× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পাহাড়ি নদীতে নৌকা চালিয়ে সংসার চলে তাদের

আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান

১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:৫২ পিএম

বান্দরবানের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র থানচি উপজেলা। সেখানে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে  সাজিয়ে রয়েছে তমা তুঙ্গী, ডিমপাহাড়, নাফাকুম, সাতভাইকুম, আমিয়াকুম, ভেলাকুমসহ অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র। সুযোগ পেলেই প্রকৃতির নৈসর্গিক উপভোগ করতে দলবেঁধে ছুটে যান হাজারো পর্যটক। এছাড়াও কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে আবার কেউ বন্ধুর আদলে। 

সেইখানের স্বচ্ছ জলের ধারা তৈতুং শব্দের নজর কাড়ে পর্যটকদের। কয়েক ফুট উচুঁ থেকে ঝড়ে পড়া ঝর্ণা পানি ও সাঙ্গুর নদীর বুক দিয়ে ছুটে চলা ইঞ্জিন চালিত নৌকা। চলার পথে দেখা মিলে অসংখ্য পাথর আবার সেই পাথরে সেজে আছে রাজা পাথর। সেই পাথরের মাঝখান দিয়ে ছুটা চলা একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ইঞ্জিন চালিত নৌকা। 

সাঙ্গুর নদী পথ দিয়ে ছুটে চলা সেসব নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন কয়েশত মানুষ। পর্যটকদের উপর নির্ভর করে সেসব মাঝিদের ঘুরে সংসারের চাকাঁ । তাছাড়া সেসব স্থানে কোন যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় নাগরিক মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে । তবুও সংসার চলার ত্যাগীতে নৌকা চালিয়ে চলছে কয়েকশত মানুষের জীবনে সংগ্রাম।

জানা গেছে, বান্দরবান থেকে থানচি উপজেলার দুরত্ব প্রায় ৮৯ কিলোমিটার। উপজেলা সদর থেকে দুর্গম প্রত্যান্তঞ্চলে নদীর পথে তিন্দু, রেমাক্রী, বড় মদক ও ছোট মদক। এছাড়াও সাঙ্গুর নদীর ধারে কিংবা গহীনে গড়ে উঠেছে অসংখ্যা পাহাড়িদের গ্রাম। সেসব দুর্গম এলাকার প্রত্যান্তঞ্চলে মারমা, খুমি, ম্রো,খিয়াং, চাকমা,তংচঙ্গ্যাঁসহ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের বসবাস। প্রত্যন্ত এলাকায় পাহাড়িদের জুম ধানের উপর নির্ভরশীল হলেও যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে নৌকা তাদের একমাত্র ভরসা। 

তাদের কারো রয়েছে নিজস্ব নৌকা আবার কেউ বা ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছেন নৌকা। সারাদিন সদরে ঘাট থেকে পর্যটক কিংবা স্থানীয়দের নিয়ে ছুটে যায় মাঝিরা। কেউ বা তিন্দু আবার রেমাক্রী হয়ে বড় মদক। একদিনে নদীর পথে নৌকা চালিয়ে যা আয় করেন সেটি পরিবারের ভরন পোষণের যোগান।  তাদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা আছে বলে পর্যটকদের নিরাপদভাবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছে দেন। পর্যটক তাদের একমাত্র আয়ের উৎসের প্রধান। পর্যটকদের উপর নির্ভর করে চলে তাদের পরিবারের সংসার।

নৌকা মাঝি অংচিং নু মারমা ও প্রশান্ত তংচঙ্গ্যা জানান , থানচি হয়ে তিন্দু, রেমাক্রী হয়ে বড় মদক প্রতিদিন রিজার্ভ কিংবা লোকাল ভাড়া নৌকা চালাচ্ছেন। তাদের নদীর পথে নৌকা চালানো অভিজ্ঞতা সাত বছর। নৌকা চালিয়ে তারা পরিবারের সংসার চালাচ্ছেন। কখনো বোনাসসহ আয় করেন ৭ থেকে ১০ হাজার আবার কখনো ৫ হাজার। পর্যটক মৌসুমে হলে বার হাজার থেকে চৌদ্দ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন। তবে পর্যটক আসলে তাদের আয় হয়। পর্যটক না থাকলে  আয় হয় নাহ।

উপজেলার প্রশাসন তথ্যনুযায়ী, সাঙ্গুর নদীর পথে নৌকার যাতায়াতের সংখ্যা রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক নৌকা। প্রশাসনের তথ্য বাইরে আরো একশত ইঞ্জিন চালিত নৌকা রয়েছে। নৌকা মাঝি রয়েছে তিনশতের মতন। এছাড়াও ব্যক্তিকানাধীন কাজে ব্যবহৃত নৌকাও চলাচল করে সাঙ্গু নদীতে। তবে দুর্যোগ কিংবা আবাহাওয়া পুর্বভাস অবনতি না হলে নৌকা চলাচলে জন্য নিষেধাজ্ঞা সতর্কবার্তা প্রদান করা হয় নৌকা মাঝিদের।

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল মুনসুর বলেন, থানচি হয়ে বড় মদক পর্যন্ত শেষ সীমানা। সেখাতে যেতে হলে সাঙ্গু নদীতে নৌকাই হল একমাত্র ভরসা। সরকারী হিসেবে দেড়শত নৌকা রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নৌকা মাঝিদের পর্যটকদের সাথে ভালো আচরণের পাশাপাশি নির্ধারিত ভাড়া নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া থাকে। তাছাড়া বর্ষার মৌসুমে সাঙ্গুর পানি স্রোত বেগতি হলে নৌকা যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় দুর্গম এলাকার কয়েক হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা নৌকা। নৌকার জন্য থানচি বাজারের ঘাটে বসে আছে পাহাড়ী ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠির মানুষজন। কেউ আসছেন বাজার করতে, কেউ দোকানের জন্য পন্য নিতে আবার কেউ বা কলাছড়া, মিষ্ঠি কুমড়া ইত্যাদি। সবশেষে বাড়ীতে যেতে নৌকা ঘাটে ভীর জমাচ্ছেন দুর্গম জনপদের মানুষ।

অন্যদিকে পর্যটকরাও নৌকা জন্য অপেক্ষায় আছেন নিজ গন্তব্যে পৌছাতে। মাঝিরা নদীর ঘাটে বসে রয়েছে যাত্রীদের  অপেক্ষায়। কেউ রিজার্ভ করে আবার কেউ লোকাল্ভাবে মানুষ নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে মাঝিরা। আবার মানুষজন নিয়ে মাঝিরা ফিরছেন শহরে দিকে, কেউ বা নৌকা মাধ্যমে জুমের কাচাঁসবজি নিয়ে যাচ্ছেন নিজ বাড়িতে। ইঞ্জিনের ঠ্যাং.. ঠ্যাং…. ঠ্যাং শব্দের কয়েক ঘন্টা থাকতে হয় নৌকায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সাঙ্গুর নদীর বুকে চলে শুধু ইঞ্জিনের নৌকা শব্দ। তাছাড়া মাঝিদের দক্ষতায় পাথর ডিঙ্গিয়ে ছুটে যায় নৌকা। এসব এডভ্যাঞ্চার পাড় হতে পেরে খুশি পর্যটকরাও।

ঢাকা থেকে আসা সবুজ, মারুফ, তাসলিমা ও ফারহানা একটি দলের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা জানিয়েছেন, রেমাক্রীতে নাফাকুম, আমিয়াকুমসহ যেসব হাইকিং দিয়ে যাওয়া যায় সেটি তাদের পছন্দ। তারা এই প্রথমবার এসেছেন থানচি রেমাক্রীতে। যোগাযোগ বিছিন্ন থাকলেও এমন প্রকৃতির লীলাভূমিতে ঘুরতে তাদের মনকে আগলে রাখে। তারা জানান, প্রথম এসে নৌকা মাঝিদের দক্ষতায় দেখে তারা অবাক হয়েছেন।বড় বড় পাথর ডিঙ্গিয়ে নৌকা ছুটে চলা এক একটি চেলেঞ্জের মতন ভ। ভয় পেলেও তারা খুবই আনন্দ পেয়েছেন।

স্থানীয় নৌকা মাঝিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের একমাত্র আয়ের উৎস নৌকা। নৌকা পানিতে ভাসলে তাদের ইনকাম হয়। স্থানীয়দের ভাড়া দিয়ে চলে কোনমতে সংসার। কিন্তু তাদের ইনকাম বাড়ে পর্যটকদের উপর নির্ভর করে। পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের আশায় বসেন থাকেন। পর্যটক আসলে তাদের ইনকাম বেড়ে যায়। এতে সংসারের চাঁকা ঘুরে। পর্যটকদের নিরাপত্তা ভেবেই দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তা সাথে নৌকা চালিয়ে পৌছে দিচ্ছেন গন্তব্যে। দুর্ঘটনা থেকে এড়াতে মাঝিরা সবসময় প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। তবে এখনো পর্যন্ত সরকার কিংবা প্রশাসনের কোন সহযোগীতা পাননি নৌকা মাঝিরা।

সংবাদ সারাবেলাকে তারা জানান, রিজার্ভ নিয়ে থানচি ঘাট থেকে বড় মদক যেতে নৌকা ভাড়া প্রয়োজন ৮ হাজার টাকা, রেমাক্রী যেতে প্রয়োজন ৪ হাজার এবং তিন্দু যেতে ২৫০০ টাকা গুনতে হবে। শুধু তাই একদিন রাত রাত্রী যাপন করলে সেটি এক হাজার টাকা বাড়তে থাকে। অন্যদিকে লোকাল ভাড়া হিসেবে তিন্দু ২শ, রেমাক্রী ৪শ ও বড় মদকের যেতে গুনতে হবে ৬শ টাকা।

থানচি উপজেলা চেয়ারম্যন থোয়াই হ্লা মং মারমা সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, এখানে অধিকাংশ পাহাড়ি জনগোষ্ঠির নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। জীবন চালানোর ত্যাগীতে সবাই নৌকা বেছে নিয়েছে। সেসব দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুবিহীন এলাকা। তাছাড়া সড়ক যোগাযোগ পথ ও বিছিন্ন বলে নৌকা সবারই ভরসা। এই দুর্গম এলাকায় যদি সড়ক যোগাযোগ পথ তৈরী করা যায় তাহলে সেসব এলাকায় শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নাগরিক সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারবে। 

তাদের পাহাড়ের ফসল- ফলাদি কৃষিপন্য সঠিক দামে বিক্রি করে নায্য মূল্য পাবে। তাই সরকারের প্রতি এই উদ্যেগ নেওয়া অনুরোধ জানান তিনি।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.