× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

হোসেনপুরে প্রাচীন স্থাপত্যের ঐতিহ্য গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:০৬ এএম

দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন আমলের জমিদার বাড়ি। এগুলো দেশের আনাচে-কানাচে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খুঁজলে মিলবে এসব জমিদার বাড়ির ভিন্ন ভিন্ন কালজয়ী ইতিহাসও।

ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল আমল থেকে ব্রিটিশদের শাসন আমল পর্যন্ত জমিদারি প্রথা চালু ছিল। জমিদাররা প্রজাদের উপর শাসনকার্য চালাতেন, এমন বাড়ি সাধারণ মানুষের কাছে জমিদার বাড়ি নামেই পরিচিত। এমন অনেক জমিদার বাড়ির নিদর্শনের মধ্যে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি কিংবা মানব বাবুর বাড়ি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সমধিক পরিচিত।কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গাঙ্গাটিয়া গ্রামে জমিদার বাড়িটির অবস্থান। প্রাচীন ঐতিহ্যের স্থাপনাটি দেখতে প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশি পর্যটক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ভিড় করে।

জমিদার বাড়িটি সংস্কার করে দৃষ্টিনন্দন করতে পারলে এটিও হতে পারে দর্শনীয় স্থানের একটি। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক-বাহক এই জমিদার বাড়ির মূল ফটকের সামনেই রয়েছে বিশাল আকারের একটি দৃষ্টিনন্দন পুকুর যার নাম সাগরদিঘী। এই সাগরদিঘির পাড়ে গড়ে উঠেছিল একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং সেন্টার, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেডিং সেন্টার দেয়ার অজুহাতে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজাকারদের যুগ সাজে (মানব বাবুর) স্বর্গীয় পিতা ভূপতিনাথ চক্রবর্তীকে পাকিস্তানি সেনারা গুলি করে নির্মম ভাবে হত্যা করে। সেদিন জমিদার বাড়ির কর্ণধারকে হত্যা করেই ক্লান্ত হয়নি স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকাররা, তারা লুটপাট করে জমিদার বাড়ির মূল্যবান স্বর্ণালংকারসহ দামি-দামি জিনিসপত্র নিয়ে গিয়ে ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল। জমিদারি প্রথা উঠে গেলেও গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটি প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হয়ে এখনো পুরাতন জরাজীর্ণ স্থাপনার মাঝে সাগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে।

বাড়ির ভেতরে স্থাপনাগুলো চমৎকার কারুকাজে ভরা। এগুলো দেখে পথিকরা এখনো থমকে দাঁড়ায়। জমিদার বাড়ির নহবতখানা, দরবারগৃহ ও মন্দির বিশেষ স্থাপত্যের নিদর্শন। ঢাকা থেকে আসা পর্যটকদের একজন তামীম হাসান জানান, এই জমিদার বাড়িটি অনেক পুরনো। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এতে। প্রতিদিন এটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন।

তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে জমিদার বাড়িটি সংস্কার করে দৃষ্টিনন্দন করার দাবি জানান।

গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ির একমাত্র উত্তরাধিকার ৮০উর্দ্ধ বয়স্ক মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর (মানব বাবুর) সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আজকাল জমিদার বাড়ি নেই বললেই চলে। যদিও থেকে থাকে, তাহলে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে দর্শনার্থীদের মনের খোরাক ছাড়া আর কিছুই না।

তিনি বলেন, ১৯৮৪ সালে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম। এখন অনেক বয়স হয়েছে। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে থাকা নিজের ভিটামাটিও ভালোভাবে দেখতে পারি না বয়সের ভারে। মানুষের কল্যাণে কাজ করে শেষ নিঃশ্বাসটুকুন এই জমিদার বাড়িতেই ত্যাগ করতে চাই। 

খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর দিকে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বংশের পূর্ব পুরুষেরা ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে এসে এ দেশে বসতি স্থাপন করেন। তৎকালীন গৌড়ীয় রীতি অনুযায়ী বাড়ির পতিত ভিটায় পূজা অর্চনার জন্য একটি শিব মন্দির তৈরি করেন। শিব মন্দিরটি এখনো এই বংশের প্রথম নির্মিত মন্দির বলে এখনো দণ্ডায়মান।জমিদারদের ধারাবাহিকতায় এ অঞ্চলে অতুল বাবুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইংরেজ আমলে শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ব্যাপক প্রসার লাভ করে। তাদের পরবর্তী বংশধর খ্যাতিমান সাহিত্যিক, গবেষক ও হাইকোর্টের জজ ধারনাথ চক্রবর্তী এ জমিদার পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমৃত্যু নিরলস চেষ্টা করেন।

ফলে, জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পরও এখনো এ বাড়িতে জমিদারের একমাত্র জীবিত বংশধর মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী বসবাস করছেন।পর্যটকরা প্রাচীন সভ্যতা নিদর্শন গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.