কাতারের পথে-প্রান্তরে আজ বিষাদমাখা বিদায়ের সুর। দেখতে দেখতে পর্দা নামছে কাতার বিশ্বকাপের। নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঘটন-অঘটনের ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ শেষ হচ্ছে আজ রাতেই। নিজেদের তৃতীয় শিরোপার আশায় আজ ফাইনালের মহারণে নামবে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। লুসাইল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় শুরু হবে উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনাল ম্যাচটি। ১৯৮৬ আসরের পর প্রথম শিরোপার জন্য উন্মুখ লাতিন আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। ১৯৬২ সালের ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে শিরোপা ধরে রাখার কীর্তি গড়তে মরিয়া ফ্রান্স। লম্বা একটা সময় ধরে ফুটবল বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন লিওনেল মেসি। তার জাদুকরী বাঁ পায়ে লেখা হয়েছে কতশত গল্প। ফুটবলের সবুজ আঙিনায় উপহার দিয়েছেন কত না স্মরণীয় মুহূর্ত। নানা রেকর্ড-অর্জনে সমৃদ্ধ তার ক্যারিয়ার। বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফিটাই শুধু রয়ে গেছে অধরা। নিজের শেষ বিশ্বকাপে সেই স্বপ্ন পূরণে আর্জেন্টিনা অধিনায়ককে পাড়ি দিতে হবে আর একটি ধাপ। মেসির গল্পে একটি জিনিসই শুধু বাকি এখন- বিশ্বকাপ। সেই আক্ষেপ ঘোচানোর, ‘মেসি’ নামের রূপকথার শেষ লাইন লেখার পালা এবার। টানা দুটি বিশ্বকাপ জয়ের কীর্তি গড়ার হাতছানি ফ্রান্সের সামনে। আর আর্জেন্টিনা মুখিয়ে বিশ্ব সেরার মঞ্চে ৩৬ বছরের শিরোপা খরা কাটানোর লক্ষ্যে। গত আসরেই দেখা হয়েছিল দুই দলের, সেটা অবশ্য শেষ ষোলোয়। কাতারে এবার শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি তারা।
ফাইনালের আগে ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনার কিছু পরিসংখ্যান-
এ নিয়ে বিশ্বকাপে ষষ্ঠবারের মতো ফাইনাল খেলছে আর্জেন্টিনা। বিশ্ব সেরার মঞ্চে সর্বোচ্চ ৮ বার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ খেলেছে জার্মানি। ২ বার রানার্সআপ হয়েছে রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল।
১৯৩০ সালে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরে ফাইনাল খেলেছিল আর্জেন্টিনা, যেখানে উরুগুয়ের বিপক্ষে হেরেছিল তারা ৪-২ গোলে। ১৯৭৮ সালে নেদারল্যান্ডসকে ৩-১ গোলে ও ১৯৮৬ সালে পশ্চিম জার্মানিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে শিরোপার স্বাদ পায় দলটি। ১৯৯০ ও ২০১৪ সালে জার্মানদের কাছে ১-০ গোলে হেরে তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন ভাঙে তাদের।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবশেষ ৪২ ম্যাচে স্রেফ একটি হেরেছে আর্জেন্টিনা, সৌদি আরবের বিপক্ষে চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে। এই পথচলায় ২৯ ম্যাচ জিতেছে তারা, বাকি ১২টি ড্র। কাতার বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ১২ গোল করেছে আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ সালে শিরোপা জয়ের পথে করা ১৪ গোলের পর যা এক আসরে তাদের সর্বোচ্চ।
এনিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলছেন লিওনেল মেসি। ২০১৪ সালে জার্মানির বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে যায় তার দল। বিশ্বকাপ ছাড়া ক্লাব ও জাতীয় দলের সম্ভাব্য সব শিরোপাই জিতেছেন সময়ের সেরা এই ফরোয়ার্ড। ফ্রান্স বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলছে চতুর্থবারের মতো। ১৯৯৮ সালে প্রথমবার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ খেলতে নেমেই শিরোপা ঘরে তোলে তারা ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে। পরে ২০০৬ সালের ফাইনালে ইতালির কাছে টাইব্রেকারে হেরে যায় ফরাসিরা। নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা জেতে দলটি গত আসরে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে।
১৯৩০ সালে উদ্বোধনী আসরে ফ্রান্সের বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর ১৯৭৮ সালে ২-১ ব্যবধানে জেতে লাতিন আমেরিকার দলটি। বিশ্ব সেরার মঞ্চে দুই দলের সবশেষ দেখা চার বছর আগে। রাশিয়া আসরে শেষ ষোলোয় ৪-৩ গোলে আর্জেন্টাইনদের হারিয়ে দেয় ফরাসিরা। ২০০২ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে টানা দুটি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলছে ফ্রান্স। ইতিহাসের তৃতীয় দল হিসেবে টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হাতছানি দলটির সামনে। ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে ইতালি এবং ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে ব্রাজিল পরপর দুইবার শিরোপা জিতেছিল।
কাতার বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচে ৫ গোল করেছেন কিলিয়ান এমবাপে। ছাড়িয়ে গেছেন ২০১৮ আসরে ফ্রান্সের শিরোপা জয়ের পথে করা নিজের ৪ গোল। বিশ্বকাপে ১৩ ম্যাচ খেলে ২৩ বছর বয়সী এমবাপের গোল মোট ৯টি। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ ১১ গোলের রেকর্ড এখন মেসির। ফাইনালে একটি গোল করলেই সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলের পাশে বসবেন তিনি।
ফ্রান্সের উগো লরিসের সামনে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি। তার নেতৃত্বেই গত আসরে বৈশ্বিক শিরোপা ঘরে তুলেছিল ফ্রান্স। ফাইনালে নামলেই বিশ্বকাপে গোলরক্ষক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড হয়ে যাবে উগো লরিসের। ছাড়িয়ে যাবেন তিনি জার্মানির মানুয়েল নয়ারের ১৯ ম্যাচ খেলার কীর্তি।
বিশ্বকাপে এর আগে তিনবার মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। যেখানে দুইবার জয়ের মুখ দেখেছে আলবিসেলেস্তেরা, একবার জিতেছে ফরাসিরা। সব মিলিয়ে ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা পরস্পরের বিপক্ষে খেলেছে মোট ১২ ম্যাচ। সেখানে ৬ ম্যাচ জিতে দ্বিগুণ ব্যবধানে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। ফ্রান্স জিতেছে তিনবার। দুই দলের বাকি তিন লড়াই ড্র হয়েছে।