× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পূর্বপুরুষদের খুঁজে বের করাই তার পেশা!

সংবাদ সারাবেলা ডেস্ক

০৫ জুন ২০২৩, ০২:২৮ এএম

"প্রতিবার যখন কোনো নিখোঁজ পরিবারকে খুঁজে পাই, তখনই আমি ভীষণ আবেগপ্রবণ ও উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ি। আমার মনে হয় এটা আমার একটা অর্জন", বলছিলেন ৭৬ বছর বয়সী শামসু দীন। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর বাসিন্দা শামসু দীন বিগত ২৫ বছর ধরে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের পরিবারগুলোকে ভারতে তাদের হারিয়ে যাওয়া আত্মীয়স্বজনকে খুঁজে পেতে সাহায্য করে আসছেন। সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত এমন ৩০০ মানুষকে সাহায্য করেছেন তিনি। 

একসময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে এদের পূর্বসূরিরা এসেছিলেন চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক হিসেবে। ১৮০০ শতক এবং ১৯০০ শতকের শুরুর দিকে তারা এ অঞ্চলে এসেছিলেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় দেশে ফেলে আসা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

একসময় পেশায় ভূগোলের শিক্ষক শামসু দীন এখন একজন বংশতত্ত্ববিদ। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে আসা ভারতীয় চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের উত্তরসূরিদেরকে তিনি সাহায্য করছেন তাদের হারানো পরিবার ও প্রিয়জনদের খুঁজে পেতে।

শামসু দীন যখন জানতে পারেন যে তার দাদা মুনরাদিন একজন চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক হিসেবে ক্যারিবিয়ানে এসেছিলেন, তখন তিনি এই প্রক্রিয়া এবং এটির ফলে পরিবারগুলোর উপর কী প্রভাব পড়েছে- তা নিয়ে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। ১৯৭২ সালে শামসু দীন ত্রিনিদাদের রেড হাউজে যান (যেটিকে পরবর্তীতে আইন বিষয়ক মন্ত্রণালয় বানানো হয়) এবং শত শত নথিপত্রের স্তূপের মধ্যে সেই রহস্য মানব- নিজের দাদার সম্পর্কে তথ্য খুঁজতে থাকেন। চার ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর তিনি পোকায় কাটা একটা বইয়ের শেষ পাতায় তার দাদার নাম খুঁজে পান এবং জানতে পারেন, মুনরাদিন ১৮৫৮ সালের ৫ জানুয়ারি কলকাতা ত্যাগ করেন এবং একই বছরের ১০ এপ্রিল ত্রিনিদাদে পৌঁছান।

শামসু দীন বলেন, "আমরা সবাই জানতাম যে তিনি শিক্ষিত ছিলেন এবং ইংরেজিতে কথা বলতে পারতেন। মুরানদিন আখের খামারে কাজ করতেন। পরবর্তীতে তিনি অনুবাদক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর মুরানদিন শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন এবং অবশেষে দুটি দোকান চালু করেন। তার দুই স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান ছিল। যে বাড়িতে তিনি থাকতেন সেটা উত্তরাধিকার সূত্রে তার সন্তানরা পেয়েছিল, কিন্তু পরে সেই বাড়িটা আগুনে পুড়ে যায়।"

শামসু দীন নিজের চেষ্টায় তার মায়ের বংশধরদেরও খুঁজে বের করেন। ভারত থেকে ত্রিনিদাদে আসা তাদের পরিবারের সর্বশেষ পূর্বপুরুষ ছিলেন ভোনজি। তিনি ভোনজির আত্মীয়দের সাথেও যোগাযোগ করেন। শামসু দীন হয়তো ভূগোলের শিক্ষক হয়েই জীবনটা পার করতেন, কিন্তু নিখোঁজ আত্মীয়স্বজনের সন্ধান দেওয়ার কাজে তার সফলতা ত্রিনিদাদে ভারতীয় হাইকমিশনের নজর কাড়ে। তারা তাকে ১০টি হিন্দু ও ১০টি মুসলিম পরিবারের আত্মীয়স্বজনদের সন্ধান দিতে বৃত্তি দেন।

এরপরে শামসু দীন এই কাজটিকেই নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেন এবং বংশতত্ত্ববিদ হিসেবে কাজ শুরু করেন। ত্রিনিদাদ ও ভারত, দুই দেশেরই গবেষক দলের সহায়তা নিয়ে এই কাজগুলো করেন এবং এর জন্য পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন তিনি। শামসু দীন যে পরিবারগুলোকে মিলিয়ে দিয়েছেন তাদের স্বজনদের সঙ্গে, তাদের মধ্যে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাসদেও পান্ডে এবং কমলা পেরসাদ বিশ্বেস্বরের পরিবারও রয়েছে।

শামসু দীন জানান, তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের চাইতে বর্তমানে মানুষের সন্ধান পাওয়া কিছুটা সহজ, কারণ এখন ডিজিটাল ম্যাপ রয়েছে এবং ঐতিহাসিক অনেক দলিলপত্রই সহজলভ্য। কিন্তু তবুও চ্যালেঞ্জ রয়েই যায়। তিনি জানান, প্রতিটি কেসেই তিনি শতকরা ৮০ ভাগ সফলতা পেয়েছেন।

তিনি আরও জানান, অবসরে গেলেও তিনি এই কাজটা ছেড়ে দিতে চান না। বরং অবসর নেওয়ার পরেও তিনি ১৯৯৬ সালে ছয় মাসের জন্য ভারতে গিয়েছিলেন এবং আরও ১৪টি পরিবারের সন্ধান বের করেছেন।



Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.