× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বিশ্ব পরিবেশ দিবস

প্লাস্টিকমুক্ত ভবিষ্যৎ গড়ার অঙ্গীকার

দিলশাদ জাহান

০৫ জুন ২০২৩, ০৮:৩৮ এএম

জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের এক প্রতিকূল সময়ে বসবাস করছি আমরা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব ও মানুষের নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে আজ হুমকি মুখে আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশ। 

পরিবেশ দূষণ রোধ ও পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ পালন করা হয়। দিবসটি আমাদের পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষা এবং এর উপর মানব সৃষ্ট কার্যকলাপের নেতিবাচক প্রভাব কমানোর জন্য কার্যকর ভূমিকা পালনে অনুপ্রাণিত করে।

প্রতিবছর দিবসটি পৃথক প্রতিপাদ্য ও স্লোগান নিয়ে পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে,’ এবং স্লোগান হচ্ছে ‘সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ।’ আমাদের প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমাতে এবং সঠিকভাবে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পদক্ষেপ নিতে আহ্বান করে। এবার পরিবেশ দিবসের আয়োজক দেশ পশ্চিম আফ্রিকা দেশ আইভরি কোস্ট।

যদিও এবছর ৫০তমবারের মতো বিশ^ব্যাপী পালিত হচ্ছে, তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে পাঁচ বছর আগেও প্লাস্টিক দূষণ প্রতিহত করার লক্ষ্য নিয়ে দিবসটি পালন করা হয়েছিল। পাঁচ বছর পার হলেও প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমাতে প্রকৃতপক্ষে ব্যর্থ হয়েছি আমরা। অর্থাৎ পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো এখনো চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমাদের নিত্য ব্যবহার্য যে দ্রব্যটি পরিবেশ দূষণের পেছনে অন্যতম বড় অবদান রাখছে তা হলো প্লাস্টিক। আমরা প্লাস্টিকের বিভিন্ন ব্যবহার করছি এবং পরিবেশকে দূষিত করছি। বর্তমানে পরিবেশ বিপর্যয়ের একটি অন্যতম উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে প্লাস্টিক দূষণ, যা আমাদের স্থলভাগ, সাগর-মহাসাগর এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন, ব্যবহার, নিষ্কাশন, পরিশোধনসহ সকল কার্যকলাপে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেনসহ বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন ও নির্গত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি করছে। 

বিশ্বব্যাংকের ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, প্লাস্টিক দূষণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দেশসমূহের মধ্যে অন্যতম। অপর্যাপ্ত ও অপ্রতুল প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যার একটি প্রধান কারণ। শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকায় মাথাপিছু বার্ষিক প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয় ২২.২৫ কেজি। 

বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্লাস্টিক পণ্য (ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৯, যা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন, আমদানি, বিক্রয় এবং ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে।

তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন কাজে দিনদিন বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের প্রতিনিয়ম ব্যবহার করা খাবার প্লেট, জগ, গ্লাস, থালা, বাটিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় জিনিসই তৈরি হয় প্লাস্টিক দিয়ে। বিশেষত, প্লাস্টিক জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি বিপজ্জনক হুমকি। প্লাস্টিক বেশিরভাগই তেল এবং গ্যাস থেকে উৎপাদিত হয়। উভয়ই জীবাশ্ম জ্বালানি। এছাড়া প্লাস্টিক কার্বন ফুটপ্রিন্টের প্রভাব রাখে। প্লাস্টিকের উৎপাদন, ব্যবহার, নিষ্কাষণসহ পুরো জীবনচক্রে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হয়।

প্লাস্টিক পদার্থটি পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকারক। এক গবেষণায় দেখা গেছে সমুদ্রে প্রতিবছর ৮০ লাখ টনেরও অধিক পরিমাণ প্লাস্টিক দূষণ হয়। যার কারণে হাজার হাজার সামুদ্রিক জীব মারা যাচ্ছে।

তাহলে প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে আমরা কীভাবে পদক্ষেপ নেব?

রিসাইক্লিং বা পুনর্ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিক দূষণ রোধ করার সবচেয়ে কার্যকরী সমাধান। প্লাস্টিক বর্জ্য কমানোর ব্যবস্থার উন্নতির জন্য আমাদের কম প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে, আরও পুনর্ব্যবহার করতে হবে এবং উদ্ভাবনকে সমর্থন করতে হবে। প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে ভোক্তাদের আচরণ পরিবর্তন করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তাই পরিবেশ দূষণের রোধে প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার কমিয়ে আনার ব্যাপারে সবাইকে সচেতনতার পাশাপাশি তৎপর হতে হবে। বিশেষ করে, ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্য যত্রতত্র না ফেলে এগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। আমাদের সবার এ বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমরা যত দ্রুত প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার থেকে নিজেদের বিরত রাখব, তত দ্রুত প্লাস্টিক-দূষিত পরিবেশ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারব। 

গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের অর্ধেক জায়গাতেই সমুদ্রের বাসকারী কচ্ছপেরা মারা যায় প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে। স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ে পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন ক্লাব খোলা যেতে পারে। পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যেমন প্লাস্টিক দূষণের সমাধান নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শিশু, কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীদের যুক্ত করতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মেও মাঝে সচেতনতা বাড়বে। তারা পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা পালন করবে। প্লাস্টিক দ্রব্য অপসারণ, প্লাস্টিকের বদলে পরিবেশবান্ধব অন্যকিছু ব্যবহারে পরামর্শ প্রদান করে জনসচেতনতা  তৈরি করা যেতে পারে। 

আমরা বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠানে পিভিসি ব্যানার তৈরি করি, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বোতলজাত পানি পরিবেশন করি, যা মোটেও পরিবেশবান্ধব না। একটু সচেতন হলেই আমরা এগুলোর ব্যবহার বন্ধ করে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারি। যেমন, পিভিসি ব্যানারের পরিবর্তে কাপড়ের ব্যানার, প্লাস্টিকের বোতলে পানি পরিবেশন করার পরিবর্তে কাঁচের পানির পাত্র রাখতে পারি। খাবার পরিবেশনে প্লাস্টিক ব্যবহার না করি।

সমাজের একজন দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে, আমরা সকলেই নিজেদের জীবনধারা পরিবর্তন করে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে অবদান রাখতে পারি। যেমন: পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ, পানির বোতল প্রভৃতি ব্যবহার করা, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পণ্য বর্জন এবং প্লাস্টিক পণ্যসমূহকে সঠিকভাবে পুনর্ব্যবহার করা। 

দ্রুত প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার থেকে বিরত রাখার মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি প্লাস্টিক দূষণমুক্ত পরিবেশ উপহার পারব। সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে আমরা সহজেই একটি পরিচ্ছন্ন ও টেকসই পৃথিবী গড়ে তুলতে পারি। আসুন, এ বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে প্লাস্টিকমুক্ত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে অঙ্গীকার করি।

লেখক: উন্নয়নকর্মী

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.