বাংলাদেশ জন্মের পেছনে রয়েছে নানা ইতিহাস। ৫২-র ভাষা আন্দোলন, ৭১-র মুক্তিযুদ্ধসহ নানান গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে আমাদের। এসবের স্মৃতি ধরে রাখতে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। ঢাকা ও এর আশপাশে এমন কিছু স্মৃস্তিস্তম্ভগুলো দেখে আসতে পারেন যে কোনো ছুটির দিনে।
ভাস্কর্যগুলো যেমন জায়গাগুলোকে নান্দনিক পরিবেশ দিয়েছে, তেমনি সংরক্ষণ করছে ইতিহাস। শুধু ইতিহাস আর ঐতিহ্য নয় প্রতিবাদের প্রতীকীও এই ভাস্কর্যগুলো। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কয়েকটি স্মৃস্তিস্তম্ভ সম্পর্কে-
অপরাজেয় বাংলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দিয়ে চলাচল করেন, তাদের চোখে নিশ্চয়ই কলা ভবনের সামনে বন্দুক কাঁধে দাঁড়িয়ে থাকা তিন নারী-পুরুষের ভাস্কর্য পড়েছে। যেটি সর্বস্তরের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সেটি 'অপরাজেয় বাংলা'।
এর তিনটি মূর্তির একটির ডান হাতে দৃঢ় প্রত্যয়ে রাইফেলের বেল্ট ধরা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। এর মডেল ছিলেন আর্ট কলেজের ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা বদরুল আলম বেনু। থ্রি নট থ্রি রাইফেল হাতে সাবলীল ভঙ্গিতে দাঁড়ানো অপর মূর্তির মডেল ছিলেন সৈয়দ হামিদ মকসুদ ফজলে। আর নারী মূর্তির মডেল ছিলেন হাসিনা আহমেদ।
১৯৭৯ সালের ১৯ জানুয়ারি পূর্ণোদ্যমে অপরাজেয় বাংলার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় এ ভাস্কর্যের উদ্বোধন করা হয়। তবে অপরাজেয় বাংলার কাছে ভাস্করের নাম খচিত কোনো শিলালিপি নেই। স্বাধীনতার এ প্রতীক তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন গুণী শিল্পী ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনের বেদিতে দাঁড়ানো তিন মুক্তিযোদ্ধার প্রতিচ্ছবি যেন অন্যায় ও বৈষম্য দূর করে দেশে সাম্য প্রতিষ্ঠার গান গাইছে। এ ভাস্কর্যে সব শ্রেণির যোদ্ধার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে।
স্বোপার্জিত স্বাধীনতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি ভাস্কর্য স্বোপার্জিত স্বাধীনতা। ভাস্কর শামীম শিকদারের নির্মিত একটি ভাস্কর্য এটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সড়কদ্বীপে অবস্থিত। এই ভাস্কর্যের পুরো গাজুড়ে রয়েছে একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদারদের অত্যাচারের একটি খণ্ড চিত্র। চৌকো বেদির ওপর মূল ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে।
ভাস্কর্যটির উপরে বামে আছে মুক্তিযোদ্ধা কৃষক আর ডানে অস্ত্র হাতে দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা। মাঝখানে অস্ত্র হাতে নারী ও পুরুষ যোদ্ধারা উড়িয়েছে বিজয় নিশান। এই পতাকার জন্য বাঙালি যে রক্ত দিয়েছে, সহ্য করেছে অকথ্য নির্যাতন, তার কয়েকটি খণ্ডচিত্র বেদির চারপাশে চিত্রায়িত। ভাস্কর্যটির বেদির বাম পাশে আছে ছাত্র-জনতার ওপর অত্যাচারের নির্মম চেহারা। ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ এ ভাস্কর্য গড়া শেষ হয়।
রাজু ভাস্কর্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি এস সি প্রাঙ্গনে অবস্থিত ঢাকার একটি অন্যতম প্রধান ভাস্কর্য নিদর্শন। সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্ট। ১৯৯৭ এর শেষভাগে তৈরি হয়।
১৯৯২ সালের ১৩ই মার্চ গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের সন্ত্রাস বিরোধী মিছিল চলাকালে সন্ত্রাসীরা গুলি করলে মিছিলের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা মঈন হোসেন রাজু নিহত হন। রাজুসহ সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনের সকল শহীদের স্মরণে নির্মিত এই ভাস্কর্য। ১৯৯৭ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এ. কে. আজাদ চৌধুরী উদ্বোধন করেন। এই ভাস্কর্য নিমার্ণে জড়িত শিল্পীরা ছিলেন ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী ও সহযোগী গোপাল পাল।
স্বাধীনতা সংগ্রাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফুলার রোডে সলিমুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল ও বুয়েট সংলগ্ন সড়ক দ্বীপে বাংলাদেশের ইতিহাসের ধারক স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যটি স্থাপিত। ভাস্কর শামীম শিকদার ১৯৮৮ সালে ফুলার রোডে অবস্থিত সেকেলে বাংলো স্টাইলের বাড়ির (বর্তমানে প্রোভিসির ভবন) সামনে পরিত্যক্ত জায়গায় ‘অমর একুশে’ নামে একটি বিশাল ভাস্কর্য নির্মাণ শুরু করেন।
১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক ঘরোয়া পরিবেশে প্রয়াত অধ্যাপক আহমদ শরীফ এটি উদ্বোধন করেন। ১৯৯৮ সালে ওই স্থানে উদয়ন স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হলে ভাস্কর্যটি স্থানান্তরের প্রয়োজন হয়। ভাস্কর্যটি সড়কদ্বীপে এনে রাখা হয়।
সংশপ্তক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সংশপ্তক শহীদুল্লাহ কায়সারের একটি উপন্যাস। ১৯৬৪ সালে রচিত এই উপন্যাসটি ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে আবদুল্লাহ আল মামুন নাট্যরূপ প্রদান করেন এবং যা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়। সংশপ্তক নাটকটি বাংলাদেশে টিভি নাটকের অন্যতম জনপ্রিয় নাটক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সংশপ্তক শব্দের অর্থ হয় জয় নাহয় মৃত্যু।
অমর একুশে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
অমর একুশ ভাস্কর্যটি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিপূর্ণমূলক ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্যটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত। এর স্থপতি শিল্পী জাহানারা পারভীন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ২ নং গেইট এর সামনে অবস্থিত এই ভাস্কর্যটি।
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সালেহ আহমেদ এই ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন। ভাস্কর্যটির স্তম্ভসহ ফিগারের মোট উচ্চতা ৩৪ ফুট। এটি নির্মাণ করা হয়েছে চুনাপাথর, সিমেন্ট, ব্ল্যাক আইড, বালি, মডেলিং ক্লে প্রভৃতি দিয়ে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh