দাবা খেলতে খেলতেই গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় অনন্তলোকে পাড়ি দিয়েছেন দেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান।
শনিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে নিয়ে আসা হয় তার মরদেহ। সেখানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর শেষবারের মতো তাকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন দেশের ক্রীড়াঙ্গনের মানুষরা।
ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন জানাজায়। মাত্র ৫০ বছর বয়সে অকালপ্রয়াত এই দাবাড়ুর কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ), দাবা ফেডারেশন, তায়কোয়ান্দো ফেডারেশন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে জিয়ার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে। বাবার কবরের পাশেই হচ্ছে তার শেষ ঠিকানা।
জিয়ার চলে যাওয়ায় বাংলাদেশের দাবার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম। জানাজায় এসে তিনি বলেন, ‘অনেকেই টুর্নামেন্টের পুরস্কার ও নানা সুযোগ-সুবিধা কম হলে খেলতে চাইতেন না। জিয়া কখনোই এ রকম ছিলেন না। সব টুর্নামেন্টেই তিনি অংশগ্রহণ করতেন। যেন অন্যরা তার মাধ্যমে শিখতে পারে। ’
জিয়ার স্মৃতি ধরে রাখার পরিকল্পনার কথাও জানান ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনেই আলাদা একটি ফ্লোর পাওয়ার কথা ছিল আমাদের । সেখানে গ্র্যান্ডমাস্টার কর্নারের পরিকল্পনা ছিল। সেটা যত দিন না হয় আমরা বর্তমান দাবা ফেডারেশন ক্রীড়াকক্ষকেই জিয়ার নামকরণে করার উদ্যোগ নেব।’
বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ ) মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, ‘জিয়া শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব দাবা অঙ্গনে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন আর্থিক ব্যাপারে তার পরিবারের পাশে থাকবে। ব্যক্তিগতভাবে আমিও জিয়ার পরিবারের জন্য আর্থিক-অনার্থিক যেকোনো প্রয়োজনে এগিয়ে আসবো। ’
দাবা ফেডারেশনের অন্যতম সহ-সভাপতি তরফদার রুহুল আমিন বলেন, ‘গতকাল মাননীয় মন্ত্রী (নাজমুল হাসান পাপন) এবং আজ আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের আরেকজন অভিভাবক শাহেদ ভাই (বিওএ মহাসচিব) তার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। একটি বড় আর্থিক অঙ্ক স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) করে পরিবারের একটি সাপোর্ট প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দাবা ফেডারেশন ও আমরা ব্যক্তিগতভাবে নেব। ’
১৯৮৮ থেকে শুরু করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন দশকে ১৪ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে রেকর্ড গড়েন জিয়া। ছাড়িয়ে যান সবাইকে। এ ছাড়া ঘরোয়া অসংখ্য টুর্নামেন্টে শিরোপা জিতেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও জিয়ার ছিল দৃপ্ত পদচারণ। ১৯৮৮ সালে বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডে প্রথম অংশগ্রহণ। এরপর আর থেমে থাকেননি। প্রায় সব অলিম্পিয়াডেই তিনি ছিলেন বাংলাদেশ দলের সদস্য। ১৯৯৩ সালে কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে রানারআপ হন। ১৯৯৯ সালে ব্রিটিশ চ্যাম্পিয়নশিপেও হন দ্বিতীয়।
২০০১ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত রোডস আন্তর্জাতিক ওপেনে রানারআপ হয়ে গ্র্যান্ডমাস্টারের তৃতীয় ও চূড়ান্ত নর্ম অর্জন করেন জিয়া। এশিয়ান ব্যক্তিগত দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের আট আসরে খেলেছেন তিনি। পাঁচটি ফিদে ওয়ার্ল্ড কাপে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এশিয়ান জোনাল দাবায় চারবার চ্যাম্পিয়ন হন। এশিয়ান দলগত দাবায় খেলেছেন তিনবার। গেল দেড় দশকে এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ দলের নিয়মিত মুখ ছিলেন জিয়া।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh