ইংল্যান্ডকে
তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে
হোয়াইটওয়াশ করার পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও
একই ফলের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। দুর্দান্ত বোলিংয়ে সাকিব নেন ৫ উইকেট, তাতে
টানা ৫ ম্যাচ জিতে
দেশের ক্রিকেটে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। এর আগে কখনোই
কুড়ি ওভারের ম্যাচে টানা ৫ জয়ের ইতিহাস
নেই বাংলাদেশের। বুধবার আইরিশদের উড়িয়ে দিয়ে ৭৭ রানে ম্যাচ
জিতে দ্বাদশ টি-টোয়েন্টি সিরিজে
জিতলো লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
দুই
মাস আগেও বাংলাদেশকে নিয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে
বাজি ধরার লোক খুঁজে পাওয়া যেতো না। আর এই বাংলাদেশই
ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই আধিপত্য দেখাচ্ছে। ইংল্যান্ডের পর আয়ারল্যান্ডকেও বিন্দুমাত্র
সুযোগ দিচ্ছে না। কারও একক পারফরম্যান্সে নয়, দলীয় পারফরম্যান্সে মিলছে সাফল্য। বুধবার বৃষ্টির কারণে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে দাঁড়ায় ১৭ ওভারে। এই
ম্যাচটি রঙিন হলো রেকর্ডে। জহুর
আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসের ঠিক আগেভাগে মেঘ-রোদের লুকোচুরি খেলা হচ্ছিলো। দুই দলের অধিনায়ক টস করতেই দমকা
বাতাসে শুরু হয় বৃষ্টি। তাতে
ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ার শঙ্কা জাগে। বৃষ্টি কমার পর সোয়া তিনটায়
১৯ ওভারে ম্যাচ হওয়ার নতুন সিদ্ধান্ত জানানোর পরপরই দ্বিতীয় দফায় বৃষ্টি নামে। এর কিছুক্ষণ পরই
সূর্য উঁকি দেয়। এবার ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে দাঁড়ায় ১৭ ওভারে। আগেই
টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পাওয়া বাংলাদেশ শুরুটা করে দুর্দান্ত। দুই ওপেনার রনি তালুকদার ও লিটন দাস
মিলে ওপেনিংয়ে ১২৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন। যে কোনও উইকেটে
অবশ্য এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ মিলে
দ্বিতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১৩২ রানের জুটি গড়েছিলেন।
এই
জুটি গড়ার পথে লিটন ১৬ বছর আগের
পুরোনো রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে
মোহাম্মদ আশরাফুল ২০ বলে হাফ
সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন। লম্বা সময় ধরে নিজের কাছে রাখা তার এই রেকর্ড এবার
দখল নিয়েছেন লিটন। ১৮ বলে বাংলাদেশের
হয়ে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন এই ব্যাটার। বাংলাদেশের
হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির
মালিক তামিম। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে
ওমানের বিপক্ষে গড়া তার এই সেঞ্চুরি এক
সময় মনে হচ্ছিল ভেঙে ফেলবেন লিটন! কিন্তু শতক থেকে ১৭ রান দূরে
থাকতে সাজঘরে ফিরতে হয় লিটনকে।
সেঞ্চুরি মিস করলেও ওপেনিংয়ে নেমে বাংলাদেশের হয়ে সেরা রান রেটে (ওভারপ্রতি ১৩.২৮) ব্যাটিং
করার ইতিহাস
গড়েছেন লিটন-রনি জুটি।
লিটনের
আউটের পর দারুণ খেলতে
থাকা রনিও ছন্দ হারান। হাফ সেঞ্চুরি থেকে ৬ রান দূরে
থাকতে আউট হন এই ব্যাটার।
২৩ বলে ৩ চার ও
২ ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান তিনি। এরপর সাকিবের ২৪ বলে ৩৮
এবং তাওহিদ হৃদয়ের ১৩ বলে ২৪
রানের ইনিংসের ওপর ভর করে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার টানা দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ২০০ রানের বেশি স্কোর গড়ে।
মাত্র
১৭ ওভারে ২০৩ রানের কঠিন লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরু থেকে ছন্দপতন আয়ারল্যান্ডের। তাসকিনের প্রথম বলেই আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিং লিটনের
দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন। এরপর সাকিবের বাঁহাতি স্পিনের ভেলকি দেখে আইরিশরা। প্রথম ওভারে এক উইকেটের পর
টানা দুই ওভারে সাকিব জোড়া ব্যাটার শিকার করে আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দেন। গ্যারেথ ডিলানিকে ফিরিয়ে সাকিব টি-টোয়েন্টিতে শীর্ষ
উইকেট শিকারি কিউই পেসার টিম সাউদিকে ছুঁয়ে ফেলেন। তৃতীয় ওভারে ডকরেল-টেক্টরকে ফিরিয়ে সাকিব ছাড়িয়ে যান সাউদিকে। ১১৪ ম্যাচে সাকিবের উইকেট এখন ১৩৬। সাকিবের
ভয়ঙ্কর স্পেল চলাকালেই মূলত আইরিশদের হার নিশ্চিত হয়ে যায়। সাগরিকায়
বাঁহাতি স্পিনার দাপট দেখালেও পেসাররা কম যাননি। ধারাবাহিকভাবে
ভালো করা তাসকিন আজকের ম্যাচেও ছিলেন দারুণ। নিজের তৃতীয় ওভারে কার্টিস ক্যাম্ফারের বলে দুই ছক্কা হজম করলেও তাকে সাজঘরে ফেরাতে ভুল করেননি ডানহাতি পেসার। সবমিলিয়ে ৪ ওভার বোলিং
করে তার শিকার ২৭ রানে তিনজন।
হাসান মাহমুদ ২ ওভারে ৬
রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন।
মোস্তাফিজ আজও এলোমেলো বোলিং করেছেন। ৩ ওভারে ২১
রান খরচ করে উইকেটশূন্য ছিলেন তিনি। এছাড়া বাঁহাতি স্পিনার নাসুম ৩ ওভারে ৩৭
রান দিয়ে খালি হাতে শেষ করেন।
টানা
দ্বিতীয়বাররে মতো দুইশো ছাড়ানো ইনিংস, টানা ৫ জয়। ব্যাটিং,
বোলিং, ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই প্রভাব বিস্তার করা পারফরম্যান্স; এসবই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের লক্ষণ। ওয়ানডেতে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য পাওয়া বাংলাদেশ এখন টি-টোয়েন্টিতেও একই
পথে হাঁটছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে ওয়ানডের মতো এই ফরম্যাটেও প্রতিপক্ষদের
চোখ রাঙাবে তারা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh