× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মাতারবাড়ী-ধলঘাটা প্রকল্প

পেশা হারিয়ে জীবিকার তাগিদে এলাকা ছাড়ছেন মানুষ

এএম হোবাইব সজীব,কক্সবাজার

২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:২১ এএম

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি-ধলঘাটা সরকারের উন্নয়ন কাজ চলছে ছোট্ট এ দ্বীপ ইউনিয়নে। এখানে একাধিক কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর ও ইকোনমিক জোন নির্মাণকে ঘিরে যতদূর চোখ যায় চলছে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ। 

দেশি-বিদেশি অর্থায়নে আনুমানিক ৮০ হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে দেশের অর্থনীতি। কিন্তু উন্নয়নের বিশাল কর্মযজ্ঞে তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি মাতারবাড়ি ও ধলঘাট ইউনিয়নে।

অপরদিকে উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের উত্তর রাজঘাট দরগাপাড়া গ্রাম। কোহেলিয়া নদীর তীর ঘেষে গড়ে উঠা এই গ্রামের মানুষের জীবিকার একমাত্র উৎস মাছ ধরা। তবে ২০১৬ সালের পর কোহেলিয়া নদীটি অস্বাভাবিক হারে ভরাট হয়ে এখন মৃত প্রায়। ভাটার সময় নদীর পানি প্রায় শুকিয়ে যায় বললেই চলে। ফলে এই নদীতে আর জাল বসানো সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়েই জেলে পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হয়েছে এই গ্রামবাসীকে। এখন সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে এখানকার জেলেরা। 

অথচ অর্ধযুগ আগেও স্থানীয় বাসিন্দাদের সুখের সংসার ছিল। চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষ, লবণ মাট, বিভিন্ন মৎস্য চাষ, জেলে, ফিশিং বোট ব্যবসা, কৃষিসহ নানা ক্ষুদ্র পেশায় কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছিলেন তারা।

কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কারণে অর্ধযুগের ব্যবধানে এখানকার মানুষ পেশা ও পরিচয় হারিয়ে টানাপোড়নের মধ্যে পড়ে গেছেন। টানাটানির সংসারের জ্বালা সইতে না পেরে জীবিকার তাগিদে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে এলাকা ছাড়ছেন।

বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে 

বলেন, ‘মাতারবাড়ি ও ধলঘাটে সরকারের বিশাল উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের উল্টো পিঠে দেখা দিয়েছে দারিদ্রতা। কর্ম হারিয়ে মানুষ জীবিকার সন্ধানে ছুটছেন অন্যত্র। কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা, বানিয়াচড়াসহ বিভিন্ন এলাকা, বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলা এবং চট্টগ্রাম শহরের হামিদচর, ভাটিয়ারি জাহাজভাঙ্গা এলাকাসহ বহু এলাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে গেছে বহু বাসিন্দা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাতারবাড়ি থেকে এসব এলাকায় এ পর্যন্ত ১৪৭ পরিবার কাজের সন্ধানে চলে গেছে।’

এদিকে শুধু জমি অধিগ্রহণের কারণে পেশা হারাননি স্থানীয় বাসিন্দারা। যারা কুহেলিয়া নদী ও প্রকল্প এলাকার পাশে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতো এসব জেলেরাও এখন বেকার হয়ে পড়েছেন। সড়ক ও বেড়িবাঁধ নির্মাণে নদীর নাব্যতা হ্রাস ও কোস্ট গার্ডের বাধার কারণে তারা মাছ শিকার করতে পারছে না। এতে টানাপোড়েনের মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছে তাদের সংসার।

মাতারবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজঘাট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মোনাফ (৪০) বলেন, এক সময় কুহেলিয়া নদীতে মাছ মেরে সংসার চালাতাম। মা, স্ত্রী, দুই ছেলে ও ৩ মেয়ে নিয়ে আমার সুখের সংসার ছিল। কিন্তু কয়লা বিদ্যুতের যাতায়াতের জন্য কুহেলিয়া নদীর পশ্চিম পাড়ে বেড়িবাঁধ দিয়ে সড়ক নির্মাণের কারণে আগের মতো নদীর গভীরতা নেই। তাছাড়া সারাক্ষণ নদীতে প্রকল্পের মালবাহী স্টিমারসহ অন্যান্য জনযান চলাচল করে। এতে মাছ নেই নদীতে। আবার মাঝে মাঝে নদীতে নামতে চাইলে নৌ-পুলিশ বাধা দিচ্ছে। তাই বিগত কয়েক বছর ধরে নদী থেকে মাছ শিকার করতে পারছি না। এতে আমি বেকার হয়ে পড়ি। বেকারত্বের কারণে এখন সংসার চালাতে পারছি না। পরিবার-পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছি।’

এক সময় পেশায় জেলে মাতারবাড়ি ইউনিয়নের একই এলাকার বাসিন্দা  ছৈয়দ বহাদ্দার (৭০) বলেন, ‘কুহেলিয়া নদীকে ঘিরে উত্তর ও দক্ষিণ রাজঘাট এলাকায় প্রায় পাঁচশ জেলে রয়েছে। এসব জেলে আড়াই বছর আগেও নদী থেকে মাছ শিকার করে সংসার চালাতেন। কিন্তু কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে নদী থেকে মাছ শিকার বন্ধ হয়ে গেছে। কুহেলিয়া নদীর পশ্চিম পাড়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ দিয়ে সড়ক নির্মাণের কারণে নদীর গভীরতা হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালামাল জলযানের মাধ্যমে আনা-নেওয়ার কারণে এ নদীতে জাল ফেলতে পারছে না জেলেরা। তাই বংশ পরম্পরায় কাজ করা জেলেরা এখন বেকার হয়ে পড়েছেন। পেশা হারিয়ে তারা আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়ে গেছেন। জীবিকা চালাতে কেউ কেউ দিনমজুরির কাজ করলেও তা আবার নিয়মিত মেলে না।’

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.