× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মোড়া তৈরি করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন নারীরা

মো. আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি)

১৩ মার্চ ২০২৪, ১২:৫৪ পিএম

কেউ বাঁশ কেটে প্রয়োজন মতো সাইজ করে নিচ্ছেন। কেউ তৈরি করছেন শলাকা, কেউ আবার বাঁশে বেতের মিলন ঘটিয়ে মোড়া তৈরি করছেন গ্রামের নারীরা। 

তবে নারী-পুরুষ ছোট-বড় সবাই এ পেশার সাথে জড়িত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিপুণ হাতে তৈরি করেন একেকটি মোড়া। 

এভাবেই গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মোড়া তৈরি করে সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা এনেছেন নারীরা। এসব নারীদের হাত ধরে পরিবার থেকে শুরু করে বদলে গেছে পুরো দুটি গ্রাম। 

বলছিলাম মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কাজীপাড়া ও হাতিয়াপাড়া গ্রামের সংগ্রামী নারীদের কথা।

পিছিয়েপড়া এ জনপদের নারীদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় এসব পাড়ার প্রতিটি বাড়ি হয়ে উঠেছে ছোট ছোট কুটির শিল্প। 

কাজীপাড়ায় ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে মোড়া তৈরি করছেন মরিয়ম বিবি। মায়ের সাথে বসে বাঁশ-বেতের সমন্বয়ে মোড়া তৈরী করছে কলেজ পড়ুয়া আবিদা। আবিদার মতো  স্কুল-কলেজ পড়ুয়া এমন অনেকেই লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে মায়ের সাথে মোড়া তৈরীর কাজ করে থাকে। 

জামিলা বেগম জানান, দীর্ঘ ৯ বছর ধরে মোড়া তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। স্বামীর পাশাপাশি তিনিও আয় করছেন। সংসারের যাবতীয় খরচের পর বাড়তি টাকা সঞ্চয় করছেন। পরিবার নিয়ে সুখেই আছেন তিনি। 

জরিপা বেগম বলেন, এখানকার প্রতিটি বাড়িতেই মোড়া তৈরি করা হয়। পরিবারের কাজ শেষে সবাই মোড়া তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। কারোরই যেন অবসর নেই। মোড়া তৈরি করে সকলের পরিবারেই কমবেশী আর্থিক স্বচ্ছলতা এসছে বলে জানান তিনি। 

তবে পাহাড়ের এসব সংগ্রামী নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন গাজীপুর সরকারী মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীন। ইতিমধ্যে তিনি কাজীপাড়া ও হাতিয়াপাড়ার শতাধিক নারীকে মোড়া তৈরী উপকরণ দিয়ে তাদের সংগ্রামে সারথী হয়েছেন। তার মানবিক সহায়তায় নারীরাও ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

আকার ও মান অনুযায়ী প্রতি জোড়া মোড়া বিক্রি হয় ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০ টাকায়। প্রতি সপ্তাহে ৩-৪ জোড়া মোড়া তৈরি করে একেকজন নারী। যা থেকে একেকজন সপ্তাহে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা আয় করে থাকেন।

এসব নারীদের নিপুন হাতে তৈরি এসব মোড়া ইতোমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করে এসব মোড়া সমতলের জেলাগুলোতে বাজারজাত করার মতো কাজটি করে থাকেন স্থানীয় পাইকার মো. কামরুল ইসলাম। দেশের সমতলের বাজারে এখানকার মোড়ার ব্যাপক চাহিদার কথা জানান তিনি।

কাজীপাড়া ও হাতিয়াপাড়ার নারীরা বোঝা না হয়ে সংসারের হাল ধরেছেন মন্তব্য করে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আলাউদ্দিন লিটন বলেন, মোড়া তৈরিতে নিয়োজিত নারীরা যথাযথ প্রশিক্ষণ পেলে এটি পাহাড়ের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে গড়ে উঠবে। অযথা গালগল্পে অলস সময় পার না করে মোড়া তৈরি করে সংসার স্বাবলম্বী হওয়া যায়। 

গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীন বলেন, নারীরাও পারে এটার অনন্য উদাহরণ গড়েছে 

কাজীপাড়া ও হাতিয়াপাড়ার নারীরা। তারা শুধুমাত্র পারিবারিক কাজে নিজেদের আটকে না রেখে অবসর সময়ে মোড়া তৈরী করে বাড়তি টাকা আয় করছে। দেশের অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখা মোড়াকে শিল্প হিসেবে ঘোষনার দাবী জানান তিনি।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতায় ভূমিকা রাখা এসব নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। তাদেরকে ঋণ প্রদানসহ মোড়া শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। 

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.