× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মায়ের অনুপ্রেরণায় ফুটবলের নায়ক

মনিরুল ইসলাম

২০ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫৫ পিএম

ছবি:সংগৃহীত।

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের জীবনে সবচেয়ে বড় প্রেরণা তাঁর মা। প্রিমিয়ার লিগের মাঠ হোক বা আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের জার্সি।কোনোটিই অর্জন করা সম্ভব হতো না মায়ের সাহস জোগানো ভালোবাসা ছাড়া। তাই তিনি গল্পের প্রথমেই বলেন, ‘মা ছাড়া আমার কোনো সাফল্যই সম্ভব নয়।’"

২০২০ সালের ডিসেম্বরে অ্যালেক্সিস জীবনের এক কঠিন অধ্যায় পার করছিলেন। ব্রাইটনে খেললেও সুযোগ প্রায় নেই। তবুও গায়ে ঝুলছিল মর্যাদার ১০ নম্বর জার্সি। মাঠের বাইরে সময় কাটানো ছিল একাকীত্ব ও হতাশার মাঝে। একদিন ফেসটাইমে কাঁদতে কাঁদতে তিনি মাকে বললেন, ‘আমি বাড়ি চলে আসছি।’ ব্যাগও প্রস্তুত। তখনই মা তাঁকে শক্ত করে সাহস জোগান এবং দাঁড়াতে বলেন।

কোভিড–১৯ পরিস্থিতি তার হতাশাকে আরও গভীর করে দিয়েছে। ম্যাচ বাতিল, বন্ধু-বান্ধব নেই, ভাষাগত অজ্ঞতা তাকে একাকী করে তুলেছে। প্রতিদিনের ছোটখাটো কাজ ইংরেজি শেখা, রান্না, কাপড় ধোয়া। সবকিছুর জন্য মায়ের সঙ্গে ফোনে পরামর্শ নিতে হতো। মনে হতো, এখানে নিজেকে চলমান রাখা অসম্ভব।

তবে মা তাকে শৈশবের স্মৃতিগুলো মনে করিয়ে দেন। ভাইদের সঙ্গে উঠোনে ফুটবল খেলা। মাঝে মাঝে মারামারি, রক্তারক্তি, হাসি–ঠাট্টা। এসব মুহূর্ত তার ফুটবলভরা শৈশবের আনন্দের অংশ। মা তাকে মনে করিয়ে দেন, এই আবেগ এবং শৈশবের শিক্ষাই আজও তাকে শক্তি জোগায়। বাবা-মায়ের শিক্ষা সবসময়ই তাকে পথ দেখিয়েছে। ছোটবেলায় একবার মাঠে খেলোয়াড়দের উদ্দেশে খারাপ কথা বলায় বাবা তাকে থামিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “মাঠে খেলা কখনো সহজ নয়। খেলোয়াড়কে গালি দিও না। সবসময় আবেগ দিয়ে খেলো।” সেই শিক্ষার ছাপ আজও তার বুকে রয়েছে।

কৈশোরের দিনগুলোর স্মৃতি তার অনুপ্রেরণার উৎস। তিন ভাই প্রতিদিন একটি কালো ফোর্ড গাড়ি। যার নাম দিয়েছিলেন ‘লা কুকা’। যার অর্থ তেলাপোকা। এ করে ট্রেনিংয়ে যেতেন। পথে ভাইদের সঙ্গে রেডিওতে বাজত লা মোনা হিমেনেজের গান। আজও সেই সুর শুনলেই মনে পড়ে শৈশবের সংগ্রামী কিন্তু আনন্দময় ফুটবল জীবনের দিনগুলো।

অবশেষে ব্রাইটনে আসে তার টার্নিং পয়েন্ট। ক্রিসমাসের পর কয়েকজন খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়ায় প্রথম একাদশে সুযোগ পান তিনি। দর্শকরা অবাক হয়ে বললেন, “এই ম্যাক অ্যালিস্টার কে?” কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগান তিনি। মাঠে নেমেই নিজেকে প্রমাণ করতে থাকেন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এভারটনের বিপক্ষে করেন জোড়া গোল। সেই মুহূর্তে তিনি অনুভব করেন। সবকিছু মিলতে শুরু করেছে। ফুটবলের সঙ্গে নিজের জায়গাটা খুঁজে পেয়েছেন। সম্প্রতি দ্য প্লেয়ার্স ট্রিবিউন-এ নিজেই এই আবেগঘন গল্পটি লিখেছেন।

বাবার কথাও সত্যি প্রমাণিত হয়। বাবা প্রায়ই বলতেন, “তুমি যদি প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত খেলো। তবে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে সুযোগ পাবে।” প্রথমে অ্যালেক্সিস বিশ্বাস করতেন না। মনে হতো স্বপ্নের মতো কথা। কিন্তু পরিসংখ্যান প্রমাণ করে দেয় তিনি সত্যিই যোগ্য। ব্রাইটনে নিয়মিত খেলার সুবাদে জাতীয় দলে জায়গা হলো। এরপর আসে বিশ্বকাপ জয়।

আজ যখন তিনি পেছনে তাকান। দেখেন এই যাত্রা কখনোই একা সম্ভব হয়নি। মা তাকে ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করেছেন। বাবা তাকে সঠিক পথে রেখেছেন। আর ভাইদের সঙ্গে শৈশবের ফুটবল। এসব মিলে তৈরি হয়েছে তার সাফল্যের গল্প। অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের ফুটবলজীবন আসলে এক পরিবারের গল্প। মায়ের দৃঢ়তা, বাবার শিক্ষা এবং ভাইদের সঙ্গ।

১৯৯৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার সান্তা রোসা শহরে জন্মগ্রহণ করেন অ্যালেক্সিস। ফুটবল তার রক্তে বইছে। কারণ পরিবারের ইতিহাসেই ফুটবলের গভীর ঐতিহ্য রয়েছে। বাবা কার্লোস ম্যাক অ্যালিস্টার এবং চাচারা পেশাদার ফুটবলার ছিলেন। তার দুই ভাই ফ্রান্সিস ও কেভিনও ফুটবল খেলেন। পরিবারটি স্কটল্যান্ডের গ্লেনকো এবং আয়ারল্যান্ডের ডোনাবেট থেকে অভিবাসিত। এই স্কটিশ-আইরিশ পরিচয় তার ব্যক্তিত্বে বৈচিত্র্য এনেছে। যা তাকে দক্ষিণ আমেরিকার আবেগ এবং ইউরোপীয় শিকড়ের মিশ্রণে অনন্য করে তুলেছে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.