ছবিঃ সংগৃহীত।
২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১০৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এরপর কেটে গেছে ২৪ বছর। এই দুই যুগে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এসেছে অনেক পরিবর্তন। তবে গত ২-৩ বছর ধরে হঠাৎই বিশ্রীভাবে নিম্নমুখী হয়েছে টাইগারদের খেলার মান। বিশেষ করে 'পঞ্চপান্ডব'-এর বিদায়ের পর ঠিকঠাক খেলাটা ভুলেই গেছে বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দল।
আজ (২০ এপ্রিল) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সিলেটের মেঘলা আকাশ তার সাথে বৃষ্টির আভাস আর পিচের সবুজ ঘাস বোলারদের জন্য বিশেষ করে পেসারদের জন্য বাড়তি সুবিধা দেবে। তা জানা সত্বেও শান্ত'র এই সাহসী সিদ্ধান্ত খানিকটা অবাক করার মতই যেখানে জিম্বাবুয়ের একাদশে আছে ৩ পেসার।
বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দলে ওপেনারদের ভূমিকাটা আসলে কি শুধু অংশগ্রহণ করা তা প্রশ্নসাপেক্ষ। সর্বশেষ ২-৩ বছরে একের পর এক সিরিজে ব্যাটিং বিপর্যয়, সেট হয়ে আউট হওয়া এসব লিখতে লিখতে বোধ করি ক্রীড়া প্রতিবেদকরাও ক্লান্ত। সিলেটের পিচে আজ দেখা গেছে অসম বাউন্স। হুটহাট কখন কতটুকু বাউন্স হচ্ছে তা বোলারদের নিজেদেরই বুঝতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেখানে ব্যাটারদের তো অবস্থা আরও বেহাল। তবুও আজ ১-২ রানে নয় প্রথম উইকেটের পতন ঘটে ৩১ রানে।
অষ্টম
ওভার পর্যন্ত টিকেছিলেন দুই ওপেনার। জিম্বাবুইয়ান কাপ্তান ক্রেইগ আরভিন নবম ওভারে ভিক্টর নোয়াচিকে নিয়ে আসলে তিনি সাদমান ইসলামকে ধরাশায়ী করেন। চমৎকার আউটস্যুইংয়ে গালিতে ক্যাচ তুলে দেন সাদমান। নিশ্চিত আউট সত্বেও সাদমানের রিভিউ নেওয়াটা খানিকটা দৃষ্টিকটু ছিল। ২৩ বল খেলে
তাঁর সংগ্রহ ১২ রান।
একাদশতম
ওভারে আবারও নোয়াচির আঘাত। এবার কট বিহাইন্ড হয়ে
সাজঘরে ফেরেন মাহমুদুল হাসান জয়। ৩৫ বল খেলে
১৪ রানে থামে এই ওপেনারের ইনিংস।
২ উইকেট হারিয়ে ৮৪ রান তুলে মধাহ্নভোজের বিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। বিরতির পর শান্ত-মুমিনুলের ৫২ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের দিকে এগুচ্ছিল বাংলাদেশ।
মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর বৃষ্টিভেজা পিচে খেলা শুরু হতে কিছুতা বিলম্ব হয়। তবে পিচ শুকোনোর সাথে সাথেই সিলেটের আকাশে ওঠে ঝলমলে রোদ। বাংলাদেশ ও দেখতে পাচ্ছিল বড় সংগ্রহের আভাস। কিন্তু দলীয় ৯৮ রানে বাধ সাধেন ব্লেসিং মুজারাবানি। হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বল সপাটে আপার কাট খেলে বাউন্ডারি হাঁকানোর বদলে সোজা ক্যাচ তুলে দেন শান্ত। এরই সাথে ভাঙে ৬৬ রানের জুটি। ৬৯ বলে ৬ চারে ৪০ রান যোগ করেন ক্যাপ্টেন।
শান্ত'র ফিফটি মিস হলেও ক্যারিয়ারের ২২তম ফিফটি তুলে নেন মুমিনুল।
তাঁর আগেই অবশ্য বিদায় নেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। মুশফিকুর আজ শুরু থেকেই নড়বড়ে ছিলেন। ১৮ বল খেলে ৪ রান করে দলকে বিপদে ফেলে সাজঘরে ফেরেন মুশি। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে সহজ ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি।
এদিকে অর্ধশতক তুলে নেওয়ার পরপরই ছক্কা হাঁকিয়ে ইনিংস লম্বা করার ইঙ্গিত দিয়ে সেই মাসাকাদজার বলেই ধরাশায়ী হন মুমিনুল। ১৩০ ইনিংস খেলা অভিজ্ঞ এই ব্যাটারও সেই ফিফটির পর বিদায়ের মিছিলে শামিল হতে দেরি করলেন না। মুমিনুলের ১০৫ বলে ৫৬ রানের ইনিংসে ৮টি চারের সঙ্গে ছিল একটি ছক্কা।
এদিন মেহেদি
হাসান মিরাজের ভাগ্যও সহায় হয়নি। মুজারাবানির আচমকা লাফিয়ে ওঠা বল ছেড়ে দিতে গিয়েও
সেটা তাঁর গ্লাভসে আলতো ছোঁয়া দিয়ে পৌঁছেছে কিপার মায়াভোর হাতে। ১ রানেই থামে মিরাজের
ইনিংস। ১২৩ রানে ৩ উইকেট থেকে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে হঠাৎই ছন্দপতন। ১৩৭ রানে নেই
৬ উইকেট। বাঁহাতি স্পিনার ওয়েলিংটন মাসাকাদজা খানিকবাদে সাজঘরের পথ দেখান তাইজুলকেও।
১৪৬ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে সেই চিরচেনা রুপেই ফেরে বাংলাদেশ।
মিরাজের বিদায়ের
পর স্বীকৃত ব্যাটার বলতে ছিল শুধু জাকের আলী অনিক। কিন্তু অপর প্রান্তে নেই আর কোনো
ব্যাটার। চা বিরতিতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৪।
চা-বিরতি
থেকে ফিরে বাংলাদেশের ইনিংস টেনে নেওয়ার চেষ্টায় ভালই এগুচ্ছিলেন জাকের আলী আর হাসান
মাহমুদ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে শান্ত-মুমিনুলের ৬৬ রানের পর অষ্টম উইকেট জুটিতে তোলে জাকের-হাসান
তোলেন ৪১ রান।
দলীয় ১৮৭
রানে মুজারাবানির রিভার্স স্যুইংয়ে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন টেল-এন্ডার হাসান মাহমুদ।
৪ টি চারের মারে ১৯ রান যোগ করেন তিনি।
এরপর খালেদ
আহমেদ ক্রিজে এসেই একটি চার হাঁকান। গেল বিপিএলে তিনি দেখিয়েছেন ব্যাটিংটাও ভালই পারেন।
তাই ২০০ পেরোনো সংগ্রহ খুব একটা কঠিন মনে হচ্ছিল না।
কিন্তু না,
জাকের আলী অনিক আচমকা বল আকাশে তুলে দিয়ে অনেকটা আত্মহত্যাই করলেন বলা যায়। না হলে
৫৯ বল খেলে হঠাৎই কেন ধৈর্য্য হারালেন সেটা তিনিই ভাল বলতে পারবেন। ৬টি চারে তাঁর ২৮
রানের ইনিংসের সাথে থেমে যায় বাংলাদেশের ২০০ পেরোনো সংগ্রহের সুযোগ। কারণ ক্রিজে তখন
নাহিদ রানা। ৪ বল টিকেছিলেন তিনি। এরপর মাধেভেরের অফস্পিনে উপড়ে যায় লেগ স্টাম্প। আর
বাংলাদেশের ইনিংস থামে মাত্র ১৯১ রানে।
মজার বিষয় হল বাংলাদেশ মাত্রও ৬১ ওভার খেললেও এই ৬১ ওভারের ৫৮ ওভারই করেছেন ৪ বোলার। এরমধ্যে মুজারাবানি এবং মাসাকাদজা ৩টি করে উইকেট তুলে নেন। এনগারাভা ১৪ ওভার বল করেও উইকেট শূন্য ছিলেন। ২টি উইকেট নিয়েছেন আরেক পেসার নোয়াচি। আর পুরো ইনিংসের একদম শেষদিকে মাত্রও ৩ ওভার বল করেই ২টি মেডেন দিয়ে ২ রান খরচায় ২ উইকেট তুলে নেন ওয়েসলি মাধেভেরে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh