× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

রং ও সুতার দাম বৃদ্ধিতে লোকসানের মুখে সিরাজগঞ্জের তাঁতীরা

শফিক মোহাম্মদ রুমন, সিরাজগঞ্জ

০৯ জুন ২০২৩, ০৮:১২ এএম

লোডশেডিং, রং-সুতার দাম বৃদ্ধিসহ লোকসানে জর্জরিত হয়ে সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্য তাঁত কারখানাগুলোতে ধস নেমেছে। ফলে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছে।

সুতার বাজারমূল্য বাড়ার সঙ্গে কাপড় উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। যার কারণে এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে তাঁত মালিকদের। তাঁত সমৃদ্ধ এই জেলায় ৩ লাখ তাঁত কারখানার ইতোমধ্যে ১ লাখ বন্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ার লুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।

জানা যায়, ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানা মালিকেরা ডিজেল চালিত জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ দিয়ে তাঁত কারখানা সচল রাখার চেষ্টা করে। তবে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁত মালিকদের বিদ্যুৎ বিলও দিতে হচ্ছে, আবার জেনারেটরও চালাতে হচ্ছে। এতে শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা উৎপাদনে অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকেরা। পরিবার নিয়ে কোনোমতে দিন কাটছে তাদের।

তাঁত শ্রমিকেরা জানান, মহাজন কাপড় বিক্রি করতে পারে না, তাই কারখানার শ্রমিকদের কাজে আসতে নিষেধ করা হচ্ছে। আগে সারা দিনে একজন শ্রমিক ৭০০-৮০০ টাকার কাজ করতেন। এখন ৩০০-৪০০ টাকার কাজ করছেন। যেখানে ১০ জন শ্রমিক কাজ করত. এখন সেখানে ৩ জন শ্রমিক কাজ করছে। এ অবস্থায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে শ্রমিকেরা।

তাঁত মালিকেরা জানান, জেলায় প্রায় তিন লাখ তাঁত কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারখানায় শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা তৈরি হয়। সুতায় রং দেওয়া, শুকানো, সুতা তৈরি ও কাপড় উৎপাদনের জন্য প্রতি তাঁতে ৩-৪ জন শ্রমিক প্রয়োজন। এতে মালিক কর্মচারী মিলে প্রায় চার লাখ শ্রমিক এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। 

জেলার বেলকুচি, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, কামারখন্দ, এনায়েতপুর, রায়গঞ্জ, চৌহালী ও কাজীপুরে কম বেশি তাঁত কারখানা রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি হয়। উল্লাপাড়া, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুর, পাঁচিল বাজারে সপ্তাহে দুই দিন কাপড়ের হাট হয়। এই হাটে বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসে। বর্তমানে যে পরিমাণ উৎপাদন হচ্ছে, তাও হাট-বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। যে কারণে বাধ্য হয়ে অনেকে তাঁত কারখানা বন্ধ রাখছে। আবার বর্তমান সুতার বাজারমূল্য যা রয়েছে তাতে কাপড় উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। এতে করে এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।বেলকুচি লাকী সেভেন কটেজের মালিক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে তাঁতের দুর্দিন চলছে। তাঁত প্রায় বন্ধের পথে। সুতার দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। সে তুলনাই কাপড়ের দাম বাড়েনি। শ্রমিকদের ঠিকমতো বিল দিতে পারি না। এই শিল্পের ওপর সরকারের নজর নেই। সরকারের কাছে দাবি এই তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে হলো রং-সুতাসহ সকল কাঁচামালের দাম কমানোর। তাহলে এই শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব।’ 

উপজেলার তামাই গ্রামের শ্রমিক শাহ আলম বলেন, ‘তাঁত শিল্পের অবস্থা ভালো না। ঈদের আগ থেকেই মহাজনের কেনাবেচা ভালো না। মহাজন কাপড় বেচতে পারে না এ জন্য কারখানার শ্রমিকদের কাজে আসতে নিষেধ করেছে। প্রতিদিন ৭০০-৮০০ টাকা কাজ হয়েছে। এখন ৩০০-৪০০ টাকা হয় না। বিল চাইলে কয় কাপড় বেচতে পারিনি। আমরা কি করি। কীভাবে সংসার চলে।

বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ার লুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা শাখার সভাপতি হাজী বদিউজ্জামান বলেন, ‘এই জেলাকে তাঁত কুঞ্জু হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জেলায় ৩ লাখ তাঁত রয়েছে। এই তাঁতে আমরা শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা তৈরি করে থাকি। করোনার সময় তাঁতের ব্যবসার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরবর্তীতে আশা ছিল আমাদের ব্যবসাটা ভালো হবে। কিন্তু করোনার পরে তাঁত শিল্পের জন্য যে সমস্ত কাঁচামাল রয়েছে রং, সুতা, তুলা সবকিছুর দাম দ্বিগুণ হয়েছে। যার কারণে কাপড় উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। এটি একটি বড় সমস্যা।’  

তিনি বলেন, ‘অনেক শ্রমিক ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় চলে গেছে। অনেকে দেশের বাইরেও চলে গেছে। যে কারণে শ্রমিক সংকট চলছে। আরেকটি কারণ রয়েছে, ঘন ঘন লোডশেডিং। বিদ্যুতের সমস্যা। জেনারেটর দিয়ে তাঁত চালাইতে গেলে দেখা যায় ১ লিটার তেলের দাম ১১০ টাকা। জেনারেটর দিয়ে কাপড় উৎপাদন করতে গেলে খরচ বেশি হচ্ছে। যে কারণে কাপড় উৎপাদন করতে পারছি না।’  

তিনি জানান, সবকিছু মিলেই আজ তাঁত শিল্প ধ্বংসের পথে। জেলায় ৩ লাখ তাঁতের মধ্যে ১ লাখ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। এর মূল কারণ শ্রমিক সংকট ও কাঁচামালের দাম বেশি। সরকারক যদি তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে চায় তাহলে তাঁত মালিকদের জন্য তাঁত ব্যাংক করা প্রয়োজন। এই ব্যাংকের মাধ্যমে তাঁতিরা স্বাবলম্বী হতে পারবে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.