ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র বন্দর নগরী ভৈরবে ছিনতাইয়ের ঘটনা এখন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব ছিনতাইয়ের অধিকাংশ ঘটনাই ঘটছে দিবালোকে। ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়রা মানববন্ধনসহ সভা সেমিনারও করেছে বহুবার। ছিনতাইকারীদের ছুড়িকাঘাতে আরও কয়েকজন নিহতসহ আহত হয়েছে আরো প্রায় অর্ধশতাধিক।
ছিনতাইকারীদের নির্মূলের দাবিতে মানববন্ধনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধন শেষে ভৈরবের আম জনতার পক্ষে অ্যাডভোকেট এমরান হোসেন ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের ভৈরব শহরের রেল স্টেশন রোড, কবরস্থান মোড়, নাটালের মোড়, রেলওয়ে ব্রিজ এলাকা, মনমরা, বঙ্গবন্ধু সরণি, নদী বাংলা সেন্টার পয়েন্ট, কালিকাপ্রসাদ, গাজিরটেকসহ আরো কয়েকটি স্থানে দিনে রাতে এ সকল অপরাধ মূলক কর্মকান্ড ঘটছে। কিছুদিন যাবত ছিনতাইয়ের অধিকাংশ ঘটনাগুলো ঘটছে দিনের বেলাতে। ছিনতাইকারীদের উৎপাতে দিনের বেলাতেও মানুষ বাহিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। ছিনতাইকারীরা শুধু টাকা-মোবাইল-গহনা ছিনিয়ে নেয় না, বাধা দিতে গিয়ে অনেক সময় ছিনতাইকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অন্তত বেশ কয়েকজন মারাও গেছেন। জখম হয়েছে আরো প্রায় অর্ধশতাধিক। ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাইনি আইনজীবী, শিক্ষক শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শ্রমজীবী থেকে শুরু করে গৃহবধূসহ ভিক্ষুকরাও। আইনি ঝামেলা এড়াতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় অনেকেই থানায় অভিযোগ করতে চাইনি বলে ছিনতাইয়ের অনেক ঘটনাই থেকে যায় পুলিশের অজানা। নিতে পারেনা কোন আইনি ব্যবস্থা। তারপরও খবর পেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময় ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। ভৈরবকে ছিনতাই মুক্ত করতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন, সভা সেমিনারসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করে থাকলেও নেই কোন প্রতিকার।
প্রথম আলো পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার সুমন মোল্লা বলেন, অন্যান্য এলাকার ছিনতাইকারীদের টার্গেট থাকে মানুষের সাথে থাকা টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া। ভৈরবের ছিনতাইকারীদের টার্গেট থাকে টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়ার পরও বুকের মধ্যে একটা ছুঁড়ি বসিয়ে দেওয়া। ভৈরবের মানুষ একসময় সন্ধ্যা হলে ভয় পেত , এখন দিনের বেলাতেও ভয় পায়। এ বাস্তবতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
ভৈরব নিরাপদ সড়ক চাই এর সাধারণ সম্পাদক আলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, কিছুদিন যাবত দিনের বেলায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতে থাকায় মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত কয়দিন আগে রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের দু জন শিক্ষার্থী নাটালের মোড় দিয়ে কলেজের বেতন দিতে আসছিল। এ সময় ছিনতাইকারীরা ওই শিক্ষার্থীদের সাথে থাকা নগদ টাকা ও বই খাতাগুলোও নিয়ে গেছে। এ ছাড়াও এ রাস্তায় ব্যবসায়ী, আইনজীবী,শিক্ষক শিক্ষার্থী, শ্রমিক সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ছিনতাইকারীদের হাতে হতাহতের শিকার হয়েছে। ভৈরবের ছিনতাই রোধ করতে হলে আমাদের সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ আমরা সবাই জানি কার এলাকায় কারা ছিনতাইকারী। তাদের আটক করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করতে হবে।
ভুক্তভোগীর মা মরিয়ম বেগম বলেন, আমার মেয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাকরি করে। কাজে যাবার সময় ছিনতাইকারীরা আমার মেয়ের মোবাইল ফোন ও টাক ছিনিয়ে নেয়। শুধু তাই নয় ছিনতাইকারীরা আমার মেয়েকে অনেক লাঞ্ছিত ও করেছে। এ ঘটনার পর থেকে আমার মেয়েটা ভয় পেয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।
ভ্যান চালক রমজান মিয়া বলেন, আমি প্রতিদিন ভোর বেলায় নাটালের মোড় দিয়ে ব্যবসায়ীদের মালামাল নিয়ে আসা যাওয়া করি। গত কয়েক দিন আগে আমার কাছে টাকা না পেয়ে তারা আমার ভ্যান গাড়ির চাকা কেটে দিয়েছে। ব্যবসায়ী বশির মিয়া জানান, গত দু দনি আগে ভোর বেলায় আমি মাল কিনতে ফেরি ঘাট যাবার সময় ছিনতাইকারীরা ছুঁড়ি ধরে আমার ২৩ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।
অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি ভোর সাড়ে ছয়টার সময় রাষ্ট্রপতির বাড়ির সামনে দিয়ে যাবার সময় ৫ জনের একটি ছিনতাইকারী চক্র হঠাৎ সামনে এসে আমার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে এবং আমাকে মারধরও করেছে।
ভুক্তভোগী আব্দুল আল মাসুদ ফয়সাল বলেন, একজন দম্পতিসহ আমরা তিন জন একটি রিকশা দিয়ে বাস স্ট্যান্ডে যাবার পথে নদীবাংলা পয়েন্টের সামনে পৌঁছালে তিনজন ছিনতাইকারীরা রামদা ও ছুঁড়ি নিয়ে আমাদের রিক্সাকে আটকে দিয়ে আমার সাথের লোকটিকে ছুঁড়ি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় সাথের মহিলার কান ও গলার স্বর্ণালংকারগুলো তারা নিজ হাতে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছে তবে এখনো কোন প্রতিকার পাইনি।
মানবন্ধনে অ্যাডভোকেট এমরান হোসেন বলেন, এ শহরে শুধু আমার নয় সকলের জানমালের নিরাপত্তা চাই। অসংখ্য ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাইকারীদের হাতে মানুষ মারা যাচ্ছে আবার অনেকেই জখম হচ্ছেন। উল্লিখিত র্স্পটগুলোতে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। ছিনতাইকারীদের হাতে এ পর্যন্ত আমরা অনেককেই হারিয়েছি। ছিনতাই রোধে পুলিশ বাহিনী কঠোর ভূমিকা পালন করবে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ সফিকুল ইসলাম বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের পুলিশ এ পর্যন্ত ৩০ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। যে সকল ছিনতাইকারী এখনো গ্রেফতার হয়নি তাদের বিরুদ্ধেও পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh