এই ট্রফিটির জন্য ‘অনন্তকাল’ ধরে মেসি অপেক্ষার দিন গুণেছেন। ২০১৪ সালে খুব কাছে এসেও না পাওয়ার হৃদয়ভাঙা বেদনায় কেঁদেছেন। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বিকেলে হলেও তিনি হাসলেন। অবশেষে সাফল্যের রং-তুলিতে লিখলেন অবিস্মরণীয় গল্প।
এর আগেও বিশ্বকাপের আঙিনায় পা রেখেছিলেন চারবার। এরমধ্যে ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের সময় ছিলেন তুঙ্গস্পর্শী ফর্মে। মারাকানার ফাইনালে গিয়েও পারেননি। ২০১৮ সালেও ছিলেন দারুণ ছন্দে। কিন্তু আলবিসেলেস্তেদের চাওয়া-পাওয়ার ভরকেন্দ্রে থাকার ভার বইতে পারেননি। আর্জেন্টিনার সঙ্গে পথচলাও থেমেছিল শেষ ষোলোয়।
রাশিয়ার আসরের পর জাতীয় দলকে বিদায়ও বলে দিয়েছিলেন। ২৫০ দিনের বিচ্ছেদের অবসান ঘটিয়ে ফিরলেন। দলের হাল ধরলেন। সবকিছু নতুন করে শুরু করেছিলেন বলেই মরুভুমিতে এসে পেলেন মুঠোভরে।
এবার তিনি শুধু জাদুকর নন, নেতাও হয়ে উঠলেন। ৩৬ বছর ধরে বৈশ্বিক ফুটবলের সর্বোচ্চ আঙিনায় ধুঁকতে থাকা আর্জেন্টিনাকে পথ দেখালেন কঠিন কাপ্তানের মতো। ঝঞ্জা-বিক্ষুব্ধ পথে, প্রতিকূল স্রোতে শক্ত হাতে হাল ধরে রাখলেন। প্রশস্ত ডানায় সতীর্থদের ছায়া দিলেন, অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় প্রতিটি বাঁক পেরিয়ে আর্জেন্টিনাকেও পৌঁছে দিলেন কাঙিক্ষত বন্দরে।
সৌদি আরবের বিপক্ষে এগিয়ে গিয়েও ২-১ গোলের হার বড় ধাক্কা হয়ে আসে আর্জেন্টিনার জন্য। ওই হার যেন টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার টগবগে আত্মবিশ্বাস নিয়ে আসা আলবিসেলেস্তেদেরকে মুদ্রার উল্টোপিঠ দেখিয়ে দেয়। কৌশলী কোচ লিওনেল স্কালোনি বুঝে নেন বাকিটা। মেসিও বুঝে নেন শুধু গোল করা যথেষ্ঠ নয় তার জন্য।
গ্রুপ ও নকআউট পর্বের পরের পথচলায় তাই মেসি কেবল নিজে গোলের ফুল ফুটিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন, আক্রমণের সুর বেঁধে দিয়ে সতীর্থদের গোলের আনন্দে ডানা মেলার মঞ্চ তৈরি করে দেন। এবারের আসর তিনি শেষ করেছেন ৭ গোল করে, অ্যাসিস্টের সংখ্যা তিনটি।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে মেসির নেতৃত্বের আরেক রূপের দেখা মেলে। তিনি বিনয়ী, নম্র। মেজাজ হারানো সতীর্থদের শান্ত করতে বেশি দেখা যায় তাকে। নিজে মেজাজ হারান কালেভদ্রে, কিন্তু ডাচদের বিপক্ষে কোয়ার্টার-ফাইনালে সেই তিনিই মেজাজ হারান দফায় দফায়।
সেমি-ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর তিনি হুট করেই দিলেন ঘোষণা। এতদিনের গুঞ্জনের ইতি টেনে দিতে বললেন- বিশ্বকাপে এবারই শেষ। পাদপ্রদীপের আলো থেকে সরে যেতে চায় না কেউ, কিন্তু তিনি চাইলেন। বিষাদের রাগিনী বাজিয়ে দিয়ে দলকে যেন বার্তাও দিয়ে দিলেন-এবার রাঙাও মোরে।
ফাইনালের চিত্রনাট্য ৮০ মিনিট পর্যন্ত রঙিন ছিল আর্জেন্টিনার জন্য। আনহেল দি মারিয়ার আদায় করে নেওয়া পেনাল্টি থেকে গোল করে এগিয়ে দলকে এগিয়ে নিলেন মেসি। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে গ্রুপ পর্ব, শেষ ষোলো, কোয়ার্টার-ফাইনাল, সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে গোল করার কীর্তি গড়লেন এই জাদুকর।
এলো সেই কাঙ্ক্ষিত দৃশ্য। বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে সতীর্থদের কাঁধে মেসি। ঠিক এমন ছবিই কিক অফের আগে জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠেছিল। ৩৬ বছর আগের সেই ছবিতে ভালদানো-বুরুচাগাদের কাঁধে ছিলেন মারাদোনা। নতুন ছবিতে মার্তিনেস-দিবালাদের কাঁধে মেসি, যে জাদুকরকে আর হয়তো দেখা যাবে না বিশ্বকাপের আঙিনায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh