× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বিরল উদ্ভিদের সংগ্রহশালা লালমাই উদ্ভিদ উদ্যান!

কুমিল্লা প্রতিনিধি

০৮ অক্টোবর ২০২২, ০২:৪২ এএম

উঁচু-নিচু পাহাড়। পাহাড়ের মাথায় ইট বিছানো পথ। পথের দুই পাশে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সমাহার। ইটের রাস্তা দিয়ে হাঁটতেই একটু পরপরই দেখা মিলে উদ্ভিদের পরিচিতি বোর্ডের। সেখানে রয়েছে উদ্ভিদের বিস্তারিত বর্ণনা। এখানে আছে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ ঝাড়ও। কুমিল্লার পর্যটন নগরী খ্যাত কোটবাড়ি এলাকার লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানে গেলে এমন নান্দনিক দৃশ্যই এখন চোখে পড়ে ।

এই উদ্ভিদ উদ্যানের ইটের রাস্তায় সবুজের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে শরীরের সব ক্লান্তি যেন নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। আর পাখির কিচিরমিচির শব্দতো রয়েছেই। সবুজ প্রকৃতি আর পাখির শব্দ শুনে বাড়ি ফিরতে মন চায় না ভ্রমণপিপাসুর।

কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগ সূত্র জানায়, কুমিল্লা নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোটবাড়ি ময়নামতি জাদুঘরের কাছে সালমানপুর নামক স্থানে প্রায় ১৭ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে উদ্যানটি। এখানে রয়েছে কয়েক শ’ প্রজাতির উদ্ভিদ। যার অন্তত ৯০ শতাংশ বিপন্ন ও দুষ্প্রাপ্য প্রজাতির উদ্ভিদ। ভবিষ্যতে এ উদ্যানটির বিস্তৃতি আরও বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। বর্তমান উদ্যানের নিকটবর্তী বনবিভাগের ৩০ একরের মতো প্রাকৃতিক শালবাগান রয়েছে। মাঝে আরও প্রায় ৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হলে লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানটি অনেক সমৃদ্ধ হবে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে এমন বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সামাজিক বন বিভাগ। ঢাকার মিরপুর ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পর লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানটি দেশের তৃতীয় বিরল উদ্ভিদ উদ্যান। ২০১৫ সালে এটির কাজ শুরু হয়ে চলতি বছরের শুরুতে শেষ হয়। এ উদ্যানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণ, বন্য প্রাণীর নির্ভয় আবাসস্থল তৈরি, শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা। এছাড়া বিনোদনের ব্যবস্থা ও স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
বর্তমানে উদ্যানটিতে বিলুপ্তপ্রায় বিরল উদ্ভিদ রাধাচূড়া, নাগেশ্বর, আগার, নাগলিঙ্গম, কাঞ্চন, অশ্বথ, চন্দন, রক্তচন্দন, চালমুগরা, লোহাকাঠ, চাপালিশ, ধূপ, বাবলা, হরিতকি, বহেরা, হিজল, কনক, তমাল, অশোক, সিভিট, উড়ি আম, বন পেয়ারা, অর্জুন, মহুয়া, তেলশুর, পুঁটিজাম, বাঁশপাতা, কুম্ভি, পিতরাজ, পারুল, জারুল, চম্পা, টগর, বেলি, চিকরাশি, হরিয়ান, লটকন, ফেন্স, বোটলব্রাশ, বাসক, রঙ্গন, করমচা, সোনালু, বট ও কৃষ্ণচূড়ার সমাহার রয়েছে। এ উদ্ভিদ উদ্যানে আরও রয়েছে ক্যাকটাস হাউস, অর্কিড হাউস, বিভিন্ন ফুলের বাগান, বিরল উদ্ভিদ বাগান, বন্যপ্রাণীর জন্য জলাশয়, বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস। এখানে দর্শনার্থীদের বসার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কিছু আরসিসি বেঞ্চ, ব্যাঙের ছাতা সদৃশ্য বিশ্রামাগার। নির্মাণ করা হয়েছে পৃথক শৌচাগার।

এদিকে, গত ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর দর্শনার্থীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় বিরল উদ্ভিদের এই উদ্যানটি। উদ্যানটির উদ্বোধন করেন বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মো.আমীর হোসেন চৌধুরী। 

উদ্যানে প্রবেশ করতে দর্শনার্থীদের জন্য টিকেটের হার নির্ধারণ করা আছে, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও শিক্ষার্থীদের জন্য টিকিট ৫ টাকা, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা এবং বিদেশিদের জন্য ৪০০ টাকা। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ উদ্যান। 

তবে লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানে গিয়ে দেখা গেছে অযত্নের ছাপও। প্রবেশ পথেই যে গোলাপ বাগান সেখানে শতাধিক রকমের গোলাপ গাছ থাকলেও, দেখে মনে হয়ছে এই প্লটটি ফুল না আসলে থাকে অযত্নে। এছাড়া ক্যকটাস ও অর্কিডের গ্রীন হাউজে গিয়ে দেখা গেছে রোদ বৃষ্টিতে শীর্ন দশা। ঝরে পড়ছে ছাউনি।অপর দিকে ছোট্ট পুকুর পাড়ে যাবার যে সিঁড়ি পাহাড় বেয়ে নেমে গেছে তা শ্যাওলা জমে পিচ্ছিল হয়ে আছে- যা দর্শনার্থীদের খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

জেলার নাঙ্গলকোট থেকে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী বশির আহম্মেদ জানান, আমরা বৌদ্ধ বিহারে ঘুরতে এসেছিলাম। পরে এই উদ্যানের কথা জেনে- এখানে আসলাম। এখানে অনেক গাছ আছে, যেগুলো আমি জীবনেও দেখি নাই। অবাক হয়েছি আগর ও ধুপকাঠির সুগন্ধওয়ালা গাছ দেখে।

দেবিদ্বার থেকে ঘুরতে আসা মামুন মিয়া বলেন, বাগানের পরিবেশ অনেক সুন্দর। কিন্তু বেশ ঝোপঝাড় হয়ে আছে, সিঁড়ি ও পুকুর পাড়টা পরিচ্ছন্ন রাখলে আরো সুন্দর দেখাবে।

কুমিল্লার হাউজিং এলাকার এনজিও কর্মী অজিত কুমার মণ্ডল বলেন, পূজার ছুটিতে ঘুরতে আসলাম। এখানে অনেক ধরনের গাছ আছে। শেখার মত, জানার মত অনেক কিছুই আছে- কিন্তু আরো বেশি গোছানো হলে সবগুলো গাছ খুঁজে পেতে মানুষের সহজ হত।

কুমিল্লা বন বিভাগের প্রধান বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানালেন, এখানে যেসব গাছ আছে, তা এখন খুব একটা দেখা যায় না। গাছগুলো আসলেই বিরল। এই উদ্যানটি বর্তমান প্রজন্মকে ভুলতে বসা অনেক প্রজাতির গাছকে পরিচিত করে তুলবে। পরিপাটি করে গড়ে তোলা হয়েছে লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানটি। এখানে রয়েছে বসে অবসর কাটানোর সুযোগ। আর এ উদ্যান নতুন প্রজন্মকে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সম্পর্কে ধারণা দেবে। স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে এটির আয়তন আরও বাড়ানোর জন্য আমরা অধিদপ্তরে আবেদন করেছি। ময়নামতি জাদুঘরের মতো এখানে ফরেস্ট মিউজিয়াম করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে আবেদনে। 

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.