প্রতীকী ছবি
দেশজুড়ে কমছে না হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার সংখ্যায় বাড়ছে দিন-দিন। রাস্তায় বের হলে গাড়িতে এতো পরিমাণ হাইড্রোলিক হর্ন এর শব্দ হয়, মনে হয় যেন কান ফেটে যাবে। যানবাহনে উচ্চ মাত্রার শব্দ সৃষ্টিকারি এই বিশেষ হর্নটির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।
ইতোপূর্বে হাইকোর্ট নির্দেশনা দেন যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধ করতে। হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি ও বিক্রি বন্ধেরও নির্দেশ প্রদান করেন হাইকোর্ট। কিন্তু তার কোন কার্যকারিতা নেই। এখনো উচ্চ শব্দের হর্ন বাজিয়ে ছুটছে যানবাহন। হর্ন বাজানোর ক্ষেত্রেও মানা হচ্ছে না এলাকাভিত্তিক নির্দেশিকা। অথচ মানুষের জন্য শ্রবণযোগ্য শব্দের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪০ ডেসিবেল। কিন্তু হাইড্রোলিক হর্ন শব্দ ছড়ায় ১২০ ডেসিবেল পর্যন্ত।
শব্দ দূষণ আজকাল শুধু নাগরিক সমস্যা নয়, এটি এখন রীতিমতো সারা দেশেরই সমস্যা। এটাকে ‘শব্দ-সন্ত্রাস’ বলেই অভিহিত করছেন ভূক্তভোগিরা। শুধু যানবাহনের হর্ণ নয়-বিভিন্ন স্থাণে নির্মাণ কাজের মিক্সার মেশিন, মাইক বাজানো কিংবা কলকারখানার আওয়াজ থেকেও সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় শব্দ দূষণ। শব্দদূষণ এক নীরব ঘাতক। একে এখন জীবনবিনাশী শব্দ সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। নানা সামাজিক-রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দে মাইকে গান বাজানো যেন একটা স্বাভাবিক ঘটনা। আর শীতকাল এলেই বিভিন্ন এলাকায় নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাইক বাজানো হয় উচ্চ শব্দে। ফলে শব্দ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
যানবাহনের হর্নের কথা তো বলাই বাহুল্য। বাইসাইকেল থেকে শুরু করে সব ধরণের যানবাহনেই ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ হাইড্রোলিক হর্ন। দেশে প্রচলিত আছে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬। বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আইন অমান্য করলে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
এছাড়া, মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ১৩৯ এবং ১৪০ নম্বর ধারায় নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহার ও আদেশ অমান্য করার শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে। হাইকোর্ট ২০০২ সালের এক আদেশে সব প্রকার যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ও বিরক্তিকর হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু বাস্তবে এই আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। সরকারি বিধিমালায় আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবল। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবল শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া আছে। কিন্তু সেটা মেনে চলা হচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে বিশেষজ্ঞগণ শব্দ দূষণকে শব্দ সন্ত্রাস বলে চিহ্নিত করেছেন। কারণ এটি সন্ত্রাসি কর্মকান্ডের চেয়েও ভয়াবহ।
দেশে বিভিন্ন কারণে উচ্চশব্দের উৎসগুলো যেমন বাড়ছে, তেমনি শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাও রয়েছে। শব্দ দূষণের কারণে মানবদেহে কানে কম শোনা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, অনিদ্রা, অমনযোগিতা, মানসিক সমস্যা, জলজ প্রজাতির প্রাণি ধ্বংস, উদ্ভিদের বৃদ্ধি হ্রাস, পশুর নার্ভাস সিস্টেমের ক্ষতি, গর্ভস্থ বাচ্চা নষ্ট বা বধির হওয়া, পশু-পাখির নিরাপদ আশ্রয় বিঘ্নিত হওয়াসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
আমরা চাই, যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন অপসারণসহ শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন যথাযথ কার্যকরের মাধ্যমে শব্দ সন্ত্রাস থেকে জাতিকে উদ্ধার করা হোক।
লেখক :সম্পাদক সাপ্তাহিক বৈচিত্র্যময় সিলেট, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh