ঈদুল আজহার সরকারি ছুটি শেষে অফিস খুললেও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রেগুলোতে ভিড় কমেনি। জেলার সবচেয়ে বড় আয়তনের জমিদার বাড়িটি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় অবস্থিত। বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে সাধারণ ভ্রমণ পিপাসুরা ৩০ টাকায় টিকিট কেটে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের সাথে।
ঢাকার আরশেদ আলী, চাকরি করেন একটি বেসরকারী কম্পানিতে। সারা বছর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথাও বেড়ানোর সুযোগ পান না। তাই ঈদুল আযহার ছুটিতে পরিবারের ৪ সদস্য নিয়ে বেড়াতে এসেছেন বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে। স্বামী ও স্ত্রী টিকিট ৩০ টাকা করে ৬০ টাকা, এক ছেলে ও এক মেয়ের টিকিট ২০ টাকা করে ৪০ টাকা। ১০০ টাকায় টিকিট কেটে এ জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করেছেন।
আরশেদ আলী বলেন, ইতিহাস ঐতিহ্যঘেরা এ জমিদার বাড়িতে ২০২৪ সালে এসেও মাত্র ১০০ টাকায় পরিবার নিয়ে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারলাম। এখানে না এসে প্রাইভেট কোনো বিনোদন কেন্দ্রে গেলে কয়েক হাজার টাকা টিকিট কাটতে হত। সেই হিসেবে আমাদের সবার পছন্দ এ জমিদার বাড়িটি।
বালিয়াটি জমিদার বাড়িটি মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি ইউনিয়নে অবস্থিত। ‘গোবিন্দ রাম সাহা’ বালিয়াটি জমিদার পরিবারের গোরাপত্তন করেন। ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি লবণের ব্যবসায়ী ছিলেন। এটি বাংলাদেশের ১৯ শতকে নির্মিত অন্যতম প্রাসাদ। এই প্রাসাদ চত্বরটি প্রায় ১৬,৫৫৪ বর্গমিটার জমির উপর ছড়িয়ে থাকা ৭টি দক্ষিণমুখী দালানের সমাবেশ। এই জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত ও পরিচালিত হয়ে আসছে।
বালিয়াটি জমিদার বাড়িকে কেন্দ্র করে, এখানে মেলার মতো বসেছে। বাহিরে শত শত মটোরসাইকেল রাখা, সারি সারি ব্যক্তিগত যানবাহন। গেট সংলগ্ন টিকিট কাউন্টারে হালকা জট। ছোটদের জন্য ২০ টাকা এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রতিজনের টিকিট মূল্য ৩০ টাকা।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি বা প্রাসাদের কেয়ারটেকার ইব্রাহিম বলেন, সারা বছরই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসেন এ ঐতিহ্যবাহি জমিদার বাড়িতে। দুই ঈদ , বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি পর্যটকরা ভিড় করে। আমাদের টিকিট মূল্য কম এবং ঢাকার অতন্ত কাছে হওয়াতে সবার পছন্দ এ পর্যটন কেন্দ্র।
মানিকগঞ্জের মিতরা থেকে এসেছেন সজিব নামে এক কিশোর। তিনি বলেন, আমাদের ঈদ মানেই বন্ধুদের নিয়ে বাইক নিয়ে জমিদার বাড়িতে বেড়াতে আসা। মানিকগঞ্জ জেলা শহর থেকে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়াতে এখানে বেড়াতে না আসলে ভাল লাগে না।
পাকুটিয়া এলাকার মেয়ের জামাই আব্দুল বারি বলেন, ঈদের পরের দিন শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। শুক্রবার সকালে সবার আরজি মেটাতে পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে বেড়াতে এসেছি।
এক টিকিটেই সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বেড়ানো যায় এ জমিদার বাড়িতে। তাছাড়া জমিদার বাড়িতেই ভাল খাবারের ব্যাবস্থা, নাস্তার দোকান, খেলার মাঠ, মসজিদ রয়েছে। বেড়াতে আসলে সকল চাহিদা মেটানো যায়। তাই ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থেকে বেড়াতে এসেছি বললেন, তিনি আরো বলেন, ঈদের কয়েকটি দিন বাসায় খেতে খেতে ভাল লাগছিল না। ফেসবুক ঘেটে বালিয়াটির একটি হোটেল মালিকের ফোন নম্বর সংগ্রহ করি। মাটির চুলায় রান্না করা বাহারি রকমের খাবারের ওয়ার্ডার করেছি। দুপুরে খেয়ে নিব।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ির আরেক কেয়ারটেকার মিজানুর রহমান বলেন, এবার ঈদের পরের দিন মঙ্গলবার থেকে জমিদার বাড়ি শুক্রবার নিয়ে টানা ৪ দিন খোলা রয়েছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ বেড়াতে আসছেন। এত বেশি আসছে যে, আমাদের নিয়ন্ত্রণ করা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারপরও সাধারণ মানুষদের বিনোদন দেবার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমাদের এ ঈদ মৌসুমে আনুমানিক ৩/৪ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হতে পারে।
বালিয়াটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মীর সোহেল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ঢাকা ও মানিকগঞ্জ থেকে যাতায়াত ব্যাবস্থা বর্তমান সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তাছাড়া বিগত ১৫ বছরের একাধিক প্রকল্প এ জমিদার বাড়িতে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ফলে দিন দিন পর্যটকদের উপস্থিতি বেশি দেখা যাচ্ছে।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শান্তা রহমান বলেন, ঈদ উপলক্ষে পর্যটকদের ভিড় কমেনি বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে। তাছাড়া নাহার গার্ডেন এবং সাটুরিয়ার ধলেশ্বরী নদীতে বর্ষার পানি এসেছে। এখানেও পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন। সাটুরিয়ায় বাড়তি পর্যটকদের কথা চিন্তা করে আমাদের প্রশাসনের বাড়তি নজরদারি রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh