× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

কক্সবাজার হঠাৎ লবণের দাম কম, জিম্মি চাষিরা

এ.এম হোবাইব সজীব, কক্সবাজার

১০ মার্চ ২০২৪, ১৪:১৩ পিএম

কক্সবাজারের বিভিন্ন লবণ মাঠে বহুমুখী শোষণের ফলে ফসলের মাঠে কৃষকের সেই হাসি এখন আর নেই। বহুকাল থেকে মধ্যস্বত্বভোগী দালাল সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে ঠকছে লবণ চাষিরা। ফলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে লবণের দাম তলানিতে নেমে এসেছে। 

গত সপ্তাহে মাঠ পর্যায়ে যে লবণ মণপ্রতি ৪০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। সে লবণ এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা। দালাল সিন্ডিকেট চাষিদের কাছ থেকে কম দামে লবণ নিয়ে তা মিলারদেরকে বেশি দামে বিক্রি করছে। 

পলিথিন থেকে শুরু করে কঠিন শর্তে জমি বর্গা নেওয়া ছাড়াও সস্তায় লবণ বিক্রি করতে বাধ্য হতে হচ্ছে চাষিদের।

পুরো মৌসুমেই দালালদের কাছে অসহায় উপকূলের প্রান্তিক লবণ চাষি। জমি থেকে শুরু করে মাঠের পলিথিন কেনা ও লবণ বিক্রি সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ দালাল চক্রের হাতে। ওজনের ক্ষেত্রে ঠকানো সেটা যেন রেওয়াজে পরিনিত হয়েছে। ৪০ কেজিতে মণের হিসাবটাই দিনের পরদিন বেড়ে এখন প্রায় ৫২/৫৫ কেজিতে মণ। জেলার উপজেলা গুলোতে ও লবণের দামও ভিন্ন। মণ প্রতি শতাধিক টাকা দালালি নেওয়ার পর ইচ্ছে মতো দামও নির্ধারণ করেন দালাল সিন্ডিকেট।  বর্তমানে বালতি নিয়ে লবণের ওজন নির্ধারণ পদ্ধতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।

এক বালতি লবণের ওজন ১৩/১৪ কেজি,এক মণ লবণের জন্য তিন- চার বালতি লবণ নেয়। এভাবেই লুট হচ্ছে প্রান্তিক চাষীরা হাড়ভাঙ্গা শ্রম।

সরকারিভাবে কোন কার্যকরী তদারকি না থাকায় মাত্রাতিরিক্ত জুলুমের শিকার চাষিরা।

এদিকে তীপ্ত গরমের মাঝে লবণ উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রান্তিক চাষিরা। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ের এসব লবণ চাষিরা পুরোপুরি জিম্মি দালাল চক্রের কাছে। তাদের দাবি; চাষিদের দুর্বলতাকে পুঁজি করে দালাল চক্র খুলে বসেছে শোষণের দোকান। জমি বর্গা থেকে ত্রিপল কেনা এবং লবণ বিক্রি সবকিছুই দালাল চক্রের নিয়ন্ত্রণে। যার পরিত্রাণ চান প্রান্তিক লবণ চাষিরা।

মহেশখালীর কালারমারছড়া এলাকার লবণচাষি আব্দ রহিম বলেন, জমির মালিকরা আমাদেরকে জমি বর্গা দেয় না। তারা দালালদেরকে জমি বর্গা দেয়। দালালদেরকে ২৫ হাজার প্রতি কানি বর্গা দিলে সে জমি দালালরা আমাদেরকে বর্গা দেয় ৩৫ হাজার টাকা। বাধ্য হয়ে আমাদের দালালদের কাছ থেকে জমি বর্গা নিতে হয়।

কুতুবদিয়ার লবণ চাষি সলিম উল্লাহ বলেন, দালাল চক্র প্রতিমণ লবণে ১০০ টাকা করে কমিশন নেয়। এছাড়াও পলিথিন কেনা বাবদও ২০ থেকে ৩০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের বাইরে গিয়ে পলিথিনও কেনা যায় না। সবই সিন্ডিকেটের দখলে।

মহেশখালীর চালিয়াতলীর লবণ চাষি ইব্রাহিম বলেন, যেখানে একমণ লবণ ৪০ কেজি। সেখানে দালাল চক্র আমাদের কাছ থেকে নেয় ৫০ থেকে ৫৩ কেজি লবণ। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হয় আমাদের। দুঃখ করে তিনি বলেন, কবে যে তাদের কাছ থেকে রক্ষা পাব। 

চলতি মৌসুমে প্রান্তিক লবণ চাষিরা মাঠ পর্যায়ে প্রতিমণ লবণ বিক্রি করেছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায়। কিন্তু এখন সে লবণের দাম নেমে এসেছে ৩২০ টাকায়। এই টাকার একটি অংশ নীরবে চলে যাচ্ছে দালালদের হাতে। তাই সরকারিভাবে জমি বর্গার মূল্য নির্ধারণের পাশাপাশি দালাল চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ ব্যবসায়ী নেতাদের।

এখন আবহাওয়া অনুকূলে হওয়ায় লবণ উৎপাদন বাড়লেও মণপ্রতি এক’শো থেকে দেড়’শো টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে লবণ। যাতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। আর বাকি মাসগুলোর মধ্যেই লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প করপোরেশন বিসিক।

তবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প করপোরেশন বিসিক বলছে; তালিকা করে প্রশাসনের মাধ্যমে দালাল চক্রকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হবে। 

কক্সবাজারস্থ বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, লবণ মিলারদেরও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যাতে তারা সরাসরি মাঠ পর্যায়ে গিয়ে চাষিদের কাছ থেকে লবণ ক্রয় করে। এতে হলে আর মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিতে পারবে না। তারপরও চেষ্টা করছি, মধ্যস্বত্বভোগীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা চলছে।

গেলবছর উপকূলের ৬৬ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ উৎপাদন করা হলেও এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার একরে। আর চাষির সংখ্যাও ৩৯ হাজার থেকে বেড়ে এখন ৪০ হাজারের বেশি।

হঠাৎ কেন কমলো দাম?।

তীব্র রোদ, এই রোদের মধ্যে চলছে লবণ মাঠ তৈরির কাজ। কেউ মাঠে লবণাক্ত পানি ঢুকাচ্ছেন আবার কেউ কেউ মাঠে লবণ উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে চাষিরা বলছেন, চলতি মৌসুমের ৪ মাস আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় কাঙ্খিত লবণ উৎপাদন হয়নি।

চাষিদের দাবি, কয়েকদিন ধরে মাঠে লবণ উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ অদৃশ্য কারণে মণপ্রতি লবণের দাম কমেছে এক’শো থেকে দেড়’শো টাকা। যা নিয়ে দুশ্চিতায় পড়েছেন তারা।

এদিকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প করপোরেশন বিসিক বলছে, আবহাওয়া চাষিদের অনুকূলে থাকলে আগামী দু’মাসের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাঙ্খিত লবণ উৎপাদিত হবে।

কক্সবাজারস্থ বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, মৌসুমের ৪ মাস পেরিয়ে গেছে চলতি মৌসুমে ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। আর চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টন লবণ। 

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.