ছবিঃ সংগৃহীত।
৩ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে ভিড়ল জিম্বাবুয়ে। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজ (২৩ এপ্রিল) ম্যাচের চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে বাংলাদেশের বেঁধে দেওয়া ১৭৪ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের নিজেদের ২৭ বছর আগের রেকর্ড ভাঙল রোডেশিয়ানরা। জিম্বাবুয়ে সর্বশেষ ১৬০ রানের বেশি টার্গেটে জয় পেয়েছিল সেই ২৭ বছর আগে ১৯৯৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। ১৬২ রানের টার্গেটে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে ভিড়েছিল অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, হিথ স্ট্রিক, অ্যান্ডি ও গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার সহ সব বাঘা বাঘা তারকা সমৃদ্ধ সেই জিম্বাবুয়ে।
থোড়-বড়ি-খাড়া, খাড়া-বড়ি-থোড়। অথবা চর্বিত চর্বনও বলা যেতে পারে। ও আচ্ছা কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে। প্রতিপক্ষ যেই থাকুক, যে মাঠেই খেলা হোক, যেই ফরম্যাটেই হোক ইদানিং বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দলের ব্যাটিং নিয়ে লিখতে গেলে মোটামুটি একটা রেডিমেড টেমপ্লেটে শুধু ব্যাটারদের নাম আর কতো রান করল, কতো বল খেলল, কে ক'টা চার-ছয় মারল, কি ধরণের বাজে শট খেলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসল এসব পরিবর্তন করে দিলেই হয়। কিছু কিছু ব্যাটারদের তো আবার দীর্ঘদিন ধরে একই স্টাইলে আউট হওয়ার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন। যেমন কেউ অফস্টাম্পের বাইরের বলে অযথা খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট, কেউ হাঁটু গেড়ে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ আউট, অথবা কেউবা আবার সেট হয়ে অযথা বল আকাশে তুলে দিয়ে বিদায়। তাই এই ব্যাপারগুলো লিখতেও কষ্ট করতে হয় না ক্রীড়া প্রতিবেদকদের।
আরেকটা বহুল
প্রচলিত টেমপ্লেট হল, ওপেনারদের শুধু শুধু চেহারা প্রদর্শন, এরপর 'প্রাথমিক ধাক্কা
সামলে দুই ব্যাটারের প্রতিরোধ' এরপর মিডল অর্ডারে আবার ব্যাটিং ধস। ৬ অথবা ৭-এ নেমে
কোনো ব্যাটার 'সম্মান বাঁচানো' ইনিংস খেলে দলকে 'মোটামুটি' সংগ্রহ এনে দেওয়া।
জিম্বাবুয়ের
বিপক্ষে সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস সেই টেমপ্লেট ভেঙে ক্রীড়া
প্রতিবেদকদের কষ্ট বাড়িয়ে দিচ্ছিল। বিশেষ করে টপ অর্ডারে ওপেনার সাদমান আর চারে নেমে
মুশফিক বাদে সবাই রান পেয়েছেন। দিনটাও শেষ
করেছিল ৭৩ রানে এগিয়ে, স্কোর বোর্ডে ছিল ৪ উইকেট হারিয়ে ১৯৪। টাইগার অধিনায়ক শান্ত
৬০ রানে অপরাজিত ছিলেন আর অপর প্রান্তে ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন জাকের আলি অনিক। জিম্বাবুয়েকে
বড় টার্গেট দেওয়ার আশা জাগিয়ে দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
আজ (২৩ এপ্রিল)
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেই আশার গুঁড়ে বালি ঢেলে দিতে দেরি করেননি শান্ত।
মাঠে নেমে দ্বিতীয় বলেই আউট। এরপর বল হাতে সফল মিরাজ আবারও ব্যাট হাতে ব্যর্থ। শেষমেষ
জাকের আলি ৫৮ রান করে আউট হলে লাঞ্চ ব্রেকের কিছুক্ষণ পরেই বাংলাদেশের স্কোর ২৫৫/১০।
সকালে যেটা ছিল ১৯৪/৪।
ব্লেসিং মুজারাবানি এদিন বাংলাদেশের জন্য ব্লেসিং নয় অভিশাপ নিয়ে আসেন। প্রথম ৭ ব্যাটারের ৬ জনকেই সাজঘরে পাঠিয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস একা হাতে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেন এই পেসার। টেলএন্ডারদের মধ্যে হাসান মাহমুদ আর খালেদ আহমেদকে পরপর ২ বলে ফিরিয়ে বাংলাদেশের বড় টার্গেট দেওয়ার মৃতপ্রায় আশার আলোর আর 'প্রায়' নয় একেবারেই মৃত্যু ঘটান মাসাকাদজা। একটি করে উইকেট নিয়েছেন এনগারভা এবং নোয়াচি।
জিম্বাবুয়েকে ১৭৪ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু
মজার বিষয় জিম্বাবুয়ে সর্বশেষ ১৬০ রানের বেশি টার্গেটে জয় পেয়েছিল সেই ২৭ বছর আগে ১৯৯৮
সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। ১৬২ রানের টার্গেটে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে ভিড়েছিল
জিম্বাবুয়ে। এরপর রোডেশিয়ানদের আর এত রান তাড়া করে জেতা হয়নি। তাইতো আশায় বুক বেঁধেছিল
বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্ধভক্তরা।
কিন্তু না।
১৭৪ রান তাড়ায় কোনো উইকেট না হারিয়েই ওপেনিং জুটিতে বেন কারান আর ব্রায়ান বেনেট মিলে
তোলেন ৯৫ রান। বেন কারানকে ফিফটি থেকে বঞ্চিত করে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৯৬তম উইকেট তুলে
নেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
দ্বিতীয় উইকেট টি আসে তাইজুলের বলে। নিক ওয়েলচকে এলবিডব্লিউ'র ফাঁদে ফেলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। অভিজ্ঞ শন উইলিয়ামসকেও দাঁড়াতে দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। ব্রায়ান বেনেটের ফিফটির পর তাকেও সাজঘরে ফেরানোর দায়িত্ব পালন করেন মিরাজ। ততক্ষণে অবশ্য জিম্বাবুয়ের স্কোরবোর্ডে উঠে গেছে ১২৮ রান। জয় প্রায় নিশ্চিতই বলা যায়। শুধু শুধু মেহেদি মিরাজ মাঝখানে একটু বাগড়া দিলেন আবারও মায়াভো ও মাসাকাদজার উইকেট নিয়ে। মাসাকাদজার উইকেটটি নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে নিজের ১২তম ফাইফার এবং প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ৩বার এক টেস্টে দশ উইকেট শিকার করলেন। আর তৃতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ২০০ উইকেটধারী হলেন মিরাজ। সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের লজ্জার দিনে এটাই সান্তনা পুরস্কার।
দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ চুরমার করে ম্যাচসেরার পুরস্কার বগলদাবা করেছেন ব্লেসিং মুজারাবানি।
আগামী ২৮ এপ্রিল দ্বিতীয় টেস্টে মুখোমুখি হবে জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh