জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপদ ও সাশ্রয়ী মূল্যে আবাসন ব্যবস্থা অন্যতম। বাংলাদেশে আবাসন খাতে অর্থায়নের চাহিদা এখন প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা, রিহ্যাবের তথ্য মতে বিনিয়োগ হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
সম্ভাবনাময় আবাসন শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে, ২১ শতাংশ আর বাংলাদেশের শিল্প খাতের ১৫ শতাংশ আয় হয় এ আবাসন খাত থেকে। প্রায় ২০ লাখের বেশি মানুষ এ খাতে সংশ্লিষ্ট।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর এ মহানগরীতে ১০ শতাংশ হারে লোকসংখ্যা বাড়ছে। অথচ এ হারে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠছে না। রিহ্যাবের তথ্য মতে, প্রতিবছর এক লাখ ফ্ল্যাট তৈরি হলে বর্ধিত জনসংখ্যার আবাসন সমস্যার সমাধান হতো। কিন্তু বাস্তবতা বর্তমানে ভিন্ন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বেড়ে গেছে নির্মাণ সামগ্রীর দাম। এছাড়া জমির মূল্য বৃদ্ধি, ডলার সংকট, ব্যাংকগুলোর আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগে অনীহা, ব্যাংক সুদ বৃদ্ধি, গ্যাস- বিদ্যুতের সংযোগ সমস্যা, ড্যাপ, ফ্ল্যাট নিবন্ধন ফি বৃদ্ধির মতো সমস্যাগুলো আবাসন শিল্প খাতে এখন বড় সংকট।
এতো এতো সমস্যা নিয়ে সেবা সংযোগ প্রদানে দীর্ঘসূত্রিতা, ভূতুরে বিল এ খাতে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।
বাস্তবসম্মতভাবে ড্যাপ বাস্তবায়ন ও জলাধার আইন চূড়ান্ত না হওয়ার কারণে আবাসন শিল্প বিকশিত হতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের মাত্র ৫-৭ ভাগ আবাসন খাতে ব্যবহার হচ্ছে, তাই বিদ্যুাত সংযোগে নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা, কর অবকাশ সুবিধা, প্রবাসীদের বিনিয়োগ সুবিধা এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া আবাসন ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে রিহ্যাবকে সরকারের সাথে সমন্বয় করে আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন এখন সময়ের দাবি।
* রাজউকের সাথে সমন্বয় করে রিহ্যাব-রাজউক নকশা বিভাগ চালু করা, যাতে কম খরচে ঝামেলামুক্ত উপায়ে “ঙহব ঝঃড়ঢ় ঝবৎারপব” চালু করে নকশা অনুমোদন করা যায়
* রিহ্যাব সদস্যদের রুগ্ন প্রকল্পের তালিকা তৈরি করা, জমির মালিক ও ডেভেলপারদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাধান করা।
* দেশি-বিদেশি অর্থায়নে রিহ্যাব সদস্যদের জন্য তহবিল গঠন, যাতে স্বল্প সুদে সদস্যরা প্রজেক্ট লোন নিতে পারেন এবং এর সুবিধা ক্রেতাদের দিতে পারে।
* সরকার অনুমোদন স্বাপেক্ষে একটি রিহ্যাব ব্যাংক চালুর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
* প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ফø্যাট ক্রয় করলে তাদের রেমিটেন্স বেনিফিট দেয়া যেতে পারে।
* প্রকল্প চলাকালীন রিহ্যাব সদস্যরা স্থানীয় হয়রানির শিকার হলে তাদের নিরাপত্তা দেয়া।
* এনবিআর ও সরকারের সাথে আলোচনা করে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি কমানোর উদ্যোগ নেয়া।
* রিহ্যাব সদস্যদের মধ্যে সর্বোচ্চ রাজস্ব প্রদানকারী ১০ জনকে সিআইপি ঘোষণার উদ্যোগ নেয়া।
* যেসব আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এখনো সদস্য হয়নি, যাচাই বাছাই সাপেক্ষে তাদের সদস্য করা।
* নির্মাণ কাজে নিহত শ্রমিকদের জন্য একটি কল্যাণ তহবিল গঠন।
* ভূমি মালিক ও ফ্ল্যাট মালিকদের অভিযোগ দ্রুত নিস্পত্তিকরণে ব্যবস্থা।
* এছাড়াও রিহ্যাব সদস্যদের সুবিধার্থে একটি ইউটিলিটি সেল, একটি রিক্রিয়েশন ক্লাব এবং একটি বিশেষায়িত বিশ^বিদ্যালয় করা যেতে পারে।
এর ফলে সেদিন দূরে নয়, যখন আবাসন খাতে শৃঙ্খ্লা ফিরে আসবে, ফ্ল্যাট, ভূমি মালিক ও ডেভেলপারদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে বাংলাদেশের আবাসন খাত তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে।
লেখক : আবাসন বিশেষজ্ঞ
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh