× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

রয়ে যাই মাটির টানে

রোখশানা রফিক

১০ নভেম্বর ২০২২, ০৬:০০ এএম । আপডেটঃ ১০ নভেম্বর ২০২২, ০৭:১৩ এএম

আমেরিকা-কানাডার ফল সিজনের পাতাঝরার রঙ খুব সুন্দর। কিন্তু বছরের ৬ মাস বরফের কবরে দাফন হয়ে থাকা বিষয়টা, অসহ্য মনে হয় আমার।

ইউরোপের শিল্প-সংস্কৃতি শিক্ষা আর্ট কালচার অতুলনীয়, কিন্তু পুরনো পুরনো স্যাঁতসেতে গোমড়ামুখো ঐতিহ্যবাহী বিল্ডিং ভালো লাগে না মোটেই। গুমোট আকাশ, প্যাচপেচে বৃষ্টি আরও অসহ্য। প্যারিসে ক’দিনের জন্য বেড়াতে যাওয়া যায়, আর ভেনিসের গণ্ডোলায় একদিন। 

সিঙ্গাপুর এতো ছোটো একটা দ্বীপ যে, একদিন পুরো সময় ঘুরলেই সবটা দেখা হয়ে যায়। মন টিকবে কয়দিন সেখানে? তাদের অর্কিড এদেশেও পাওয়া যায় এখন। ...থাইল্যান্ডের খাবার দাবার আর পর্যটন ভালো, যদিও পোকার গুড়া মেশায় অনেক খাবারে। কিন্তু সেখানে পতিতাবৃত্তির রমরমা সস্তা বানিয়ে ফেলেছে দেশটাকে।

মালয়েশিয়া সুন্দর, কিন্তু জ্যাম বেশি আর আবায়া আমার দেখতে ভালো লাগে না। আয়াম গোরেং, নাসি গোরেং, সাম্বাল, তেরাং বুলাং আমি বানাতে জানি। ফিলিপিনোরা লাইফ বলতে বোঝে পার্টি আর বিয়ার। বিয়ার-টিয়ার আমি খাই না। তাদের পছন্দের চিকেন গাডোগাডোও রাঁধতে পারি।

প্রকৃতিকন্যা হিমালয়ের কোলে হলেও নেপালিরা দরিদ্র। কাঠমুন্ডুর রাস্তাগুলো কেমন চিপা চিপা। ভারত আমার ঘিঞ্জি লাগে। ঘুরতে যাবো আরেকবার। টার্কিশ খাবারে সাওয়ার ক্রিম আর বাটার বেশি, ভালো লাগে না। গ্রিকরা লতাপাতা বেশি খায়। ছবি তোলার জন্য সান্তোরিনির নীল-সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো বটে। তাই বলে থাকতে হবে? ইটালিয়ান পাস্তা আর পিজ্জা খেয়ে কয়বেলা পোষাবে আমার? দুবাই ঝাঁ চকচকে হলেও আসলে তো মরুভূমি, সাথে আছে শেঠদের বালখিল্যতা। আরবের সব দেশই তাই। আল্লাহ চাইলে হজ করে আসবো একবার।

চীন-জাপান-কোরিয়ার মানুষ ক্যাওম্যাও করে কি কয় না কয়, কি খায় না খায়, ঠিক নেই। ( যদিও সুশি আর মিসো স্যুপ প্রচুর খেয়েছি জীবনে। কিমচিও ভালো। চীনা জিংসেং আর সী উইড অতুলনীয়।) অস্ট্রেলিয়া গরম, বাড়িগুলো কেমন ছাড়া ছাড়া, একটার সাথে আরেকটার মনে হয় কোনো যোগাযোগ নেই। নিউজিল্যান্ডে রোদের মুখ দেখা যায় কম, কখন ঠান্ডা, কখন বৃষ্টি ঠিক নেই। সুইজারল্যান্ডও তাই। ল্যাটিন আমেরিকানরা খোলা মনের হলেও, বিকিনি শর্ট ড্রেস পড়ার প্রবণতা বেশি তাদের। সাম্বা নাচের পোশাক আর ইচ্ছেমতো পার্টনার চেইঞ্জের রীতি দেখলেই তা বোঝা যায়। 

জার্মানরা ইংরেজিতে কথা কয় কম। বাতচিত করবো কেমনে? বিদেশি দেখলে লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যায় অনেকের। সাওয়ারক্রয়েট খাবার হিসেবে মন্দ নয়। ওতো নিজেই বানাতে পারি এখানে। রাশিয়া তথা প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই সুদিন আর নেই। তারমধ্যে পুতিনের যা মেজাজ মর্জি। কোন সময় না জানি বোমা মেরে উড়িয়ে দেবে?

আফ্রিকায় যেতে চাই খালি একবার সাফারি ট্যুরের জন্য, এর বেশি কিছু নয়। রোগশোকও বেশি হয় সেখানে। ইজিপ্ট যেতে হবে পিরামিড দেখতে। কিন্তু তাদের প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রীর ভিড়ে, নিজেকেই একটা পুরাকীর্তি মনে হবে। ইন্দোনেশিয়ার বালি পছন্দ হলেও, তাদের ট্যুরিস্ট প্লেস আর সাধারণ নাগরিক জীবনের মানের পার্থক্য অনেক। সেখানে একটা ভিলা কেনার মতো টাকাও নাই পকেটে। আর কিনলেই বা কতটা নিরাপদ?

এরকম হাজারে হাজারে নিজের মতো করে মোটামুটি সত্য যুক্তি দাঁড় করিয়ে, আমি এই সবুজ শ্যামল বাংলার প্রান্তরে থেকে যাওয়ার পক্ষে সাফাই গাই, নিজেরই মনের কাছে। যদি যেতে হয় কখনো এদেশ ছেড়ে, তবে যাবো এদেশের নষ্ট মানুষগুলোর জন্য।

প্রকৃতি, পরিবেশ, সমাজব্যবস্থা, সিস্টেম, ভেজাল, দুর্নীতি, সন্ত্রাস সব ক্ষেত্র ম্যান মেইড ডিসাস্টারের শিকার এদেশে। যেতে যদি হয় কখনো, তবে চলে যাবো শুধুমাত্র এদেশের জীবন্ত অথচ গলিত পচা শবদেহী মানুষের ভিড় এড়াবার জন্য।

সারা বিশ্বের বহু নগর-বন্দর, শহর আর গ্রাম, বহু অরণ্য, সাগর মেখলা, বহু প্রান্তর, পথ-ঘাট, নদী, মেঠোপথ, পর্বত,,জনপদ ঘুরে জেনেছি আমি তা।


লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক, শিক্ষক, গবেষক, সমাজকর্মী ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.