন্তরে একটু দীর্ঘশ্বাস লুকানো ছিল।
বাবু শিবনাথ সাহা অনেক জনহিতকর কাজ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্ত্রীর নামে বাজিতপুরে কালিতারা পাঠশালা, বনগ্রামে পিতার নামে কার্তিক চন্দ্র সাহা লাইব্রেরী, ধুলদিয়ায় শিবনগর, কামালপুরে পূজামন্ডপ এবং ১৯১৮ সনে গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করেন যা পরবরতীকালে সরারচর শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয় নাম ধারণ করে। তিনি ১৯২০ সনের ২০ সেপ্টম্বর একটি ট্রাষ্ট গঠন করেন। এই শিক্ষানুরাগী শিবনাথ সাহা বাংলা ১৩৩১ সনের ১৭ আষাঢ় নিজ বাসভবনে মৃত্যু বরণ করেন। তার বাড়ীর পাশেই নদীর পাড়ে শিবসাহা শ্মশানঘাট। সেখানেই দীর্ঘ উঁচু শিবসাহা মঠ আজো দেখা যায়।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh