× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

প্রযুক্তির দুনিয়ায় আসছে বিস্ময়!

হাসান রাজীব

১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:০৭ পিএম । আপডেটঃ ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:২২ পিএম

প্রযুক্তি দুনিয়ায়  ২০২৩ সাল ছিল অভূত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক নতুন যুগে প্রবেশ। এসময় চ্যাটজিপিটি ও জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি যাত্রা করেছে। মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ২০২৩ সালকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে অনন্য বছর বলে আখ্যা দিয়েছেন। এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ইতিহাসের শুরুর বছর হিসেবে ২০২৩ সাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আর এখন এই ২০২৪ সালে প্রযুক্তির দুনিয়া কেমন হবে তা নিয়ে বৈশ্বিক গণমাধ্যম ও সব স্তরের প্রযুক্তিবিদরা চমকপ্রদ বিশ্লেষণ করছেন প্রতিনিয়ত।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইর প্রতিষ্ঠাতা স্যাম অল্টম্যানের তথ্যমতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড় চলমান। ২০২৪ সালে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে জিপিটি ৪ দশমিক ৫ সংস্করণ যুক্ত করবে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে সফটওয়্যার নির্মাতাদের সম্মেলনে ওপেনএআইর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্যাম অল্টম্যান ধারণা দেন, ২০২৪ সালে বহু ধরনের নতুন চমক দৃশ্যমান হবে।

চ্যাটজিপিটির মোকাবিলায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সবচেয়ে বড় চমকের জানান দিয়েছে গুগলের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট। 

গুগল জেমিনি নামে শক্তিশালী এআইকে হাজির করেছে। উল্লিখিত এআই সব গুগল পণ্য, চ্যাটবট ও সার্চ ইঞ্জিনেও যুক্ত হবে। গুগল দাবি করছে, তাদের উদ্ভাবিত জেমিনি বহুল আলোড়িত চ্যাটজিপিটিকে ছাড়িয়ে যাবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা

শ্মিট অটোমোটিভ রিসার্চের তথ্য মতে, ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাজ্যের রাস্তায় ১০ লাখতম বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) নামবে। অর্থাৎ জার্মানির পরে যুক্তরাজ্যে ১০ লাখতম বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হবে। তবে চাহিদা থাকার পরও ২০২৪ সাল বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতাদের জন্য আরেকটি কঠিন বছর হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। ২০২৩ সালের শেষের দিকে ফোর্ড, জিএম ও টেসলা সবাই তাদের বর্তমান বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন কমানোর পাশাপাশি কারখানা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে। 

২০২৩ সালের অক্টোবরে মার্সিডিজ-বেঞ্জ বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারকে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বলে বর্ণনা করেছে। দামের যুদ্ধ ও সরবরাহ পদ্ধতিতে সমস্যার জন্য নানা সংকট দেখা যাচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়িশিল্পে। বিশ্লেষকরা পরিস্থিতি খুব সহজে স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছেন না। গাড়ির বাজার বিশ্লেষক ম্যাথিয়াস শ্মিট জানান, ২০২৪ সাল হবে ইউরোপজুড়ে ইভি বিক্রির জন্য একটি স্থবির বছর। জার্মানি ও নরওয়ের মতো শক্তিশালী বাজারের গতি কমবে ২০২৪ সালে।

অ্যাপল ‘ভিশন প্রো’

ভার্চুয়াল ও মিক্সড রিয়েলিটি বেশ কয়েক বছর ধরেই বাজারে দৃশ্যমান। অন্যদিকে ‘প্লেস্টেশন ভিআর’ এবং মেটার ‘কোয়েস্ট’ হেডসেটের মতো বহুমাত্রার সাফল্য মানব সভ্যতায় হাজির করবে। চলতি বছরে অ্যাপল উদ্ভাবিত মিক্সড রিয়েলিটি হেডসেট ‘ভিশন প্রো’র হাত ধরে এ প্রযুক্তি প্রথমবার মূলধারায় প্রবেশ করতে চলেছে।

ডিভাইসটি চালু হলে ব্যবহারকারীরা বাস্তব জগতের ওপরেই বহুমাত্রিক অ্যাপ্লিকেশন দেখতে পাবেন। হাতের অঙ্গভঙ্গির সাহায্যে সেগুলোর বিশেষ বিশেষ ব্যবহার করতে পারবেন। অ্যাপল উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তির বেশ কিছু দিক নতুন নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, অ্যাপল প্রযুক্তির পরিচিতি ও যে কোনো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণের ক্ষমতা ভার্চুয়াল ও মিক্সড রিয়েলিটির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠতে পারে।

ড্রোন প্রযুক্তি

ড্রোন খুব দ্রুত বিবর্তিত হচ্ছে। গ্রহণ করে নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেন্সর, ব্যাটারি ও স্বয়ংক্রিয় পরিচালন প্রক্রিয়া; যা ব্যবসায়িক চিন্তাধারায় এরই মধ্যে পরিবর্তন দৃশ্যত করেছে। ওপর থেকে ছবি ও ভিডিও ধারণের মাধ্যমে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। তা ছাড়া যেসব জায়গায় আগে পণ্য সরবরাহ করা কঠিন হয়ে যেত, ড্রোন সেখানে পৌঁছানো দ্রুত ও সহজ করে দিয়েছে। ফসলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, সেচ ব্যবস্থাপনা, রিয়েল এস্টেট পর্যবেক্ষণ যার মধ্যে অন্যতম। তা ছাড়া প্রকৌশল ও পরিবহন খাতেও ড্রোন অভূতপূর্ব পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে।

মানব রোবট

চলতি বছরে মানব আকৃতির রোবট নানা কারণে সংবাদের শিরোনাম হবে বলে মন্তব্য করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। ইলন মাস্কের টেসলার প্রকৌশলীরা ‘অপ্টিমাস’ নামে মানব আকৃতির রোবট তৈরি করছেন। যে রোবট দ্রুতই বহু কারখানার কাজে যুক্ত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা। ইলন মাস্ক বলেন, প্রথমে নিজেদের উদ্ভাবনেই রোবটের সফল ব্যবহার করব। পরে তার ফলাফল বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করব।

মানব আকৃতির রোবট তৈরিতে টেসলা ছাড়াও বহু প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ইতোমধ্যে আমাজন নিজেদের গুদামে মানব আকৃতির রোবট পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছে। ‘ডিজিট’ নামে ওই রোবট মানুষের মতোই নির্দিষ্ট জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পণ্য স্থানান্তর করতে সক্ষম।

কোয়ান্টাম প্রযুক্তি

সাইবার জগতে এখন চলছে তুমুল প্রতিযোগিতা। যেখানে কম্পিউটারের শক্তি বাড়ানো জরুরি কাজ। বর্তমানে এআই আর মেশিন লার্নিং সবাই মিলে সাইবার হুমকির বিরুদ্ধে কাজ করছে। সমস্যা হলো, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের অগ্রগতির সঙ্গে নতুন হুমকিও তৈরি হচ্ছে; যার ডেভেলপ হলে আরএসএ আর ইসিসির মতো এনক্রিপশনের সব স্ট্যান্ডার্ড আর কাজে আসবে না।

ভবিষ্যতে ডেটা প্রাইভেসি ও নিরাপত্তার জন্য কোয়ান্টাম-রেজিস্ট্যান্ট অ্যালগরিদম অতীব জরুরি হয়ে উঠবে। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেকনোলজি পোস্ট-কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি, অর্থাৎ এনক্রিপশন অ্যালগরিদমের স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করবে; যা কোয়ান্টাম আক্রমণ প্রতিহতে সক্ষম। অর্থাৎ কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কারণে বিশ্বব্যাপী সাইবার নিরাপত্তায় বড় ধরনের বিবর্তন ঘটবে।

ওজন কমানোর প্রযুক্তি

ওষুধশিল্পে ওজন কমানোর বিভিন্ন ওষুধের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর তাই ওজন কমানোর বিভিন্ন ওষুধ তৈরির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা করছে। ওয়েগোভি ব্র্যান্ডের ওষুধের কারণে ওষুধ নির্মাতা নভো নরডিস্ক ইউরোপের সবচেয়ে মূল্যবান প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বাজারের চাহিদা মেটাতে কয়েক শতকোটি ইউরো বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে ওষুধটি ইনজেকশনের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। ধারণা করা হয়, ২০২৪ সাল নাগাদই ট্যাবলেট হিসেবে ওজন কমানোর ওষুধ বাজারে মিলবে। অন্যদিকে এলি লিলির ওষুধ মাউঞ্জারো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ওজন কমানোর ওষুধ হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে আগামী বছর অনুমোদন পেতে পারে ওষুধটি। ফাইজারও নিজেদের ওজন কমানোর ট্যাবলেট বাজারজাতের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

আর্ট জেনারেটর

সারাবিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাড়া জাগিয়েছে ২০২৩ সালে। ঘটনার পর ঘটনার জন্ম দিয়েছে। কল্পনায় আঁকা ছবিকে বাস্তবে রূপ দিতে খুলেছে মিডজার্নি এআই। আর্ট জেনারেটরে এআই প্রযুক্তির এমন উদ্ভাবন চলচ্চিত্র ছাড়াও অন্যান্য সৃজনশীল শিল্পের কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পাদনে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। মিডজার্নির পথ অনুসরণ করে স্ট্যাবল ডিফিউশন, লিওনার্দো এআই ছাড়াও কয়েকটি আর্ট জেনারেটরের যাত্রা শুরু হয়। চলতি বছরজুড়েই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেন্দ্রিক আর্ট জেনারেটর আরও বিকশিত হবে।

ইলেকট্রিক বাহন

২০২৪ সাল ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল (ইভি) নির্মাতাদের জন্য একটা কঠিন বছর হতে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের শেষদিকে এসে ফোর্ড, জিএম, টেসলা সবাই তাদের ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল নির্মাণ কাজ বাড়ানোর যে পরিকল্পনা সেটা আপাতত বন্ধ করে রেখেছে। অক্টোবরে মার্সিডিজ-বেঞ্জের দাম নিয়ে যুদ্ধ এবং সাপ্লাই চেইন জটিলতায় ইভির গোটা বাজারকে ‘নিষ্ঠুর’ বলে বর্ণনা করেছেন অনেকে।

বিশ্লেষকরা নতুন বছরে এসব সংকট কমার কোনও লক্ষণ দেখছেন না। অটো মার্কেট অ্যানালিস্ট ম্যাথিয়াস স্মেড ২০২৪ সালে ইউরোপজুড়ে বৈদ্যুতিক বাহন বিক্রি স্থবির থাকবে বলে মনে করছেন। বিশেষ করে সাধারণত যে বাজারগুলো শক্তিশালী যেমন জার্মানি, নরওয়ে, সেখানে তিনি বিক্রি বাড়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না।

তবে এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে নতুন জিরো এমিশন ভেহিক্যাল (জেডইভি) নীতি কার্যকর হওয়ায় এইটা একটা ভালো বাজার হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই নীতি অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে বিক্রি হওয়া গাড়ির মাত্র এক পঞ্চমাংশের কিছু বেশি ইলেকট্রিক গাড়ি হতে হবে, যে লক্ষ্যটা ২০৩০ সাল নাগাদ ৮০ শতাংশে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.