দেশজুড়ে ব্যাপক হারে বেড়ে চলছে অনলাইন জুয়ার ফাঁদ। অনলাইনে লোভনীয় বিজ্ঞাপনে এসব জুয়ার সাইটের ফাঁদে পা দিচ্ছেন নানা বয়স ও পেশার মানুষরা, যার অধিকাংশই তরুণ। রেফার কোডের মাধ্যমে এসব জুয়ার ব্যাপ্তি বাড়ছে গাণিতিক হারে। পকেটমানির সঙ্গে কিছু বাড়তি টাকা যোগ করার আশায় অনলাইন জুয়ার কালো ছায়ায় জড়িয়ে পড়ছেন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। জুয়ার আদতে চলছে প্রতারণা। জুয়ায় বড় অংকের টাকা লাগাতে আগ্রহী করতে প্রথম দিকে কিছু টাকা জিতিয়ে তৈরি করা হয় লোভের ফাঁদ।
জুয়ার এ কালো ছায়ায় আর্থিকভাবে তরুণরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, এর বেশিরভাগ সামাজিক। এছাড়া এর আইনগত দিক তো রয়েছেই, কেননা দেশের প্রচলিত আইনে জুয়া স্বীকৃত নয়। তা সত্ত্বেও ফেসবুকসহ নানা সামজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনলাইন জুয়ার বহু ফাঁদ। ফেসবুক আইডি, পেজ, গ্রুপ, ওয়েবসাইট ও মোবাইলভিত্তিক এনক্রিপ্টেড অ্যাপস দিয়ে চলছে জুয়ার অনলাইন আসরগুলো। প্রথমে নিতান্ত কৌতূহল থেকে আকষ্ট হচ্ছে তরুণরা। শুরুতে পাঁচ-দশ হাজার টাকার বিনিয়োগে শুরু করে লোভে পড়ে শেষমেশ হারাচ্ছেন বড় অংকের টাকা। এসব টাকার সিংহভাগই চলে যাচ্ছে বিদেশে, ফলে জাতীয় অর্থনীতিতেও কোনো না কোনোভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এটি।
অনলাইন জুয়ার সামগ্রিক নেতিবাচক চিত্র দৈনিক সংবাদ সারাবেলার নজরে এসেছে। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে অনলাইন জুয়ার প্রভাব বেড়েই চলছে। আর আমি শুরু করি আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে। বলল ই-মুভিপ্লান নামের একটা অ্যাপ আছে সেখানে টাকা ইনভেস্ট করলে অনেক টাকা-পয়সা আসে।’ ওই শিক্ষার্থী প্রথমে বিশ্বাস না করলেও তার ওই বন্ধুকে জুয়ায় টাকা আয় করতে দেখে সেও আগ্রহী হয়ে টাকা লাগান।
‘আমি শুরু করি ৮০০০ হাজার টাকায়, প্রতিদিন ২০০ টাকা লাভ পেতে থাকি আর আমাকে যে রেফার করে একাউন্ট খুলে দিয়েছে সে পেতে থাকে ১৫০ টাকা করে। আমি ভাবলাম আরও কিছু টাকা রাখব। এক সপ্তাহে পরে ৫০০ টাকা তুলি এই ভেবে যে, বাকি টাকা আছে থাকুক একসাথে অনেক টাকা হলে তখন তুলব। অল্পকিছু দিন পরই আমি গ্রামের বাড়িতে যাব, পকেট ফাঁকা তাই ভাবলাম কিছু টাকা তুলি কিন্তু অ্যাপ থেকে টাকা আমি তুলতে পারলাম না। যারা ওই অ্যাপে খেলে তাদের সঙ্গে আলোচনা করলাম। তারা বলল, কয়েকদিন পরে ঠিক হয়ে যাবে। এর মধ্যে ১০ দিন পার হয়ে যাওয়ার পর টেলিগ্রামে ই-মুভিপ্লান নামের ওই গ্রুপ থেকে প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হলাম। আর এভাবেই আমার টাকাগুলো খোয়া যায়।’ শুধু তার একার নয়, তার মতো এমন অনেকের টাকাই পুরোপুরি গচ্চা যায় বলে জানান ওই শিক্ষার্থী।
অনলাইনে জুয়ার টাকা লেনদেনে ব্যবহৃত হচ্ছে বিকাশ, নগদ, রকেটের মতো দেশীয় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসগুলো (এমএফএস)। এছাড়া ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের মাধ্যমেও পেমেন্ট করার সুযোগ থাকায় দৌরাত্ম বাড়ছে বিদেশি প্রতারকচক্রগুলোর।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা সেল নিয়মিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সাইট ও ওয়েব লিংক নজরদারি করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে এই কার্যক্রম তদারকি করছে গোয়েন্দা সংস্থা, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
অনলাইন জুয়ার মতো প্রতারণামূলক কার্যক্রম প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিটিআরসি থেকে যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হয়।
এরই মধ্যে ৩৪৬ টি অনলাইন বেটিং বা জুয়া সংক্রান্ত ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছে বলেও জানান বিটিআরটিসির এক কর্মকর্তা। গুগল প্লে-স্টোরে জুয়া সংক্রান্ত ১৫০টি অ্যাপ বন্ধের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্য ১৪ টি ইতিমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া জুয়া খেলার ওয়েবসাইট ও এ সংক্রান্ত টিউটোরিয়াল ভিডিও প্রচারকারী ফেসবুক ও ইউটিউবের শতাধিক কন্টেন্ট মুছে ফেলা হয়েছে।
সামাজিক যাগাযোগমাধ্যম কিংবা কোনো ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন যাচাই-বাছাই না করে সেখানে আর্থিক লেনদেন না করারও পরামর্শ দেন বিটিআরসি কর্মকর্তারা।
এদিকে অনলাইন জুয়ার মতো প্রতারণা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ‘আমাদের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট আছে, যদি আমরা গ্রহণযোগ্য প্রমাণ পাই যে- অনলাইন জুয়া হচ্ছে, তখনই আমাদের সাইবার সিকিউরিটি ইউনিট থেকে আইন অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh