× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ইতি আমাদেরই ঢাকা

উম্মে হানী

২৭ অক্টোবর ২০২২, ০০:৫০ এএম । আপডেটঃ ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০১:১৯ এএম

ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। মসজিদের শহর নামে পরিচিত এই শহরটিতে মানুষের বসবাস শুরু হয় ৭ম শতকে। এখন ঢাকা বিশ্বের নবম বৃহত্তম এবং সর্বাপেক্ষা জনবহুল শহরগুলির মধ্যে অন্যতম। ঢাকা যেমন জনবহুল শহর তেমনি এখানে প্রতিদিন বাড়ছে দূষণ, নাগরিক জটিলতা, সন্ত্রাস এবং আরও নানান সমস্যা। এছাড়া অতিরিক্ত জনবহুলতার কারণে গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত আবাসন। ফলে নাগরিক জীবনের সুস্থ আবাসন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হচ্ছে। জনশুমারির প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকা শহরে ১ কোটি ২ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করে। ঢাকা মহানগরের আয়তন বাংলাদেশের মোট আয়তনের মাত্র এক শতাংশ। কিন্তু দেশের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ বসবাস করে এই ঢাকায়।

যে হারে রাজধানীতে জনসংখ্যা বেড়েছে সে হারে এ শহরের জীবন মান উন্নত হয়নি। অপরিকল্পিত নগরির তকমা যেমন আছে,  তেমনি দূষিত নগরির তকমাও আছে এই শহরের। পানিদূষণ, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ বেড়েই চলেছে দিন দিন। এছাড়া দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য, কর্মসংস্থানের সংকট, নদীভাঙ্গনসহ নানাবিধ সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ রাজধানী ঢাকায় ভিড় করছে। আর এর ফলে নাগরিক শৃস্খলা এবং  জীবনযাত্রার মান কমে যাচ্ছে। গ্রামের অনেক নিম্নবিত্তরা চাকরির জন্য  ঢাকায় পাড়ি জমান আর এর ফলে ঢাকায় বাড়ছে বস্তির সংখ্যা । দিন দিন বস্তি এবং বস্তির আশেপাশের এলাকাগুলো বসবাসের অযোগ্য হচ্ছে। অপরদিকে অন্য দুই শ্রেনীর মধ্যেও ঢাকাকেন্দ্রিক বসবাসের প্রবণতা দেখা যায়।  ফলে তাদের জন্যেও গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত আবাসন। যা শুধু থাকার জন্যেই অযোগ্য নয় বরং অনেক স্থানের আবাসন প্রকল্পের জন্যেও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ । 

ঢাকার সব ক্ষেত্রেই অপরিকল্পনার ছাপ স্পর্ষ্ট। পানি, বায়ু, জননিরাপত্তা, আবাসন, গণপরিবহন-সব ক্ষেত্রেই অপরিকল্পনার ছাপ। এসব ক্ষেত্রে  বিভিন্ন  আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংয়ে ঢাকাকে সব সময় নিচের দিকে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু বারবার র‍্যাংকিংয়ের নিচে থাকা সত্ত্বেও বিষয়টি  কেন জানি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসছে না এবং সমাধানের জন্যেও কাজ করছে না কেউ । 

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় রাজধানী ঢাকার অবস্থান এখন পঞ্চম। ঢাকার বায়ুমানের সূচক সর্বনিম্ন। আর এই বায়ু দূষণ ঢাকা শহরের মানুষের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে । এদিকে ঢাকায়  বায়ুদূষণের উৎসও দিন দিন বাড়ছে। ঢাকায় তৈরি হচ্ছে শিল্পকলকারখানা, ইটভাটা যা বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। অপরদিকে বায়ু দূষণের অবস্থাও যেমন খারাপ তেমনি পানি, শব্দ দূষনের অবস্থাও খারাপ। কলকারখানার বর্জ্য সরাসরি পানিতে মিশে এই অবস্থার সৃষ্টি। এছাড়া কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, কলকারখানার বর্জ্যের ঠিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকাও এর জন্য দায়ী। আর ঢাকার ওয়াশার পানি নিয়ে তো আছে ভূড়ি ভূড়ি অভিযোগ। ময়লা,দুর্গন্ধযুক্ত পানি যেন ওয়াশার নিত্যদিনের অভিযোগের অংশ। তবে ওয়াশার ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি আসার কারণ হিসেবে পানি সরবরাহ প্রযুক্তির দুর্বলতা ও অবৈধভাবে পানির সংযোগ নেয়ার প্রবণতাকে দায়ী করে অনেকেই। পানির পরে আরেকটি দূষণ হল শব্দ দূষণ। ঢাকায় বেশি মানুষ বসবাসের ফলে স্বাভাবিক ভাবেই গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, ফলে শব্দদূষন তো বাড়বেই ।'ফ্রন্টিয়ারস ২০২২: নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস' শীর্ষক  প্রতিবেদনে দেখা যায়, শব্দদূষণের তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান প্রথম। প্রতিবেদনটির মতে, আবাসিক এলাকার জন্য অনুমতিযোগ্য শব্দের মাত্রা ৫৫ ডিবি (ডেসিবেল) এবং বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডিবি।  কিন্তু সে জায়গায় ঢাকায় শব্দের মাত্রা ১১৯ ডিবি। 

দূষণের পরে আসি ঢাকার গণপরিবহন এবং নাগরিক নিরাপত্তা নিয়ে। ঢাকার গণপরিবহনগুলো সবই প্রায় ফিটনেসবিহীন। এছাড়া আছে চরম বিশৃঙ্খলার অভিযোগ। আর এসব বিশৃঙ্খলার জন্য মহানগরীর অন্যতম সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে  যানজট। এদিকে ঢাকার নাগরিক নিরাপত্তাও প্রশ্নবিদ্ধ। রাত, দিন যে কোন স্থানে মানুষ হয় ছিনতাইয়ের শিকার। সিসি ক্যামেরা, যানবাহনের ডিজিটাল নম্বরপ্লেট কোন কিছু দিয়েই সেই ছিনতাইকারিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না অনেক ক্ষেত্রেই। ফলে অনেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এছাড়া অনেকেই চাকরির খোঁজে ঢাকায় এসে কাজ না পেয়ে ছিনতাই পেশা বেছে নিচ্ছে, জড়িয়ে যাচ্ছে অপরাধ চক্রের সাথে। ছিনতাইকারি ছাড়াও এখানে আছে চুরি, অজ্ঞানপার্টি সহ নানা ধরণের প্রতারণার ফাঁদ যা ঢাকার নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ করে।

আমাদের ঢাকাকে বসবাসযোগ্য করে তুলতে নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এছাড়া ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসংস্থানের সংখ্যা  কমাতে হবে। ঢাকার বাইরের জেলা শহরগুলোতেও বাড়াতে হবে ঢাকার মত সুযোগ সুবিধা। তাহলে ঢাকামুখী মানুষের জনস্রোত কমে যাবে। ঢাকার আবাসন প্রকল্পগুলো নিয়েও কঠোর হতে হবে। ঢাকায় যেন অপরিকল্পিতভাবে আর কোন আবাসন সৃষ্টি না হয় তা সংশ্লিষ্টদের নজরে রাখতে হবে। ঢাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে নিতে হবে কঠোর অবস্থান। জলাশয়, নদী যেন ভরাট না হয় সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে। বন্ধ করতে হবে এমন কার্যক্রম যার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ হয়। ঢাকায় গড়ে তুলতে হবে পর্যাপ্ত পার্ক এবং খেলার মাঠ। নগরের ভেতর উন্মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে তবেই যেন ভবন নির্মাণের অনুমতি পায় রিয়েল স্টেট প্রতিষ্ঠান, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া গণপরিবহন পরিচালনার ক্ষেত্রে যেন রাজনৈতিক বেড়িকেড না আসে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা আমাদের দেশের প্রাণ, দেশের রাজধানী । ঢাকাকে বসবাসযোগ্য করে গড়ে তোলা আমার, আপনার সকলের দায়িত্ব। ইটপাথরের এই নগরী আমাদেরও প্রাণের শহর, স্বপ্নের শহর । তাই ঢাকাকে পৃথিবীর সুন্দরতম, নিরাপদ শহর করে গড়ে তুলতে হবে আমাদেরই।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.