দীর্ঘ অপেক্ষার পর ভুলতে বসা স্বাদ ফের পেয়েছে আর্জেন্টিনা। নখ কামড়ানো উত্তেজনার ম্যাচে ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পর জিতেছে তারা বিশ্বকাপ। স্নায়ুক্ষয়ী টাইব্রেকারে জয় নিশ্চিত হতেই আর্জেন্টিনায় দেশজুড়ে শুরু হয় বাঁধনহারা উদযাপন। রাস্তায় নেমে আসে লাখো মানুষ, খুশিতে তারা আত্মহারা।
১৯৮৬ সালের দিয়েগো মারাদোনার নৈপুণ্যে নিজেদের সবশেষ বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। পরের আসরেও তারা ফাইনালে খেলেছিল, কিন্তু পারেনি শিরোপা ঘরে তুলতে। ৮ বছর আগে তাদের স্বপ্ন ভাঙে মারাকানায়, ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে হেরে। অবশেষে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সাফল্য নিয়ে মাঠ ছাড়ল দলটি।
লুসাইল স্টেডিয়ামে রোববার ফুটবল বিশ্বকাপের সেরা ফাইনালগুলোর একটি উপহার দেয় আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। প্রথমার্ধেই দুই গোলে এগিয়ে যাওয়া লিওনেল স্কালোনির দল ৭৯ মিনিট পর্যন্ত ২-০ স্কোরলাইনে এগিয়ে অনায়াস জয়ের দিকে এগোচ্ছিল। কিন্তু ৯৭ সেকেন্ডের ব্যবধানে কিলিয়ান এমবাপের জোড়া গোলে লড়াই নাটকীয় মোড় নেয়।
নির্ধারিত সময়ে ২-২ ড্রয়ে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও ৩-৩ সমতায় শেষ হয় ম্যাচ। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত শিরোপাধারী ফরাসিদের টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে দেয় আর্জেন্টিনা। ৮৮ হাজার দর্শকের সামনে সোনালী ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরেন মেসি-মার্তিনেসরা। উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো লুসাইল স্টেডিয়াম।
লুসাইলের সেই উচ্ছ্বাসের ঢেউ আছড়ে পড়েছে আর্জেন্টিনায়ও। দল জেতার পর যেন পাগলপ্রায় অবস্থা দেশটির মানুষের। রাজধানী বুয়েন্স এইরেসে জড়ো হওয়া লাখো মানুষের কারো হাতে পতাকা, কেউ গায়ে জড়িয়ে রেখেছেন সেটা, বেশিরভাগের শরীরেই আর্জেন্টিনার আকাশি নীল-সাদা রঙের জার্সি।
ম্যাচটি যেভাবে এগিয়েছে, লড়াই যেভাবে বারবার মোড় বদলেছে, সত্যিই এ যেন ‘রোলার-কোস্টার’। এমন শ্বাসরুদ্ধকর, নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচের পর বিশ্ব জয়, ১৩ বছর বয়সী সান্তিয়াগো যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না। বুয়েন্স এইরেসে কিংবদন্তি মারাদোনার বাড়ির সামনে পরিবার নিয়ে দলের সাফল্য উদযাপন করতে এসে এই খুদে সমর্থক ধন্যবাদ জানান মেসিকে।
“আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। খুব কঠিন ছিল, তবে আমরা করতে পেরেছি। মেসিকে ধন্যবাদ।”
শুধু রাজধানী বুয়েন্সেই নয়, পুরো আর্জেন্টিনায় চলছে উদযাপন। বলা যায়, ঘরে ঘরে এখন উৎসবের আমেজ। উৎসবই তো, কত কাল পর যে বিশ্ব সেরার মুকুট পুনরুদ্ধার করতে পারল তারা। ২৮ বছর ধরে তো কোনো ধরনের শিরোপার স্বাদই পাচ্ছিল না আর্জেন্টিনা। মেসির হাত ধরেই গত বছর তাদের সেই প্রতীক্ষার অবসান হয়। কোপা আমেরিকায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে তাদের মাঠেই হারিয়ে জয়োল্লাস করে তারা।
এক বছর গড়াতেই এবার কাটল বিশ্ব মঞ্চের শিরোপা খরা। সেই মেসি-দি মারিয়াদের হাত ধরেই। এই দলকে ভালো না বেসে উপায় আছে! উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠে ৪৬ বছর বয়সী দিয়েগো আবুরজেইলি বললেন তাই।
“অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ হলো, মাঝে মধ্যে তো ছিল যন্ত্রণাদায়ক। এই দলটি কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো মানুষকে তাদের ভালোবাসতে বাধ্য করেছে।”
উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সঙ্কটে জর্জরিত আর্জেন্টিনার ৪০ শতাংশ মানুষই দরিদ্র। অনেক কষ্টে দিন পার করা এই মানুষগুলোর জন্য আনন্দের উপলক্ষ হয়ে এসেছিল ২০১৪ সালের ফাইনাল। কিন্তু শেষ সময়ের গোলে তাদেরকে হতাশায় ডুবিয়ে জার্মানি সেবার মেতেছিল উল্লাসে।
আরেকটি ফাইনালের মঞ্চে আবারও আশায় বুক বাঁধে আর্জেন্টাইনরা। সবকিছু তাদের প্রত্যাশা মতোই চলছিল। ম্যাচের ৩৬ মিনিটের মধ্যে মেসি ও দি মারিয়ার গোলে এগিয়ে যায় লাতিন আমেরিকানরা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে এমবাপের ওই ঝড়ে তাদের স্বপ্ন লণ্ডভণ্ড হতে বসে।
সমতায় নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়েও মেসির গোলে শুরুতে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। আবারও শিরোপার সুবাস পেতে শুরু করে তারা। কিন্তু এবারও বাধা হয়ে দাঁড়ান এমবাপে; আরেকটি গোলে সমতা টানেন ফরাসি এই তারকা। শেষ পর্যন্ত পর্যন্ত পেনাল্টি শুটআউটে মার্তিনেসের নৈপুণ্যে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছায় আর্জেন্টিনা।
টাইব্রেকারে চতুর্থ শটে গোল হলেই আর্জেন্টিনার জয় নিশ্চিত। শুরু হয় প্রার্থনা; দলের কারো মুখ নিচের দিকে, কারো উপরে, কেউ বা চোখ বন্ধ করে, কারো দু’হাত জড়ো। সবার চাওয়া পূরণ করেন গনসালো মনতিয়েল। শট জালে পাঠিয়ে জার্সি খুলে গ্যালারির সামনে গিয়ে দেন হুঙ্কার। তার পিছু নেয় কয়েকজন সতীর্থ, কয়েকজন মাঠের মাঝেই মেতে ওঠেন উল্লাসে, কারো চোখে ভিড় করে আনন্দাশ্রু।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh