কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জালালপুরে ব্রিটিশ শাসন আমলে ইংরেজ বেনিয়ারা প্রতিষ্ঠা করে নীল কুঠি। যা উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় নীল চুল্লী। জালালপুরে এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই কুঠির চুল্লির ধ্বংসাবশেষ। ১৮৮৬ সালে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় নীল চুল্লির মধ্যে এটি ছিল উল্লেখযোগ্য।
বর্তমানে সংরক্ষণের অভাবে চুল্লিটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। স্থানীয় সচেতন মহল এ চুল্লিটি সংরক্ষণসহ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন।
যেখানে আর্তমানবতার ভাষা স্তব্ধ। যেখানে অত্যাচার অবিচারের দাপট ছিল আকাশচুম্বি। এখনো কালের সাক্ষী হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে এই নীল কুঠির। পরাধীনতার রজ্জু যে কত নিষ্ঠুর এই নীল কুঠিরই তার দৃষ্টান্ত । নতুন প্রজন্ম ভুলতে বসেছে এই ইতিহাস। পরাধীনতার আবদ্ধতা কত কঠিন এবং নির্মম তার জলন্ত সাক্ষী এই কুঠির৷ স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায় এটি ধ্বংসের পথে। সংরক্ষণের জন্য নেই উদ্যোগ৷
ইতিহাস সূত্র জানা যায়, কৃষকদের বেত্রাঘাতে পিঠের চামড়া তুলে নিয়ে কোমড়ে দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে রাখতো গাছের ডালে, সারাদিন মাঠে মাঠে নীল চাষ করে শেষে কানমলা দিয়ে শুন্য হাতে ফেরত পাঠানোর সাক্ষী এই জালালপুরের নীলকুঠি। হযরত শাহ সুলতান হাফিজ ইরানী (রঃ) মাজার অঞ্চলে নীল বিদ্রোহের নেতৃত্বের মূল ঘাটি ছিলো।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরা ইটের শক্ত স্তম্ভ আজো আছে। পিছনেই রয়েছে কুঠির দেয়াল। যা ধ্বংসের পথে। সামান্য কিছু দেয়াল রয়েছে। এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইট। একসময়ের খরস্রোতা নদীর কুল ঘেঁসে স্থাপিত হয়েছিলো এই কুঠির। বিশেষ করে নীল তৈরি করতে অধিক স্বচ্ছ পানির প্রয়োজন হতো। নদী থেকে সেই পানি সরবরাহ করা হতো। নদী পথেই আনা নেওয়া হতো মালামাল। বড় বড় জাহাজ ও স্টিমার আসতো এই পথে। কালের বিবর্তনে সেই নদী আজ নেই৷ তবে রয়েছে একটি বিল। স্বচ্ছ পানির সুন্দর এই বিলটি কুঠির নামানুসারে কুঠির বিল হিসাবে আজো পরিচিত।
স্থানীয় ইউপি সদস্য দিদারুল ইসলাম বলেন, বাপ দাদাদের থেকে শুনতাম এই নীল কুঠির বিষয়ে। তখন এখানে একটি বাজার ছিলো৷ আজো চুল্লীতে বিশাল কড়াই রয়েছে৷ এটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান বলেন, জালালপুরের নীল কুঠির এ চুল্লিসহ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শীঘ্রই পরিদর্শন করে খোঁজ খবর নিয়ে এ ব্যাপারে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে দ্রুতই অবহিত করা হবে।