প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁও জামদানি শাড়ীর জন্য বিখ্যাত। বাঙালি নারীর প্রধান পোশাক হলো শাড়ি। শাড়ি ছাড়া তাদের সৌন্দর্য যেন ফুটেই ওঠে না। যেকোনো উৎসবে-পার্বণে নারীর প্রথম পছন্দ হলো শাড়ি। শাড়ির আবার আছে অনেক ধরন। তার মধ্যে অন্যতম হলো জামদানি। এই শাড়ি আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ।
পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ৪৫টি গ্রামে জামদানি শাড়ির কারিগরেরা দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। গ্রামগুলোতে মহাজন ও খুচরা ক্রেতারাও ভিড় করছেন।
কারখানার মালিক ও কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার জামপুর, সাদিপুর ও কাঁচপুর ইউনিয়নের ৪৫টি গ্রামের ছয় শতাধিক পরিবার জামদানি শাড়ি তৈরির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে এ পেশায় নিয়োজিত কারিগরদের মধ্যে ৭০ ভাগ নারী ও ৩০ ভাগ পুরুষ। গত বৃহস্পতিবার সাদিপুর ইউনিয়নের বাইশটেক, বারগাঁও, কাজিপাড়া, শিংলাব, আন্দারমানিক, জামপুর ইউনিয়নের হাতুড়াপাড়া, তালতলা, কাঁচপুর ইউনিয়নের সুখেরটেক ও বেহাকৈর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কারিগরেরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী অর্ডার নিতে এবং তৈরি শাড়ি পাইকারদের বুঝিয়ে দিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
বাইশটেক গ্রামের জামদানির কারিগর মালা আক্তার, শাহানা বেগম, কবির হোসেন ও শিল্পীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পবিত্র রমজান মাসে তারা সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত সময় কাটান। শৌখিন ক্রেতারা পছন্দমতো নকশা করা শাড়ির অর্ডার কয়েক মাস আগেই দিয়ে রাখেন। এসব অর্ডারের শাড়ি ঈদের আগেই ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করতে হয়। তা ছাড়া ঈদে এ শাড়ির চাহিদা বেশি থাকায় অনেক কারিগর তাদের পুরো বছর ধরে তৈরি করা শাড়ি জমিয়ে রেখে মূল্য বেশি পাওয়ার আশায় এ মাসে বিক্রি করে থাকেন। কাজিপাড়া গ্রামের কারিগর রিনা বেগম বলেন, প্রতিটি শাড়ি তারা তিন হাজার থেকে শুরু করে আট হাজার টাকায় বিক্রি করেন। নকশা ভেদে একেকটি শাড়ি তৈরিতে এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে দুই মাস পর্যন্ত লেগে যায়।
শিংলাব গ্রামের কারিগর মো. খালেক বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা এ পেশার সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে রেশমের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তা ছাড়া কারিগরদের বেতন-ভাতা বাড়ানো যাচ্ছে না বলে অনেকে নতুন করে এ পেশায় যুক্ত হতে চাচ্ছেন না।
সোনারগাঁ সাদিপুর গ্রামের হানিফ জামদানি শাড়ি বুনতেন ও তাতী দিয়ে জামদানি বুনাতেন কিন্তু পোশায় না বলে অন্য পেশায় যুক্ত হন।তাই তাঁতীরা সরকার ও কর্তৃপক্ষের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।
জামদানি শাড়ির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ব্যবসায়ী সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, সোনারগাঁ ও রূপগঞ্জ এ দুই উপজেলায় বর্তমানে এ শাড়ি সবচেয়ে বেশি তৈরি হচ্ছে। প্রতি শুক্রবার ডেমরায় এ শাড়ির হাট বসে। এখান থেকে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে শাড়ি কিনে থাকেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামদানি শাড়ি সোনারগাঁও কারুপল্লী ও কারুশিল্প দোকান মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি মো. আব্দুল হালিম বলেন, মসলিনের পর আমাদের দেশের বয়নশিল্পের গৌরব ধরে রেখেছে জামদানি। এ শাড়ি কার্পাস তুলা দিয়ে তৈরি করে থাকেন কারিগরেরা।
জামদানি হাট
বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বে কদর রয়েছে যে শাড়ির তার নাম জামদানি। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে রাজধানী ঢাকার অদূরে ডেমরার জামদানি হাটের কথা অনেকেরই জানা। । এখানে বিক্রি হয় জামদানি শাড়ি। এটি এক অন্যরকম হাট। ভোর ৫টার দিকে শুরু হয় এই হাট।
জামদানী হাট মুলত (২) দুটি । একটি শীতলক্ষ্যা নদীর পাশে ডেমরা বাজারে। আর অন্যটি বসে নোয়াপাড়া বিসিক জামদানি পল্লীতে।
বহু বছর আগে নোয়াপাড়ায় প্রতি মঙ্গলবার জামদানির হাট বসত। প্রতিকূলতার কারণে এক সময় ডেমরা বাজারে চলে আসে। বর্তমানে ডেমরা ও নোয়াপাড়ায় হাট বসে প্রতি শুক্রবার। ( সপ্তাহে ১ দিন ) স্থানীয় কারিগর দ্বারা মনোরম ডিজাইনের তৈরি এ শাড়ির কদর রয়েছে সারা দেশে।
বেচাকেনা শুরু হয় খুব ভোর বেলায়, ভোর ৫ টায় শুরু হয়ে চলে সকাল ৭টা পর্যন্ত। পার্শ্ববর্তী এলাকার জামদানি তাঁতীরা এর বিক্রেতা।
তাঁতি ভাইয়েরা পুরো সপ্তাহ জুড়ে শাড়ি বুননের কাজ করে বৃহস্পতিবার সন্ধা/রাতের ভিতর কাজ শেষ করেন। সেগুলো নিয়েই তারা হাটে আসেন।
মুলত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারগণ তাদের শাড়ি কিনতে হাটে আসে। তারা প্রায় সবাই পরিচিত মুখ । নোয়াপাড়া,দক্ষিন রূপসী, মৈকুলী, পবনকুল, কাজীপাড়া,খাদুন, মোগরাকুল, সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আসেন তাঁতিরা। তারা প্রত্যেকে নিজেদের তৈরী শাড়ি হাটে নিয়ে আসে। আর তাঁতিরা সব চেয়ে বেশী তৈরি করে রেশমের হাফসিল্ক শাড়ি ।
সুতি এবং নাইলনের তৈরি শাড়ি ও হাটে পাওয়া যায়। ভালো মানের শাড়ি ৩ হাজার থেকে শুরু করে ৪/৫/৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
সময় সুযোগ মত আপনিও চলে আসতে পারেন জামদানির হাটে। সংগ্রহ করতে করতে পারেন পছন্দের শাড়ি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh