বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বিস্তৃত এলাকাজুড়ে থরে থরে ফুটেছে কাশফুল। প্রকৃতি নিজ হাতে শরতের রঙে ঢেলে সাজিয়েছে গোটা ক্যাম্পাসকে। শুভ্রতা আর স্নিগ্ধতায় মোড়া কাশফুলের সৌন্দর্য জানান দিচ্ছে বাংলার প্রকৃতিতে এখন ভরা শরৎকাল।
শরতের নীলচে আকাশে সাদা মেঘের খুনসুঁটি আর দিগন্তজোড়া কাশফুলের দোল খাওয়ার দৃশ্য মন কাড়বে যে কারো। দিনের বেলা হাতের কাছে এ মেঘতুলায় চোখ জুড়াতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিচরণ ঘটে শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের। গোধূলির আকাশে রক্তিম আভা আর সাদা কাশফুলের সমারোহ যেন লাল-সাদার মিষ্টি রঙের খেলা। শত ব্যস্ততা, দম ফেলবার ফুরসত নেই এমন জীবনকাঠামোর মাঝে সাদা এক কোণ বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবার সুযোগ দেয় সবাইকে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাস্তার দু’পাশ, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, শহীদ মিনারের চারপাশ, কেন্দ্রীয় মসজিদের চারপাশ ও হল সংলগ্ন মাঠসহ বিভিন্ন চত্বর ভরে গেছে কাশফুলে। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে ভেতরের দিকে যতই যাবেন, ততই মুগ্ধ হবেন। দু’পাশে কাশফুলগুলো মাথা নুয়ে আপনাকে স্বাগত জানাবে। মাঠের মধ্যে গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুল দেখে মনে হবে, প্রকৃতি আপনার মনের প্রশান্তির জন্য এই রূপে সেজেছে।
ক্যাম্পাসের পাশের ফাঁকা মাঠের মধ্যে দাঁড়ালে মনে হবে যেন আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কাশফুলের রাজ্যে। যতদূর চোখ যায়, ততদূর কাশের শুভ্রতা। যেন প্রকৃতি আকাশের মেঘ-তুলোদের ছোট্ট দলকে নামিয়ে নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছে এই ক্যাম্পাসকে। কাশফুলের নরম ছোঁয়ায় মন আবেশে ডুবে যায়, সুপ্ত তুলোমাখা ছোঁয়া ফুলের মেলায় মনটা যেন উড়ে যেতে চায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেল হলেই শিক্ষার্থীদের আড্ডায় বারবার উঁকি দেয় শুভ্রতা ছড়ানো কাশফুল। প্রতিদিনই শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দূর দুরান্ত থেকে দলবেধে দর্শনার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসছেন কাশফুলের সৌন্দর্য দেখতে। কাশবনের ভেতরে গিয়ে ছবি তোলার হিড়িক পড়ে যায়। কেউ সেলফি তুলছেন আবার কেউবা ভিডিও করছেন। ক্যাম্পাস থেকে আর একটু কীর্তনখোলা নদীর ঢেউয়ের গর্জন। এক কোণে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যাবে কীর্তনখোলা নদীর বিরামহীন সৌন্দর্য। সূর্যাস্তের সময় নদীতে গোধূলির লাল, একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার মতো। যে কেউই এর অপার সৌর্ন্দযের নীরব সাক্ষী হতে চাইবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতিমা মাহী বলেন,‘সবুজ ঘাসের ডগায় থোকায় থোকায় কাশফুল যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে সবাইকে। ঝকঝকে নীল আকাশ, ঝলমলে সূর্য, অফুরান প্রাণশক্তির আমেজ নিয়ে আসে শরৎকাল। ববি ক্যাম্পাসে আসলে শরতের পূর্ণ আমেজ পাওয়া যায়।’
ববি ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পলাশ রায় তার তাৎক্ষণিক অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘কাশফুলের কাছে এসে খুবই আনন্দ পাচ্ছি। মনকে পরিষ্কারের জন্য এখানে আসি। কাশফুলের সান্নিধ্য পাওয়াটা একটু বাড়তি বিনোদন। অবসর সময়টা কাটানোর ভিন্ন একটা স্থান কাশফুলে জেগে উঠা এ প্রকৃতি।’
পরিবার নিয়ে বিকেলে ঘুরতে আসা ফরিদ পাটোয়ারী বলেন, ‘এই সময়টা কাশফুলের হলেও কখন আর কোথায় ফুটছে বলা যায় না এখন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কাশ ফুটে প্রতিবার, তাই ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে দেখাতে এলাম।’
প্রচণ্ড গরমের দাবদাহের পর এক পশলা বৃষ্টি শেষে সাদা সাদা মেঘেরা উড়ে বেড়ায় আকাশে। গুমোট আবহাওয়াকে ফেলে শরতের কাশবনের প্রাকৃতিক বাতাস আনে স্বস্তির নিশ্বাস। ক্লাসের ফাঁকে সুযোগ পেলেই প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে শিক্ষার্থীরা চলে আসেন কাশবনের রূপ-লাবণ্যে মুগ্ধ হতে। কাশবনের পাশে বসে দলীয় গানে সময় বিলাশ নিত্যকার অভ্যাস। বিকেলের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও যুগলরা কাশফুল বিলাস করতে এসে হারিয়ে যান শুভ্র অনন্য রাজ্যে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh