বগুড়ায় অদম্য মেধাবী নাপিতের মেয়ে নাজিরা সুলতানা হবে ডাক্তার। কোন বাঁধায় তাকে দমাতে পারেনি। বগুড়া সদর উপজেলার বাসিন্দা নাজিরা সুলতানা ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। নাজিরা উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের নাপিত মোঃ নজরুল ইসলাম ও হালিমা বেগম দম্পতির সন্তান। তারা জানান তাদের ৩ মেয়ের মধ্যে নাজিরা দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই সে অদম্য মেধাবী ছিল। আমার বড় মেয়েও খুব মেধাবী ছিল, তাকে নিয়েও অনেক স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু হঠাৎ একদিন আমার বড় মেয়ে অসুস্থ্য হয়ে মারা যান। আমরা ভীষন ভাবে কষ্ট পাই। তখন নাজিরার মাঝে আমরা স্বপ্নের জাল বুনি। সে আমাদের স্বপ্ন পূরুণ করেছে।
২০২০ সালে বগুড়া ছয়পুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে নাজিরা ভর্তি হন বগুড়া সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে। সেখান থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে বগুড়ায়া রেটিনা কোচিং সেন্টরে ভর্তি কোচিং করেন । নাজিরা সুলতানার মা হালিমা বেগম বলেন,পড়াশোনার প্রতি ছোটবেলা থেকেই অনেক আগ্রহ ছিল তাঁর। তাঁর বাবা নাপিতের কাজ করেন আর তিনি গৃহিণী। মেয়ের আগ্রহ দেখে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন তাঁরা।
হালিমা বেগম আরও বলেন, আজ সেই কষ্টের ফল মহান আল্লাহর রহমতে পেয়েছি। আমার খুব ভাল লাগছে। নাজিরাকে নিয়ে অনেক কষ্ট করেছি। আজ যখন সে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে তখন সেই কষ্ট আর নেই। তবে এখন দুশ্চিন্তায় আছি। মেডিকেলে সুযোগ তো পেল, এখন সিলেট গিয়ে পড়ালেখা করার খরচ কীভাবে আসবে? আমার মেয়ের লেখাপড়াসহ পরবর্তী সহাযোগিতার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
সেই সাথে দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই যাতে আমার মেয়ে ডাক্তার হয়ে অসহায় মানুষের সেবা করতে পারে। জানতে চাইলে নাজিরার বাবা মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, আমার মতো গরিব বাবার সন্তান মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, এ জন্য আমি গর্বিত। তিনি বলেন, আমি দিনমজুর, অন্যের সেলুনে নাপিতের কাজ করি। এ অবস্থায় মেয়ের পড়ালেখার খরচ কোথায় পাব, তা ভেবে আমি বেশ চিন্তিত। যদি সমাজের সচ্ছল, বিত্তবান বা কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসত, তাহলে আমি আমার মেয়েকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন পূরণ করতে পারতাম।
নাজিরা বলেন,আমি একজন মানবিক ডাক্তার হতে চাই। দেশের গরিব,দুঃস্থ মানুষের সেবা করতে চাই। আমার মত যারা অর্থের অভাবে বড় স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়, সে সব শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াতে চাই।