× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

আশুগঞ্জ ধানের মোকামে দিনে ৮ কোটি টাকার বেচা-কেনা

আবুল হাসনাত অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

২২ মে ২০২৩, ০৫:০১ এএম

দেশে ধানের অন্যতম বড় মোকাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের মেঘনাপাড়ের বিওসি ঘাট। বৈশাখ মাসের শুরু থেকে মোকামে ধান আসতে শুরু করে। ধান কাটার মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে ওঠে এই মোকাম। প্রতিদিন এই মোকামে ৬০-৭০ হাজার মণ ধান বেচাকেনা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের হাওরাঞ্চলের উৎপাদিত ধানের সবচেয়ে বড় হাট বিওসি ঘাটে বসে। প্রতিদিন শতাধিক ধানবোঝাই নৌকা ঘাটে ভেড়ে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে ধানের বেচা কেনা। বৃহত্তর সিলেট বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ বিভিন্ন এলাকার ধান এই মোকামে আসে। বৈশাখ মাসের প্রথম দিন থেকেই আশুগঞ্জ মেঘনাপাড়ের ধানের মোকামে নতুন ধান আসতে শুরু করে। ১৫-২০ দিন আগেও মোকামে ব্যাপারীরা ভেজা ধান আনতেন। কিন্তু তাপমাত্রা বাড়ায় মোকামে শুকনা ধানের সরবরাহ বেড়েছে। যা এখনো চলছে। 

এই মোকামে ধান বিক্রি করতে আসা কয়েকজন ব্যাপারী বলেন, মোকামে ব্রি-২৮ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১ হাজার ১৬০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা। ব্রি-২৯ ধান প্রতি মণ ১ হাজার ৯০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০০ টাকা এবং মোটা ধান ৯৬৫ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশ ব্যাপারী জেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চলে গিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে আশুগঞ্জ মেঘনাপাড় ঘাটে ধান ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।

গত শনিবার এই মোকামে ধান কিনতে আসা মাঞ্জু মিয়া বলেন, ‘১ হাজার মণ ব্রি-২৮ ও ১ হাজার ৩০০ মণ ব্রি-২৯ ধান কিনেছি। ব্রি-২৮ ধান প্রতি মণ ১ হাজার ১৯৫ টাকা এবং ব্রি-২৯ প্রতি মণ ১ হাজার ৯৫ টাকা দরে কিনেছি।’

সরাইল উপজেলার অরুয়াইলের ব্যাপারী সালাম মিয়া বলেন, সিলেটের সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থেকে ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ ধান কিনে আশুগঞ্জ মোকামে এনেছি। ধানের দাম বেড়েছে। কৃষকেরা খুশি। তবে, ব্লাস্ট (ছত্রাক) রোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সর্বত্র বেশির ভাগ জমিতে ধানে চিটা পড়ে যাওয়ায় এবার ব্রি-২৮ ধানের ফলন কম হয়েছে। এতে কৃষকদের সর্বনিম্ন চল্লিশ হাজার টাকা হতে অর্ধলক্ষাধিক টাকার উৎপাদন খরচ লোকসান হয়েছে। অনেকেই জমির ধান না কেটে গাছ পুড়িয়ে দিয়েছেন। 

কিশোরগঞ্জের নিকলী থেকে ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের শুকনা ধান নিয়ে মোকামে এসেছেন আরেক ব্যাপারী আবু বকর। তিনি বলেন, দামদর হচ্ছে। ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে ব্রি-২৮ বিক্রি করব।

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থেকে ব্রি-২৮ ও ২৯ এবং মোটা ধান নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী আজিজুল হক। তাঁর কাছ থেকে উপজেলার সোহাগপুরের নাজমুল হোসাইন এসব ধান কিনেছেন। তাঁরা জানান, মোটা ধান ৯৬৫ টাকা, ব্রি-২৮ ধান ১ হাজার ১৬০ টাকা এবং ব্রি-২৯ ধান ১ হাজার ৯০ টাকা মণ দরে বেচাকেনা হয়েছে।

সরাইলের পানিশ্বর এলাকার ব্যাপারী শাহ আলম মিয়া সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থেকে ১ হাজার ৮০০ মণ  ব্রি-২৮ ও ২৯ ধান বিক্রি করতে নৌকা নিয়ে আশুগঞ্জের মোকামে এসেছেন। এবার মোকামে তিনি পাঁচবার এসেছেন। তিনি সংবাদ সারাবেলাকে জানান, ‘এখন পর্যন্ত এক কোটি টাকার ধান বিক্রি করেছি। গত বুধবার ব্রি-২৯ ধান ১ হাজার টাকা এবং ব্রি-২৮ ধান ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বোরো ধান চাউল সংগ্রহ কর্মসূচি চলাকালে সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে ধান এবং চাউলকলের মালিকদের কাছ থেকে ৪৪ টাকা কেজি দরে চাউল কেনার ঘোষণা দিয়েছে। জেলার ৯ উপজেলার কৃষকদের কাছ থেকে ৯ হাজার ১০০ টন ধান ও মিলারদের কাছ থেকে ৫৯ হাজার ৩৫১ টন চাউল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর, বিজয়নগর, সরাইল, আশুগঞ্জ, কসবা ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় নিবন্ধিত ১৫ হাজার কৃষক রয়েছেন।

কসবা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাউসার সজিব বলেন, ব্রি-২৮ ধানের ফলন কম হয়েছে বিষয়টি সঠিক নয়। তবে এই ধানে চিটা ধরেছে। চিটা না থাকলে এক মণ ব্রি-২৮ ধান থেকে ২২ কেজি চাউল পাওয়া যায়। চিটা ধরায় প্রতি মণ ধান থেকে এখন ১৫-১৬ কেজি চাউল পাবেন ব্যবসায়ীরা। তাই তাঁরা বলছেন, ফলন ভালো হয়নি।  

জেলা চাতালকল মালিক সমিতির সভাপতি বাবুল আহমেদ বলেন, এবার রোদ ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা ধান শুকাতে পারছেন। কয়েক দিন আগেও ভেজা ধান বেচাকেনা হয়েছে। কিন্তু এখন শুকনা ধান আসছে। সরকারের ধান সংগ্রহের ঘোষণায় দাম বেড়েছে। কৃষকদের লাভবান করতেই সরকারের এই উদ্যোগ। চাউলের দাম ৪৪ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ছিল ৪২ টাকা। জেলায় ৩৫২টি চাতালকল ও ২৮টি অটোরাইস মিল রয়েছে।

জেলা ধান ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জারু মিয়া বলেন, ধানের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং চাউলের দাম নিম্নগতি। যেই মাত্র সরকার ধান সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছে তখনই হঠাৎ করেই দাম বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন মোকামে গড়ে ৬০-৭০ হাজার মণ ধান বেচাকেনা হচ্ছে, যার মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.