× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

দিনে কোটি টাকার বেচা-কেনা, সংস্কার না করায় ভোগান্তিতে ব্যবসায়ীরা

জুলহাস আহমেদ, বরগুনা

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৪৪ পিএম

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটার বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) বরগুনার পাথরঘাটায় অবস্থিত। এখানে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাছ বেচা কেনা হয়। বিভিন্ন জেলায় মাছের চালান পৌছায় এখান থেকেই। তবুও বরফ সঙ্কট, ঘাটে পর্যাপ্ত টার্মিনাল না থাকা এবং জায়গা সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়ছেন আড়তদার-পাইকাররা।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের দেয়া তথ্য মতে, উপকূলীয় জেলেদের মাছ বিক্রি সহজ করতে

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের আওতায় ১৯৮১ সালে ৫ দশমিক ৪০ একর জমিতে বিশখলী নদীর পশ্চিম পাশে নির্মিত হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি। সেই থেকে বঙ্গোপসাগর, বলেশ্বর, বিষখালী ও পায়রা নদীসহ তৎসংলগ্ন নদ-নদীর মাছ পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাটে এসে বিক্রি করা হয়। এখান থেকে প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব আয় করে সরকার।

সূত্রে আরও জানা যায়, উপকূলীয় এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এখন আড়তদার রয়েছেন শতাধিক। পাইকারের সংখ্যাও প্রায় ২ শতাধিক। এখান থেকে দেশের প্রায় ২০টি জেলায় মাছ রপ্তানি করা হয়। এগুলোর মধ্যে যশোর, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, রংপুর, ফরিদপু উল্লেখযোগ্য। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, দিন দিন ট্রলার-আড়তদার বাড়ায় চাহিদার তুলনায় বিএফডিসির শেডে জায়গা কম হয়ে গেছে, ফলে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নিচে মাছ কেনা-বেচা ও প্যাকেজিং করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ঘাটে মাছ নামাতে ও প্যাকেজিং করতে ভোগান্তি হচ্ছে। অতিরিক্ত মাত্রায় লোডশেডিংয়ের কারণে পর্যাপ্ত বরফ উৎপাদন হচ্ছেনা কলগুলোতে, তাই ট্রলারেই পঁচে যাচ্ছে মাছ। এদিকে অবতরণ কেন্দ্রে মাত্র দুটি টার্মিনাল আছে, এগুতে সর্বোচ্চ ৮-১০ টা ট্রলার থাকতে পারবে। কিন্তু প্রতিদিন ঘাটে আসছে ৫০-৬০ টি ট্রলার, যেগুলোকে অন্য কোথাও নোঙর করে রাখতে হয়। ফলে মাছ খালাস হতে বিলম্ব হয়। এসব সমস্যার সমাধান হলে লাভবান হবে ব্যাবসায়ীরা, অধিক রাজস্ব পাবে সরকার। 

হাবিব, জাকির, লতিফসহ কয়েকজন জেলে বলেন-প্রতিদিনই বাড়ছে ট্রলার, বাড়ছে জেলের সংখ্যাও। কিন্তু বাড়ানো হয়নি বিএফডিসির টার্মিনাল। দুটি টার্মিনালে লোড লেগেই থাকে।একারনে মাছভর্তি ট্রলার ঘাটে ভিড়তে ও আনলোড করতে আমাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অপেক্ষা করতে করতে কখনো মাছ পচে যায়। তাই পচার হাত থেকে রক্ষা পেতে আমাদের কিনতে হচ্ছে বাড়তি বরফ। লোডশেডিংয়ের কারণে চাহিদা মত বরফও পাচ্ছি না। আমাদের ভোগান্তির কোন শেষ নেই।

আবদুল হাকিম নামে এক পাইকার বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে থেকে এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ মাছের ব্যবসা করি। আড়তদারদের থেকে ইলিশ মাছ কিনে ঢাকা, রাজশাহসহ কয়েকটি জেলায় পাঠাই। ব্যবসার শুরুতে পাইকার-আড়তদার কম থাকায় কেন্দ্রের ভবনে একটু জায়গা পেতাম। দিনের পর দিন ব্যবসার পরিধি বেড়ে যায়, বেড়ে যায় ব্যবসায়ীর সংখ্যাও। একারনে এখানে মাছ প্যাকেজিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার সুলতান আলী সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনে দেশের অন্তত ৪০টি জেলায় মাছ বিক্রি করি। মাছ কিনে মাপতে, বরফ দিয়ে আবার প্যাকেট করতে প্রচুর জায়গার দরকার হয়। এরপর সেসব মাছ ট্রাকে উঠাতেও প্রচুর স্থান দরকার। কিন্তু স্থান সংকটে এখন চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। তাই ভবন দিতে দেরি হলেও ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি দূর করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ১০টি টলঘর নির্মাণ করে দিলে উপকৃত হবে ব্যবসায়ীরা।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসেন বলেন, রাজস্ব নিতে তারা ভুল করে না। আমরাও একদম ঠিকমত রাজস্ব দেই। এখান থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়। কিন্তু একাধিকবার আমাদের সমস্যার কথা লিখিতভাবে অবতরণ কেন্দ্রের কর্তাদের কাছে জানালেও কোন সুরাহা হয়নি। আমাদের সমস্যার সমাধান হলে আরও ব্যবসায়ী বাড়ত, সরকারেরও বেশি রাজস্ব আয় হত। ভোগান্তির কারনে অনেকেই অন্য কোথাও গিয়ে ব্যবসা করছেন। 

এ বিষয়ে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জিএম মনসুর শিকদার সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, বিএফডিসিতে অকশন শেড ও প্যাকেজিং শেড রয়েছে। তবে পাইকাররা এক শেডে গিয়ে আরেক কাজ কাজ করে। পল্টুন ও জায়গার ব্যাপারে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

প্রসঙ্গত, পাথরঘাটার এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লক্ষ থেকে ৬ কোটি টাকার মাছ কেনা বেচা হয়। জেলেদের বিক্রি করা মাছের প্রতি ১০০ টাকায় ১ টাকা ২৫ পয়সা রাজস্ব পায় সরকার। গতমাসে এখানে ৪৪০ মেট্রিক টন মাছ ক্রয় বিক্রয় হয়েছে। সেখান থেকে ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। 

চলতি মাসে এপর্যন্ত প্রায় ৪০০ মেট্রিক টন মাছ কেনা বেচা হয়েছে, এখান থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২৬ লক্ষ টাকা। এই অবতরণ কেন্দ্রে আজ সাড়ে ১১ মেট্রিক টন মাছ ক্রয় বিক্রি হয়েছে। এখান থেকে আজ একদিনে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮০ হাজার টাকা।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.