বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনে (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান মো.তাজুল ইসলাম (অতিরিক্ত সচিব)। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনে (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। দৈনিক সংবাদ সারাবেলার বিশেষ প্রতিনিধির মুখোমুখি হয়ে তিনি বিআরটিসির সাফল্য নিয়ে কথা বলেছেন।
তিনি জানান, সেবাদানকারী এই প্রতিষ্ঠান কিভাবে মাত্র আড়াই বছরে লস থেকে লাভে পরিণত হয়েছে। অথচ এই সফলতা ম্লান করতে একটি মহল মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালাতে তৎপর হয়ে গেছে। এ নিয়ে আমরাও সর্তক অবস্থানে রয়েছি।
যোগদানের পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় ‘আয় বৃদ্ধি, ব্যয় সংকোচন ও যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন’ এই ব্রত নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। তারই হাত ধরে একসময়ের জরাজীর্ণ ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বিআরটিসি আজ লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে আলোকিত হয়েছে চারিদিক।
জনগণের অন্তরে স্থান পেয়েছে বিআরটিসি
যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন ও পণ্য পরিবহন সেবায় ‘জনগণের অন্তরে স্থান পেয়েছে বিআরটিসি’। বছরের পর বছর লোকেসানে থাকা এই প্রতিষ্ঠানটি লোকসান কমিয়ে বর্তমানে লাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান। সুনামের এ ধারা অব্যাহত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম (অতিরিক্ত সচিব)। যিনি এখানে যোগদানের পর অনেকাংশে পাল্টে গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থাটির চিত্র। দক্ষ তত্বাবধায়নের ফলে বর্তমানে বেতন, বিভিন্ন ভাতা, প্রতেঙ্গায় পর্যটক বাস, দেশের ২০ স্থানে কারিগরি প্রশিক্ষণসহ দেশের ৬৩ জেলায় নিরবচ্ছিন্ন যাত্রী সেবা দিচ্ছে বিআরটিসি।
বিআরটিসি তার জনকল্যাণকর কাজের জন্য বিভিন্ন মহলে প্রশসিংত হয়েছে। যার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১-২২ অর্থবছরে এপিও বাস্তবায়নে ১ম স্থান, মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানদের শুদ্ধাচার পুরস্কার অর্জন করেছে। সরকারি বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের মতো লোকসানে ধুঁকতে থাকা সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
হাজার কোটি টাকা ঋণের ভারে ন্যুব্জ প্রতিষ্ঠানটি এখন লাভের মুখ দেখেছে। ধারাবাহিক মুনাফা করছে। গত তিন বছরে বহরে নতুন বাস ও ট্রাক যোগ না হলেও আয় আড়াই গুণ বেড়েছে। একসময় আট মাস বকেয়া পড়লেও ৮৭৩ জন নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের পরও টানা আড়াই বছর নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন বিআরটিসির কর্মীরা। অপরাধের শাস্তিও পেতে হচ্ছে।
বিআরটিসির বদলে যাওয়ার চিত্র পাওয়া গেল প্রতিষ্ঠানটির নথিতে। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পর মাঝে কয়েক বছর বাদ দিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত নিয়মিত লোকসান গুনেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাস ও ট্রাক কেনায় সরকারি ও বিদেশি ঋণের ১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। সরকারের কিনে দেওয়া বাস-ট্রাক চালিয়ে যে আয় হয়, তা দিয়ে চলতে হয় সংস্থাটিকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৫৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে বিআরটিসির খরচ ছিল ২৬৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সেই বছর লোকসান ৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ৯ মাস বেতন বকেয়া পড়ায় ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি রাজধানীর জোয়ার সাহারা ডিপোতে তালা দেন চালক-শ্রমিকরা। ১৬ মাসের বেতন বকেয়া পড়েছিল নারায়ণগঞ্জ ডিপোতে।
ঘুরে দাঁড়ানো শুরু ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাস, ট্রাক, ওয়ার্কশপ এবং প্রশিক্ষণ থেকে ৩৪৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে পরিচালন ব্যয় হয় ৩৪৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ফলে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা মুনাফা হয়। ওই মুনাফার কারণ ছিল ভারতের ঋণে (এলওসি) ৫৮১ কোটি টাকায় ৬০০টি বাস এবং ২১৭ কোটি টাকায় ৫০০টি ট্রাক কেনা।
পরিচালনায় মুনাফা হলেও তখন পর্যন্ত ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারেনি সংস্থাটি। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে বিআরটিসি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এই সময়ে বহরে নতুন বাস ও ট্রাক যুক্ত না হলেও ওই অর্থবছরে রেকর্ড ৪৭৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা আয় করে। বিপরীতে খরচ হয় ৪৪০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। মুনাফা হয় ৩৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
এই রেকর্ড ভেঙেছে ২০২২-২৩ অর্থবছরে। গত অর্থবছরে ৬৩১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা আয় করেছে সংস্থাটি। খরচ হয়েছে ৫৮৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। মুনাফা হয়েছে ৪৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও বিআরটিসি কীভাবে মুনাফা করছে, তা জানতে সংস্থাটির মতিঝিলের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এখানকার চেহারাও বদলে গেছে।
ভবনের নিচতলায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের মতো চকচকে অভ্যর্থনা কক্ষ তৈরি হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুবিশাল কক্ষটি নানা উপকরণে সুজ্জিত। কিংবদন্তি হওয়ার জন্য কারও স্বীকৃতির প্রয়োজন হয় না, ব্যক্তির অদম্য ইচ্ছা এবং কর্মই তাকে কিংবদন্তি হিসেবে গড়ে তোলে। বিআরটিসি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা এবং এর কর্মপরিবেশ দেশের অন্য সব প্রতিষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। শত প্রতিকূল পরিবেশ থাকা অবস্থায় এবং নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কীভাবে সততা, প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে জরাজীর্ণ ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে সার্বিকভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা যায় বর্তমান চেয়ারম্যান তার একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। বিআরটিসির সব ডিপো/ইউনিটকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে এবং বর্তমানে প্রধান কার্যালয় থেকে ডিপো হালকা মেরামত, ভারী মেরামত ও নিরাপত্তাসহ সব কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম মনে করেন, পরিবহন সেক্টরের মূল চালিকাশক্তি হলো গাড়ি। যদি গাড়ি ঠিক থাকে, গাড়ির পরিচালনা ও অপরেশন যদি ঠিক থাকে, ইনকাম যদি ঠিকভাবে হয় এর টাকা চুরি না হয়ে ফান্ডে জমা পরে, তবেই প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। তিনি আরো বলেন,আমি চেয়ারম্যান হিসেবে বিআরটিসিতে আসার আগে গণমাধ্যমে নিউজ হতো এই খাতে ডোবার আর কিছু বাকি নেই। সেই অবস্থার উত্তোরণ হয়েছে এখন। অর্থমন্ত্রণালয় থেকে কোনো টাকা না এনে প্রাতিষ্ঠানিক ইনকামের টাকা দিয়ে এখন আমরা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছি। কিন্তু আমাদের সাফল্যের পরেও কিছু বিশ্বাসঘাতক ও দুষ্কৃতকারী উন্নয়নের চাকা পেছনে টানছে, সাংবাদিকদের লেখনির মাধ্যমে তাদেরও টেনে ধরতে হবে।
এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই সাফ্যলের কারণে বিআরটিসির দুর্নীতিবাজ একটি মহল আমার উপর উঠে পড়ে লেগেছে। মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে আমাকে নিয়ে। এমনকি আমার সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh